চট্টগ্রামে ৬০ টাকার মাস্ক হঠাৎ করেই ১৫০, চীনা ভাষার প্যাকেটে ভরা হয় সদরঘাটের মাল

চট্টগ্রামসহ সারাদেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তার রোধে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। মাস্ক না পরলে জরিমানাসহ নানান বিধিনিষেধ জারির পর থেকে চট্টগ্রামের বাজারে হঠাৎ করেই তৈরি হয়েছে মাস্কের তীব্র সংকট। অস্বাভাবিক দ্রুততায় লাফ দিয়ে বেড়ে গেছে মাস্কের দাম। ৬০ টাকা মূল্যের এক বক্স সাধারণ মানের মাস্ক এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। প্রতিপিস কেএন৯৫ মাস্কের দাম বেড়ে গেছে ১০ থেকে ২০ টাকা।

চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা আভাস দিচ্ছেন ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ পিক টাইমে পৌঁছাবে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যলয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ৬ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ক্রমবর্ধমান হারে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তার রোধে বিধিনিষেধ জোরদার করায় তার প্রভাব গিয়ে পড়ছে মাস্কের ওপর।

চট্টগ্রাম নগরীতে করোনাকালে গড়ে ওঠা মাস্কের পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দীন বাজার, গোলাম রসুল মার্কেট ও হাজারি গলিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডক্টর মাস্ক, সেইফ মাস্ক ও ফ্লাইভা মাস্কের রীতিমতো সংকট চলছে। চীনে তৈরি মাস্কের সরবরাহ নেই বললেই চলে। অন্যদিকে প্রায় সব দোকানেই চীনা ভাষায় লেখা বক্সের ভেতরে যেসব মাস্ক বিক্রি করা হচ্ছে, সেসব মূলত তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোড ও সদরঘাট রোডের বিভিন্ন ছোট ছোট কারখানায়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশি লাভের আশায় চট্টগ্রামে তৈরি এসব মাস্কেরও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এখন এক বক্স ‘সার্জিক্যাল’ মাস্কের বিক্রি করা হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। অথচ মাত্র কিছুদিন আগেও এ ধরনের মাস্কের বাক্স বিক্রি হতো মাত্র ৬০ টাকায়।

পিএম ২.৫’ মডেলের যে মাস্ক প্রতিটির দাম আগে ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৯০ টাকায়। অন্যদিকে প্রতি পিস কেএন৯৫ মাস্কের দাম বেড়ে গেছে ১০ থেকে ২০ টাকা।

এছাড়া সাধারণ মানের যেসব মাস্কের বক্স আগে মাত্র ৮০ টাকায় বিক্রি হতো, সেই বক্সই এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। ১১০ টাকা দামের বক্সের দাম হাঁকানো হচ্ছে ২২০ টাকা। আবার ১৮০ টাকা দামের বক্সের মূল্য গিয়ে ঠেকেছে ২৯০ টাকায়।

মাস্কের বাজারে হঠাৎ এমন নৈরাজ্য তৈরি হলেও বাজারে ‘কৃত্রিম সংকট’ তৈরির কথাও স্বীকার করেছেন নগরীর হাজারী গলির অর্কিড প্লাজার পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীন থেকে আমদানি করা ফিল্টার মাস্কগুলোর সরবরাহ একেবারে নেই বললেই চলে। চট্টগ্রামে পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে মাস্ক কেনার কারণে তাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার মানসম্পন্ন অনেক মাস্ক বাজারে পাওয়াই যাচ্ছে না। এরও প্রভাব পড়ছে বাজারে।

ব্যবসায়ীরা স্বীকারও করছেন, সরকারের জারি করা বিধিনিষেধকে পুঁজি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি লাভের আশায় বাজারে মাস্ক সরবরাহ করছে না ফ্যাক্টরিগুলো।

মেয়ের হাত ধরে মাস্ক কিনতে আসা গৃহিণী সাইরা জাহান বলেন, হঠাৎ করে করোনা ও ওমিক্রনের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় মাস্কের দামও বেড়ে যাচ্ছে। সেজন্য মেয়েকে নিয়ে কিছু মাস্ক কিনতে আসলাম। কখন না আবার মাস্কের সংকট দেখা দেয়— বলা তো যায় না।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান বলেন, সরকারি বিধিনিষেধের জন্য হঠাৎ করে মাস্কের কৃত্রিম সংকট বা মাস্কের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা নয়। তাও যদি এমন পরিস্থিতি হয়ে থাকে, তাহলে মোবাইল কোর্টের অভিযান চললে আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব মাস্কের দাম বৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকট দূর করতে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!