চট্টগ্রাম ওয়াসার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা, গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন ও আসন্ন রমজানে সুপেয় নিরবিচ্ছিন্ন পানির নিশ্চয়তা নিয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নেতৃবৃন্দ। সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ ব্যাপারে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা
অদক্ষ প্রশাসন, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মীয়করণ ও গ্রাহক স্বার্থকে উপেক্ষা করার কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসা ৫৬ বছরেও নগরবাসীর চাহিদা পুরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্যাব নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর বর্তমান সরকারের আমলেই ১৩ হাজার কোটি টাকার সর্বোচ্চ উন্নয়ন বরাদ্দ পায় এ প্রতিষ্ঠানটি। বয়সের ভারে ন্যূজ্ব ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ১০ বছরেও প্রশাসনে গতিশীলতা আনতে পারেননি।
সমাধান থাকে না সংকটে, দেয় ‘প্রকল্পের দোহাই’
ক্যাব নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যখনই পানির সংকট দেখা দেয় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বারবার বিভিন্ন প্রকল্পের দোহাই দিয়ে থাকেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর তাদের সেই প্রতিশ্রুতির কোন ফল নগরবাসী পায় না। এর মূল কারণ হলো পানির অপচয় রোধ, সরবরাহ লাইনে ত্রুটি, লিকেজ, পানির চুরি বন্ধ, বিলিং ব্যবস্থার ত্রুটি দূর না করে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নতুন নতুন প্রকল্পের ওপর জোর দিয়ে আসছে। ফলে ওয়াসা তলাবিহীন জুড়ির ন্যায়, যা-ই ঢালা হচ্ছে সবই খালে গিয়ে পড়ছে।
পানি শোধনের হিসাবে আছে ‘শুভংকরের ফাঁকি’
বিবৃতিতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম ওয়াসা দাবি করছে, পানির উৎপাদন দৈনিক ৩৫-৪০ কোটি লিটার। যার কোন বৈজ্ঞানিক সত্যতা নাই। কারণ রাঙ্গুনিয়ায় শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার, মদুনাঘাট পানি শোধনাগার ও পাম্প হাউজে কোন ডিজিটাল মিটার নাই। ফলে কত লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে তার প্রকৃত সত্যতা যাচাই করার জন্য ওয়াসার ডাটাবেস নাই। আর নগরীর পানির চাহিদা ২০ কোটি লিটার তাহলে আরও ১৫-২০ কোটি লিটার হয় অপচয় হচ্ছে, না হলে পানি চুরি হচ্ছে। তাই পানি উৎপাদন ও বিতরণে ডিজিটাল মিটার না থাকায় পানির প্রকৃত উৎপাদন খরচ নিয়ে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে।
গ্রাহক মতবিনিময় সভা নিয়ে প্রতারণা
পানির অপচয় রোধ, সেবার অব্যবস্থাপনা রোধে গ্রাহকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, গ্রাহক সেবার মান ও অনিয়ম রোধে ত্রিপাক্ষিক গণশুণাণীর আয়োজন করা, গ্রাহক হয়রানি রোধে তাৎক্ষনিক প্রতিকারের জন্য ডিজিটাল হেলপ লাইন চালু ও হেলপ ডেস্ক আধুনিকায়ন, দাম বাড়ানোসহ সেবার মান উন্নয়নে নীতিমালা প্রণয়নে ভোক্তাদের অংশগ্রহন নিশ্চিতকরার দাবি জানালেও মন্ত্রণালয় ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে গ্রাহকদের সাথে মতবিনিময়ের কথা বলে নগরীর বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আত্মীয়স্বজন ও দু’একজন অনুগত গ্রাহকদের নিয়ে গ্রাহক সভা আয়োজন করে প্রকৃতপক্ষে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করেছেন বলে দাবি করেছেন ক্যাব নেতৃবৃন্দ।
আছে দুর্নীতির মামলা, তবুও ১০ বছর ধরে চুক্তিভিত্তিক এমডি
বর্তমান সরকারের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক একাধারে ১০ বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ লাভ করলেও প্রকৃতপক্ষে বয়স, কর্মক্ষমতার কারণে ওয়াসাকে কিছুই দিতে পারেননি বলে জানান বিবৃতিদাতারা। তারা বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতির মামলা হয়েছিলো যা এখনও চলমান এবং তাঁকে দুর্নীতির কারণে কারাবাস করতে হয়েছিলো।
বিবৃতিদাতা ক্যাব নেতৃবৃন্দ হলেন, ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান।