চট্টগ্রামে হেমারেজিক ডেঙ্গুতে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি, সক্রিয় এবার নতুন ধরন ‘ডেন-৪’

শুধু অক্টোবরেই আক্রান্ত ১ হাজার ৮৬১ জন

চট্টগ্রামে থামছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। অক্টোবর মাসেই বিপজ্জনক হারে বেড়েছে শনাক্তের সংখ্যা। সম্প্রতি পাওয়া গেছে ডেঙ্গুর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ডেন-৪’। সেইসঙ্গে ডেঙ্গু ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট ঠিকমতো না হওয়ায় রোগী সুস্থ হতে সময় লাগছে। অনেক রোগীর অবস্থা আশঙ্কা হচ্ছে। বিশেষ করে হেমারেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি।

প্রতিবছর অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসলেও এই বছর দেখা গেছে উল্টো চিত্র। এই এক মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৬১ জন।

চট্টগ্রামে সোমবার (৩১ অক্টোবর) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৬৭৬ জন।

এছাড়া গত জুলাইয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৪ জন, আগস্টে ১১৪ জন ও সেপ্টেম্বরে ৬০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ রোগী ১ হাজার ৩৪৬ জন, মহিলা ৭০২ জন। শিশু সংখ্যা ৬২৮ জন। মারা গেছেন পুরুষ ৩ জন, মহিলা ৭ জন, শিশু ৪ জন।

সরকারের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা সংস্থা আইইডিসিআরের কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন জানান, চলতি অক্টোবর মাসে ঢাকায় পাওয়া গেছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেন-৪। এর আগে ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩—এই তিনটি ভ্যারিয়েন্ট সক্রিয় ছিল। তবে এ বছর ডেঙ্গুর তিনটি ভ্যারিয়েন্ট সক্রিয়। এর মধ্যে কক্সবাজারে ডেন-১, ঢাকায় বর্তমানে ডেন-৪ বেশি শনাক্ত হচ্ছে। আর সারাদেশে ডেন-৩ এ আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে আইইডিসিআর জানায়, চলতি বছর ডেঙ্গুর ১, ৩ এবং ৪ সেরোটাইপে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। একাধিক সেরোটাইপে সংক্রমণ ঘটায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। এ বছর ডেঙ্গুতে রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে এবং মৃত্যু বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতদের ৬৪ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে মারা গেছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, ডেন-৪ সেরোটাইপের কারণে এবার রোগীরা দ্রুত শকে চলে যাচ্ছেন। রোগীর চিকিৎসায় ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট জরুরি। জ্বর হলেই ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে এবং বেশি বেশি করে তরল খাবার খেতে হবে। প্রেশার কমে গেলে বা ঝুঁকিপূর্ণ কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা তা করছেন না।

এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল ১৪ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডেঙ্গু সেলের ফোকাল পারসন ডা. মো. আসাদুল্লাহ বলেন, ‘এই ডেঙ্গুতে প্রচণ্ড জ্বর হয়, যা ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্তও হতে পারে। জ্বর দুই থেকে সাতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সঙ্গে মাথাব্যথা, পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশি বা গিঁটে ব্যথা, শরীরে র ্যাশ হতে পারে। এই ধরনের ডেঙ্গু হলে সমস্যা নেই। এতে সাধারণত মৃত্যু ঘটে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে ডেঙ্গু হেমোরেজিকে জ্বর কমে যাওয়ার দু-তিনদিনের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল রক্তবিন্দুর মতো দাগ দেখা যায়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ, রক্তবমি, কালো রঙের পায়খানা, ফুসফুসে বা পেটে পানি জমা দেখা দেয়। এই হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে।’

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!