চট্টগ্রাম ওয়াসার কালো পানিতে দুর্গন্ধ ও ময়লা, অশেষ ভোগান্তি মানুষের (ভিডিও)

ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ বাড়ছে

দুর্গন্ধ, কালচে রং ও ময়লা— এই তিন ‘অনন্য বৈশিষ্ট্য’ সঙ্গী করে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এই পানি পান করা তো দূরের কথা— রান্না করা, গোসল করা, কাপড় ধোয়ার কাজেও এটি ব্যবহারের অযোগ্য। এই পানি ব্যবহারে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ দেখা দিচ্ছে নগরীতে। হাজার হাজার মানুষ পানির এই ভোগান্তিতে পড়লেও চট্টগ্রাম ওয়াসা এ ব্যাপারে বরাবরের মতোই নির্বিকার।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর আই-ব্লক, পাঠানটুলী, বহদ্দারহাট, মাঝির ঘাট, চকবাজার ডিসি রোড, মুরাদপুর, বন্দরটিলাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানিতে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে— যা রীতিমতো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

মাঝিরঘাট এলাকার বাসিন্দা রনি আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে তা বিলের পানির চেয়েও খারাপ এবং ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। পানিগুলো নতুন কেউ দেখলে শরবত মনে করে খেয়ে ফেলবে। ফুটিয়েও তা পান করা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘এই দূষিত পানিতে শিশুদের শরীরে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন রকম চর্মরোগ ও ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগব্যাধি।’

হালিশহর বি-ব্লক এলাকার বাসিন্দা সৈকত হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে ওয়াসার পানি আসতেছে কালো কালো। এগুলো খুবই দুর্গন্ধযুক্ত। এই দুর্গন্ধযুক্ত পানিগুলো কোনভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেও কোন সমাধান পাইনি। তারা উল্টো বলে ওয়াসার লাইনে কোন সমস্যা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভিডিওসহ ফেসবুকে দিয়েছি। চাইলে দেখতে পারেন পানির কী অবস্থা। এমন হলে নগরীর মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়বে।’

দিদার মার্কেট এলাকার বাসিন্দা ইমন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিশুদ্ধ পানি ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব না। গত কিছুদিন ধরে ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে, তা ময়লা ও মারাত্মক দুর্গন্ধযুক্ত। এসব একদমই ব্যবহারের অযোগ্য। এই পানি ব্যবহারের ফলে ঘরের অনেকে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বিষয়টির প্রতি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সুনজর দিলে বড় বিপদ থেকে বেঁচে যাবে নগরবাসী।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জসিম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জীবাণু দ্বারা দূষিত পানি ও অপরিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের ফলে পানিবাহিত রোগ হয়ে থাকে। যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড ও জন্ডিসের মতো ভয়াবহ রোগ হয়ে থাকে। পানিবাহিত রোগের লক্ষণ হচ্ছে পাতলা পায়খানা, বমি, জ্বর ও পেটব্যাথা।’

তিনি বলেন, ‘জন্ডিস হচ্ছে একটি পানিবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগ মানুষের লিভার নষ্ট করে সহজে এবং এতে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নগরীতে আমাদের ওয়াসার ৪০টি পয়েন্ট রয়েছে। প্রতি মাসে তা চেক করা হয়। আমাদের পানিতে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। আর কেউ অভিযোগও করেনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘নগরে আমাদের পাঁচটি অভিযোগ কেন্দ্র রয়েছে। কারও পানিতে যদি সমস্যা থাকে, অভিযোগ করলে আমরা সাথে সাথে অ্যাকশনে যাবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!