চট্টগ্রামে ১৬৩ শিশু করোনায়, বয়স্কদের সঙ্গে গাদাগাদি করেই চিকিৎসা

বড়দের সাথে সাথে সমানতালে শিশুরাও সংক্রমিত হচ্ছে করোনাভাইরাসে। চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের প্রায় তিন মাসের মাথায় ১৬৩ জন শিশু করোনার শিকার হয়েছে। যা চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর শতকরা দুই ভাগ। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। আবার এ শিশুদের মধ্যে মাত্র তিনজন শিশু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে হাসপাতালে। শনাক্ত হওয়া বাকি ১৬০ জন শিশু রোগী রয়েছে চিকিৎসার বাইরে। তবে এ সংখ্যার বাইরেও শ্বাসকষ্ট কিংবা অন্য উপসর্গের শিশুদের কোলে করে হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ছুটে বেড়াচ্ছে বাবা-মা— এমন দৃশ্যও হরহামেশাই চোখে পড়ে চট্টগ্রামে।

এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ও করোনা উপসর্গ থাকা যেসব শিশুকে চট্টগ্রামের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, করোনা ইউনিটে বয়স্ক রোগীদের সঙ্গে রেখেই তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শিশু চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীরা তো শুধু করোনা নিয়েই আসে না, তার সঙ্গে অন্য রোগের উপসর্গও থাকে। যদি শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে বড়দের যে যন্ত্র দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া যাবে, সেই যন্ত্র তো শিশুদের দেওয়া যাবে না। দুটির ম্যানেজমেন্ট আলাদা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুদের জন্য পৃথক করোনা ইউনিট থাকলেও চট্টগ্রামের প্রধান হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেরকম কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে করোনার ডেডিকেটেড হাসপাতাল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেও করোনা ইউনিটের একপাশে চিকিৎসা দেওয়া হয় শিশুদের।

করোনার দুর্দিনে কোথাও মেলে না চিকিৎসা। যদিও করোনার সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকলেও চট্টগ্রামের কোথাও করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই। শুধুমাত্র ঢাকা মেডিক্যাল ছাড়া দেশের আর কোথাও শিশুদের জন্য আলাদা করোনা ইউনিট নেই। আবার শিশুদের উপসর্গ বড়দের থেকে একেবারে ভিন্ন এবং শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই শিশুদের চিকিৎসার ধরনও আলাদা, এটা বড়দের সঙ্গে মেলে না। তারপরও সে চিকিৎসার সম্পূর্ণ বাইরে থেকে যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত শিশুরা। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে শিশুদের সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনায় শিশু আক্রান্তের হারে অন্য দেশের তুলনায় এ হার বাংলাদেশে কিছুটা বেশি। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত এক থেকে ১০ বছর বয়সীদের করোনা শনাক্ত দুই শতাংশ এবং ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের ৬ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের উপসর্গ বড়দের থেকে একেবারেই আলাদা। বেশিরভাগই অন্য রোগের উপসর্গ নিয়ে আসে এবং করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হয়। তাছাড়া অন্য রোগের সঙ্গে করোনা আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসাও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য আলাদা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড থাকা জরুরি বলেও মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকরা।

অন্যদিকে অভিভাবকদের অনেকেই জানেন না, চিকিৎসার জন্য শিশুকে নিয়ে যথাসময়ে কোথায় যেতে হবে। তাই আক্রান্ত বেশি সংখ্যক শিশু রোগী চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আক্রান্ত এসব শিশুর বর্তমান অবস্থা কেমন তাও জানা নেই কর্তৃপক্ষের।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য আলাদা ইউনিট থাকা উচিত। কেননা করোনার কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে তা ঠিক আছে। কিন্তু বড়দের সাথে বাচ্চাদের একত্রে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হলে সামগ্রিকভাবে সেটা আদর্শ চিকিৎসার মধ্যে পড়বে না।’

তিনি বলেন, ‘শিশুদের শারীরিক সমস্যা আর বড়দের শারীরিক সমস্যা এক না। রোগীরা তো শুধু করোনা নিয়েই আসে না, তার সঙ্গে অন্য রোগের উপসর্গও থাকে। যদি শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে বড়দের যে যন্ত্র দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া যাবে, সেই যন্ত্র তো শিশুদের দেওয়া যাবে না। দুটির ম্যানেজমেন্ট আলাদা। আর শিশুদের জন্য করোনা ইউনিট কেবল ঢাকা মেডিক্যালেই আছে। অচিরেই চট্টগ্রামে শিশুদের জন্য করোনা ইউনিট খোলা প্রয়োজন।’

শিশুদের জন্য আলাদা ইউনিটের প্রয়োজন আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শিশুদের জন্য করোনা ইউনিট আমাদের আলাদাভাবে সেরকম নাই। তবে অবশ্যই প্রয়োজন আছে, কিন্তু যেহেতু কোভিড রোগীদের আলাদাভাবে রাখতে হয় আর কোভিড ইউনিট করা আছে তাই বাচ্চাদেরকে ওই ইউনিটের একপাশে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আমার জানামতে চমেক হাসপাতালেও শিশুদের আলাদা করোনা ইউনিট নেই। জেনারেল হাসপাতালেও করোনা ইউনিটের একপাশে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আলাদা শিশু ওয়ার্ড না থাকলেও করোনার মেইন ওয়ার্ডে চিকিৎসা হয়। এটা নিয়ে দেখি ব্যবস্থা করা যায় কিনা, যোগাযোগ করে দেখব।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!