চট্টগ্রামে লে-অফ ঘোষণা করা কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। লে-অফের (আইনি সাময়িক ছাঁটাই) জন্য চট্টগ্রামের দুটি ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে ইতিমধ্যে আবেদন করেছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত আরও ৩১টিসহ চট্টগ্রামে ১০০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ‘লে অফ’ ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে। লে-অফ কার্যকর হলে এসব প্রতিষ্ঠানের লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক আল আমিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটি মেসেজ বা ই-মেইল পাঠিয়ে বলা হচ্ছে লে অফ ঘোষণার কথা। এটি পুরোটাই অবৈধ। বর্তমান এ দুর্যোগময় সময়ে কোন কারখানা লে-অফ ঘোষণা করতে পারবে না— এমন নির্দেশনা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সরকারের এ নির্দেশনা অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসব কারখানার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার ইঙ্গিত দিয়েছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেপজাও। আগেই সরকারিভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, লে-অফ ঘোষিত কোনো কারখানাই সরকারঘোষিত প্রণোদনা পাবে না।
শ্রম আইনের ১২(১) ধারা অনুযায়ী মহামারিতে কারখানা বন্ধ রাখার অধিকার রয়েছে মালিকপক্ষের। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারিতে কোন প্রতিষ্ঠান লে-অফ ঘোষণা না করার অনুরোধ রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সেটি অমান্য করে সরকারি সাধারণ ছুটির মধ্যে লে-অফের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক কারখানার গেইটে। নগরীর বালুছড়া এলাকায় লয়ালটেক্স লিমিটেডের ফটকেও লে-অফ সংক্রান্ত সাইনবোর্ড দেখা যায়।
সোমবার (২০ এপ্রিল) পর্যন্ত চট্টগ্রাম ইপিজেডে ৪৬টি এবং কর্ণফুলী ইপিজেডে ২৩টি কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন মেয়াদে লে অফের জন্য আবেদন করেছে। চট্টগ্রাম ইপিজেডে কারখানা রয়েছে ১৫৮টি। সেখানে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। অন্যদিকে কর্ণফুলী ইপিজেডে কারখানা রয়েছে ৪১টি। সেখানে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭৬ হাজার।
ইপিজেডগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছে করা লে-অফের আবেদনে প্রতিষ্ঠানগুলো কারণ হিসেবে দেখিয়েছে কাঁচামাল না থাকা, বিদেশি ক্রেতাদের পক্ষ থেকে কার্যাদেশ বাতিল হওয়া, নতুন কার্যাদেশ না থাকা, শিপমেন্ট না হওয়া ছাড়া সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতেও কার্যাদেশ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন কারণ। লে-অফ চাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, জুতা, তাঁবু, ফেব্রিক্স ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য তৈরির কারখানা।
শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানা লে-অফ ঘোষণা করতে হলে বন্ধ থাকাকালে শ্রমিকদের মূল মজুরির অর্ধেক হারে ও বাড়িভাড়া ভাতার পুরোটা দিতে হবে। আর বন্ধ ঘোষণা করতে হলে প্রতিবছর চাকরির জন্য এক মাসের মূল মজুরি ও এক মাসের মজুরি ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। এ ছাড়া ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) ও পাওনা ছুটির অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
এদিকে শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, মহামারি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির অধীন কারখানা বন্ধ থাকাকালে কোনো অবস্থাতেই শ্রম আইনের ১৬ ধারা প্রয়োগ অর্থাৎ কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা যাবে না।
এএস/সিপি