চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মেয়েরা স্বামীর মারধরকে বৈধ মনে করেন, সিলেটিরা উল্টো

খাবার পোড়ালে স্বামী মারধর করতেই পারেন— সম্মতি অনেকেরই

শহরে বসবাসকারী চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মেয়েরা স্বামীর মারধরকে অনেকটা বৈধ বলে মনে করেন। রংপুর ও খুলনার মেয়েরা ঠিক এরকমই মনে করেন। এক্ষেত্রে সিলেটের মেয়েরা ঠিক উল্টো। স্বামীর মারধরকে তারা কোনোভাবেই মেনে নেন না। তবে বরিশালের মেয়েরা তুলনামূলক কম মাত্রায় স্বামীর মারধরকে মেনে নেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইউনিসেফের অর্থায়নে মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে-২০১৯ ডাটাবেজের তথ্যের ভিত্তিতে করা এক গবেষণা নিবন্ধে এই তথ্য উঠে এসেছে। ৪ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের ‘বায়োমেড সেন্ট্রাল সাইক্যাট্রি’ জার্নালে ওই গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।

ওই গবেষণায় উঠে এসেছে, স্বামীর সঙ্গে তর্ক করার কারণে দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারী স্বামীর মারধরের শিকার হন। শহরে বসবাসকারী ১৭ শতাংশ ও গ্রামে বসবাসকারী ২২ শতাংশ নারী স্বামীর সঙ্গে তর্ক করার কারণে স্বামীর হাতে মারধরের শিকার হন। নারীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ অবশ্য এও মনে করেন যে, রান্নার সময় খাবার পুড়িয়ে ফেললে সেক্ষেত্রে স্বামীর মারধর করার অধিকার আছে। গ্রামে বসবাসকারী ৬.৮ শতাংশ ও শহরে বসবাসকারী ৫.১ শতাংশ নারী এরকমই মনে করেন। তবে খাবার পোড়ানো নিয়ে স্বামীর মারধরের অধিকার আছে— এ বিষয়টি মানতে রাজি নন সন্তানহীন বা দুটি সন্তান আছে এমন নারীরা। তবে বেশি সন্তান আছে এমন নারীরা এ ধরনের অভিযোগ সহজেই মেনে নেন। এক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা নারীদের তুলনায় অন্তত অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত নারীদের স্বামীর মারধরকে মেনে নেওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে আড়াই গুণ বেশি।

দেশব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতার ওপর করা এ গবেষণায় উঠে আসে, সন্তানের প্রতি অবহেলার কারণে শহরে বসবাসকারী ১৩ শতাংশ এবং গ্রামে বসবাসকারী ১৬ শতাংশ, যৌনমিলনে অসম্মতির কারণে শহরে বসবাসকারী ৮ শতাংশ ও গ্রামে বসবাসকারী ১০ শতাংশ, স্বামীকে না বলে বাইরে যাওয়ার কারণে শহরে বসবাসকারী ১০ শতাংশ ও গ্রামে বসবাসকারী ১৪ শতাংশ নারী মারধরের শিকার হন।

দেশের আটটি বিভাগ থেকে ১৩ হাজার ৩৩ জন শহরে বসবাসরত এবং ৫১ হাজার গ্রামে বসবাসরত নারীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরাও এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই নারীদের বয়স ছিল ১৫ থেকে ৩৯ বছর।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর কাছ থেকে পাওয়া সহিংসতার কারণে বাংলাদেশের নারীরা অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ, অধিক গর্ভপাত ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

দেখা গেছে, গ্রামে বসবাসকারী নারীদের ২৫ শতাংশ ও শহরে বসবাসকারী ২০ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এই সহিংসতার কারণ হিসেবে বিয়ের সময়কার বয়স, স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য, বিবাহের ধরন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দারিদ্রতা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতি, মাদক গ্রহণ, গৃহস্থালির কাজকর্মে ধরন ইত্যাদি দায়ী।বয়স্কদের তুলনায় ৩০ বছরের কম বয়সী নারীদের মধ্যে কম সহিংসতা দেখা গেছে। গার্হস্থ্য সহিংসতার কারণে নারীরা অবাঞ্চিত গর্ভধারণ, গর্ভস্রাব, গর্ভপাত ও যৌনরোগ, প্ররোচিত গর্ভপাত, এইডস, মানসিক চাপ, আত্মহত্যা, ভীতি, স্ত্রীরোগ বিষয়ক সমস্যায় ভোগেন।

প্রিভ্যালেন্স অ্যান্ড ডিটারমিন্যান্টস অব ওয়াইফ-বিটিং ইন বাংলাদেশ: এভিডেন্স ফ্রম এ ন্যাশনওয়াইড সার্ভে’ শীর্ষক গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন।

গবেষণায় যুক্ত অন্যরা হলেন— সিলেটের আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগের ফারুক আব্দুল্লাহ, অস্ট্রেলিয়ার চালর্স স্ট্রাট বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ও প্রকৌশল বিভাগের স্কুল অব কম্পিউটিংয়ের আজিজুর রহমান, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট লন্ডনের কলেজ ও নার্সিং, মিডওয়াইফারি অ্যান্ড হেল্থকেয়ারের হাফিজ টিএ খান।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!