চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের ১০ দিনের কর্মসূচিতেও সুজনের মুখটি দেখা গেল না

জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না নেতারাও

সহ সভাপতির গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের দূরত্ব যেন ক্রমেই বাড়ছে। প্রশাসকের চেয়ারে বসার পর থেকে নগর আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতেই তিনি উপস্থিত থাকছেন না। সবশেষ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ১০ দিনব্যাপি প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সুজনকে দেখা যায়নি এক মুহূর্তের জন্যও।

দলের সঙ্গে সুজনের কেন এই হঠাৎ দূরত্ব— এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না দলের উর্ধতন নেতারাও। তবে গত মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপে সুজন ‘মহানগর আওয়ামী লীগের মেয়াদ নেই’— এমন কথা উল্লেখ করে এসব প্রোগ্রামে তার ‘থাকা না থাকায় কোনো পার্থক্য নেই’ বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন সোজাসাপ্টা। তবে তিনি এও বলেছেন, করপোরেশনে ব্যস্ত থাকায় দলীয় কর্মসূচিতে থাকতে পারছেন না তিনি। পাল্টায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির দু কথা শুনিয়ে বলেছেন, ‘আমিও তো মেয়র ছিলাম, পার্টির সাধারণ সম্পাদকও। আমি একই দিন সব প্রোগ্রামগুলো করি নাই? কিন্তু কোনো প্রোগ্রামেই উনি আসছেন না।’

জানা গেছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গত ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনের প্রতিবাদী কর্মসূচি ঘোষণা করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে একটিবারের জন্যও উপস্থিত ছিলেন না চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

১০ দিনের কর্মসূচিতে ছিল নগরীর সাতটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ। এসব স্থান হল অলংকার মোড়, বড়পোলস্থ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য চত্বর, বহদ্দারহাট মোড়, অক্সিজেন মোড়, ইপিজেড চত্বর, কর্ণফুলী নতুন ব্রীজ ও দেওয়ানহাট চত্বর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে নগরীর আন্দরকিল্লায় ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করে।

এছাড়া ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টায় দারুল ফজল মার্কেটস্থ দলীয় কার্যালয়ে দোয়া, মিলাদ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী স্মরণে ১৫ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ, সকাল ১০টায় মরহুমের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং সকাল ১১টায় স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টায় থিয়েটার ইনস্টিটিউট হলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এসব সভায় আওয়ামীলীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগরের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, এম জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, শফিকুল ইসলাম ফারুক, সৈয়দ হাসান মাহমুদ শমসের, এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মো. হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মানসসহ গুরুত্বপূর্ণ সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু বিস্ময়করভাবে এই সবগুলো কর্মসূচির কোনোটিতেই উপস্থিত ছিলেন না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান প্রশাসক ও মহানগর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও আসেননি খোরশেদ আলম সুজন। ১৬ ডিসেম্বর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কিছুক্ষণ থাকলেও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে আয়োজিত কোনো কর্মসূচিতেই উপস্থিত ছিলেন না তিনি। সবশেষ বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) কর্ণফুলী নতুন ব্রীজ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশেও তাকে দেখা যায়নি।

গত ৪ আগস্ট খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক হিসেবে স্বল্প সময়ের জন্য নিয়োগ পান। বলা যায়, সুজনের ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের এটিই প্রথম স্বীকৃতি। প্রশাসক নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি নিজেও বলেছেন, ‘৫০ বছর ধরে রাজনীতি করার পর আমি প্রথম স্বীকৃতি পেয়েছি। এই মূল্যায়নের সম্মান রাখার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।’

তবে দলীয় কর্মসূচি, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে আয়োজিত কোনো কর্মসূচিতেই সুজনকে দেখা না যাওয়ায় দলীয় নেতাদের অনেকেই ক্ষোভ জানিয়েছেন। রাখঢাক রাখেননি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনও। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে সাবেক এই সিটি মেয়র বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার নামে জঙ্গিবাদকে যারা নতুন করে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের প্রতিহত করতে আমরা কর্মসূচি পালন করেছি। আমরা জানিয়ে দিয়েছি রাজপথে থেকেই আমরা সব ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করব। কিন্তু আমাদের সেই সব কর্মসূচিতে খোরশেদ আলম সুজন ছিলেন না। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে যিনি আজ প্রশাসক হলেন, তিনিই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতে থাকেননি। এ কেমন ধৃষ্টতা— তা চট্টগ্রামবাসী দেখেছে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে খোরশেদ আলম সুজনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!