রাস্তা খোড়াখুড়ি/ চট্টগ্রাম ওয়াসার স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষুব্ধ চসিক কাউন্সিলর

অভিযোগ অস্বীকার ওয়াসা এমডির

চট্টগ্রাম ওয়াসার দায়িত্বহীন আচরণ ও তদারকির অভাবের কারণেই নগরবাসী চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। নিজ ওয়ার্ডে ওয়াসার কার্যক্রমের ওপর চরম বিরক্ত হয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিন কার্যালয়ে এসে তিনি এসব অভিযোগ করেন। শৈবাল দাশ সুমন সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি।

শৈবাল দাশ সুমন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাস্তা কাটাকাটির পর স্কেভেটরসহ যন্ত্রপাতি রাস্তায় ফেলে রাখে ওয়াসা। সময়মত মাটি ও আবর্জনা পরিস্কার করে না। রাস্তা মেরামতের কাজেও ওয়াসার গাফিলতি রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই উন্নয়ন হোক। মানুষ পানি পাক। কিন্তু উন্নয়নের নামে ওয়াসার অদক্ষতার কারণে ভোগান্তি চট্টগ্রামবাসী মেনে নিতে রাজি নয়। সমন্বয় না করার কারণেই পুরো নগরে ভোগান্তি হচ্ছে। রাস্তা কাটাকাটির আগে জনপ্রতিনিধিকে কোনো নোটিশ দেয় না ওয়াসা। ওয়াসার এমন উদ্ধত আচরণের কারণেই মানুষ দুর্ভোগে পড়ছেন।’

ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি একেএম ফজলুল্লাহ
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি একেএম ফজলুল্লাহ

‘ওয়াসা কর্তৃক নিয়োগকৃত ঠিকাদারদের অদক্ষতা, গাফিলতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে সমন্বয় না করার কারণেই নাগরিক দুর্ভোগ’—যোগ করেন কাউন্সিলর।

ওয়াসার উদ্দেশ্যে কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন প্রশ্ন রাখেন, ‘রাস্তা কাটার ব্যাপারে কেন স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানানো হচ্ছে না? কাউন্সিলরের সাথে সমন্বয় করলে সমস্যা কোথায়?’

সুমনের মতে, ‘রাস্তা কাটাকাটির জন্য ভোগান্তি নয়, শুধুমাত্র ওয়াসার তদারকির অভাবের জন্যই ভোগান্তি। যদি প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের সাথে সমন্বয় ও শিডিউল করে ওয়াসা রাস্তা কাটাকাটির কাজটা করে, তাহলে জনদুর্ভোগ ৮০ শতাংশ কমে যাবে। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে যে জনপ্রতিনিধি আছে, ওয়াসা তা জানেই না। জবাবদিহিতার দিকে ওয়াসার কোন দৃষ্টিপাতই নেই।’

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আগামীকাল (৪ জুলাই) বৃহস্পতিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব পবিত্র রথযাত্রা। দুপুর ২টার পর থেকে প্রবর্তক মোড়, গোলপাহাড়, চট্টেশ্বরী রোড, কাজির দেউড়ী, জামালখান, চেরাগী পাহাড়, ডিসি হিল, আন্দরকিল্লা, লালদিঘী, নিউ মার্কেটসহ আশেপাশের সড়কের ওপর দিয়ে রথযাত্রা যাবে। রাস্তায় ভোগান্তি হলে চট্টগ্রাম ওয়াসাই দায়ী থাকবে।’

রাস্তা কাটাকাটিতে জনদুর্ভোগ লাগবে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেছেন কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। এগুলো হলো রাস্তা কাটার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জনবহুল নয় কিংবা যানজট সৃষ্টি হবে না—এমন জায়গায় রাখতে হবে। রাত ১১টা থেকে ৩টার মধ্যে রাস্তা কেটে পাইপ বসানোর কাজ শেষ করতে হবে। রাত তিনটার পর থেকে ভোর ৫টার মধ্যে ফিনিশিং এবং মাটি ও আবর্জনা অপসারণের কাজ শেষ করতে হবে।’

শৈবাল দাশ সুমনের অভিযোগ ও সুপারিশের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কাউন্সিলর শৈবল দাশ সুমনের অভিযোগ সঠিক নয়। রাস্তা কাটার পর আমরা মাটি ও আবর্জনা পরিস্কার করে থাকি। যন্ত্রপাতি তো রাস্তার পাশে রাখতেই হবে। দূরে রাখলে তো কাজ করা সম্ভব হবে না। তবু আমরা যন্ত্রপাতি এমনভাবে রাখি যাতে জনদুর্ভোগ বা যানজট সৃষ্টি না হয়।’

রাস্তা কাটাকাটির আগে জনপ্রতিনিধি বা কাউন্সিলরদের সাথে সমন্বয় না করার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সব জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করা তো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা মেয়রকে জানাই, তিনি তো জনপ্রতিনিধি। শৈবাল দাশ সুমনের সাথে তো আমার ভালো সম্পর্ক। তিনি তো কখনো আমাকে এসব বিষয়ে কিছু বলেনি। যা হোক, তিনি যখন বলছেন, এখন থেকে রাস্তা কাটাকাটির কাজে আমরা কাউন্সিলরদের সাথে যোগাযোগ করবো। অবশ্যই সমন্বয় সাধন করবো।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!