চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ২৯১ জন হাসপাতালে

বিআইটিআইডিতে নলকূপ বিকল, পানির সংকট

রেদোয়ান হক, চট্টগ্রাম কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাইরে বের হলে যখনই পানির তৃষ্ণা পায়, রাস্তার ধার থেকে শরবত কিনে খান। এই শরবত তার শুরু হয় ডায়রিয়া। শেষ পর্যন্ত তাকে ভরতি হতে হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ডায়েরিয়ার বেগ কমলেও তার শরীর প্রচণ্ড দুর্বল। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেলের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম নগরীতে সড়কের পাশে বিক্রি করা শরবত ছাড়াও ওয়াসার লবণ পানি খেয়েও মানুষ ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এতে হাসপাতালে রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

এদিকে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় প্রতিদিন নতুন করে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে।

এর মধ্যে মীরসরাইয়ে ১৪ জন, সীতাকুণ্ড ১৫, সন্দ্বীপ ৬, ফটিকছড়ি ১১, হাটহাজারী ১০, রাউজান ৫, রাঙ্গুনিয়া ১৪, বাশখালী ১২, চন্দনাইশ ৩২, সাতকানিয়া ২৬, লোহাগাড়া ২২, বোয়ালখালী ৩৮, আনোয়ারা ৩২ ও পটিয়া ৫৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেলে ৮ মে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১০৩ জন রোগী।

এর কারণ অনুসন্ধানে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি দল রোববার (৭ মে) চট্টগ্রামে এসেছে। চট্টগ্রাম নগরী এবং জেলায় ডায়রিয়া রোগী হঠাৎ বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত আইইডিসিআরের দলের প্রধান হিসেবে আছেন ডা. মো. জাহিদুর রহমান। তার নেতৃত্বে ১২ সদস্যের দল সোমবার (৮ মে) আনোয়ারা, চন্দনাইশ, পটিয়া পরিদর্শন করেছে।

এদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০-৭০ জন। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ রোগীর পায়খানায় কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। এর কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূলত পানি ও খাদ্যাভ্যাস থেকেই কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এছাড়া মলত্যাগের পর হাত পরিষ্কার না করাও এর একটি প্রধান কারণ।’

ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসায় চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বিআইটিআইডি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলেও সেখানে বেহাল অবস্থা রোগীদের। প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ নেই ব্যবহার ও খাবার পানি।

জানা গেছে, এখানে পানির জন্য একটি ডিপ টিউবওয়েল থাকলেও তা নষ্ট। কিছুদিন নষ্ট হয়ে থাকার পর সেটি সচল করলে আবার বিকল হয়ে যায়। কল নষ্ট থাকায় ওয়াসা থেকে পানি কিনে হাসপাতালের কার্যাক্রম চালাতে হচ্ছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘ডায়েরিয়া রোগীর চিকিৎসায় সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি হলেও এই হাসপাতালে তা করতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। টিউবওয়েল নষ্ট থাকায় পানি বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।’

তবে সবুর শেখ নামের এক ব্যক্তির অভিযোগ, এই প্রতিষ্ঠান কোনো সরকারি স্যালাইন ও ওষুধ রোগীদের দেয় না। হাসপাতালটির বাইরে ওষুধের দোকান থেকে ডায়রিয়া রোগীদের ওষুধ ও স্যালাইন কিনে আনতে হয়।

তিনি বলেন, ‘বিআইটিআইডিতে রোগীদের ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় না। আর পানির সমস্যা এত বেশি, একবার এলে দ্বিতীয়বার কেউ এই হাসপাতালে আসতে চাইবে না।’

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!