চট্টগ্রাম ওয়াসা/ বন্ধ পাম্প ‘চালাতে’ ২৪ ঘন্টার ২৯ ঘন্টাই কাজ!

বন্ধ ৫৩টি পানির পাম্পে ৩৫ লাখ টাকা ওভারটাইম

চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট খাজা রোডের ৪ নম্বর পাম্প স্টেশনে ওয়াহিদুর রহমান, আক্তার হামিদ খান ও গিয়াস উদ্দিন মুর্শেদ নামের তিন কর্মচারী ৩৭৬ ঘন্টা ওভারটাইমের বিল জমা দেন চলতি বছরের জুলাইয়ে। ওই একই মাসে তাদের নিয়মিত কর্মঘন্টা ছিল ৫২৮ ঘন্টা। অস্বাভাবিক এই হিসেব অনুযায়ী প্রতিদিন তারা ২৯ ঘন্টা করে কাজ করেছেন। ৩১ দিন ধরে পুরো জুলাই মাস চিরাচরিত নিয়মে ৭৪৪ ঘন্টায় হলেও ওই মাসে এই তিন কর্মচারী কাজ করেছেন ৯০৪ ঘন্টা। অর্থাৎ ২৪ ঘন্টার বদলে সেখানে দিন গড়িয়েছে ২৯ ঘন্টায়!

এমন পুকুরচুরি শুধু এই তিন কর্মচারীই নয়, চট্টগ্রাম ওয়াসাজুড়ে এমন চিত্র অহরহ।

চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, বাকলিয়া আর খাতুনগঞ্জ নিয়ে গঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার মডিউল ৩। শুরুতে এসব এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য ছিল মোট ৩৯টি পাম্প। কিন্তু এর মধ্যে বর্তমানে চালু আছে মাত্র তিনটি পাম্প। বাকি ৩৬টি পাম্প বন্ধ রয়েছে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে। বন্ধ হয়ে গেলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এসব পাম্প থেকে কর্মীদের প্রত্যাহার করেনি।

কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এসব পাম্প স্টেশন থেকে কর্মীদের প্রত্যাহার করেনি। বন্ধ এসব পাম্পে কাগজেকলমে কাজ করে যাচ্ছেন কর্মচারীরা। নিয়মিত বেতন তো বটেই, এমনকি ওভারটাইমও পেয়ে আসছেন তারা।

গত এক বছর ধরে বন্ধ চট্টগ্রাম ওয়াসার এই পানির পাম্প ঘিরে জন্মেছে ঝোপঝাড়। ছবি: মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন/টিবিএস
গত এক বছর ধরে বন্ধ চট্টগ্রাম ওয়াসার এই পানির পাম্প ঘিরে জন্মেছে ঝোপঝাড়। ছবি: মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন/টিবিএস

কালুরঘাট বুস্টারের অভ্যন্তরে একটি বন্ধ পানির পাম্পে অপারেটর হিসেবে কাজ করেন মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ‘পাম্পটি বন্ধ রয়েছে ঠিক। তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে আমাদের এখানে থাকতে হয়। তিন পাম্প অপারেটর একটি রোস্টার অনুসরণ করে এখানে কাজ করেন। আর স্থায়ী কর্মচারীরা ওভারটাইম পান।’

বহদ্দারহাটের আরেকজন পাম্প অপারেটর আবদুল্লাহ আল হোসাইনও একই কথা জানালেন।

যথারীতি এই অস্বাভাবিক জালিয়াতির পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেছেন, ‘মদুনাঘাট পানি শোধনাগারের পাম্পে কোন রকম দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে জরুরি অবস্থায় অন্য পাম্পগুলো সচল রাখা যায় সেজন্য কর্মচারীদের রাখা হয়েছে।’

যদিও গত অন্তত এক বছরে কোন দুর্ঘটনা সেখানে ঘটেনি।

তথ্য মতে, চট্টগ্রাম ওয়াসার মডিউল ৩-এর আওতাধীন এলাকায় কাজ করছেন ৪৯ জন স্থায়ী কর্মচারী। হিসেব করে দেখা গেছে প্রতি মাসে ৫ হাজার ৮২০ ঘণ্টা ওভারটাইম করেন তারা। এই বাবদ তারা প্রায় ৮.৩৮ লাখ টাকা পান, অথচ মূল বেতন পান এর চেয়েও কম— ৭.৩৭ লাখ টাকা।

এর আগে, চট্টগ্রাম ওয়াসার ৯৪টি পাম্প (গভীর নলকূপ), বুস্টার স্টেশন ও পানি শোধনাগার চালু রাখতে কাজ করছিলেন ২২৯ জন স্থায়ী কর্মচারী। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের হিসেব অনুযায়ী এখানকার কর্মচারীদের ওভারটাইমের জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৩০.৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

২০১৬ সালে অস্বাভাবিক ওভারটাইমের পরিমাণ কমাতে ১৫৫ জনকে মাসিক চুক্তিতে নিয়োগ দেয় চট্টগ্রাম ওয়াসা। এতে প্রতি মাসে খরচ হয় ১৮.৬০ লাখ টাকা।

৫৩টি পানির পাম্প ইতোমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। কিন্তু তবুও ওভারটাইমের বরাদ্দ থামেনি। ২০১৬-১৭ সালে প্রতি মাসেই ওভারটাইম বাবদ খরচ হয়েছে ৩০.৭৫ লাখ টাকা। আর ২০১৮-১৯ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪.৬৭ লাখ টাকা।

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদন অবলম্বনে

আগের পর্বে
হরিলুট/ চট্টগ্রাম ওয়াসায় যত বড় বেতন নয় তত বড় ওভারটাইম!

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!