চট্টগ্রামে হঠাৎ প্যারাসিটামলের অভাব, কোথাও কোথাও দাম বেড়ে তিনগুণ

চট্টগ্রাম নগরীতে হঠাৎ করেই সংকট তৈরি হয়েছে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধের। নাপা, নাপা এক্সটা ও নাপা এক্সটেনড— কোনোটিই সেভাবে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খুঁজে কোনো কোনো দোকানে মিললেও রাখা হচ্ছে বাড়তি দাম। প্রতি পাতায় দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্তও। ওষুধ বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি অনেকে প্রয়োজন ছাড়াই অতিরিক্ত ওষুধ কিনে রাখছেন। এ থেকেও সংকট তৈরি হয়েছে।

দেশে করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বর, মৌসুমী সর্দি-কাশির প্রকোপ বেড়েছে। বাড়ছে করোনা রোগী। আর এমন সময়েই প্রয়োজনীয় একটি ওষুধের আচমকা সংকট তৈরি হল চট্টগ্রামে।

নগরীর ওষুধপাড়া হিসেবে পরিচিত জামালখান, জিইসি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের এলাকা ছাড়াও পাইকারি ওষুধের প্রধান কেন্দ্র হাজারী লেইনে খোঁজ নিয়ে মিলেছে এর সত্যতা। এসব জায়গাতেই শুধু নয়, অলিগলির ফার্মেসিগুলোতেও অবস্থা একই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাপা এক্সটেন্ড একপাতার দাম ১৮ টাকা। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ২৫ টাকা। কোনো কোনো ফামের্সি আবার নিচ্ছে ৩০ টাকাও। নাপা এক্সটা একপাতার দাম ৩০ টাকা। এখন সেটা ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেক দোকানে আবার সেটি ৪০ টাকাতেও বিক্রি করা হচ্ছে। আর নরমাল নাপা একপাতার দাম ৮ টাকা হলেও এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়।

জানা গেছে, এই তিন ওষুধই বেক্সিমকো ফার্মার তৈরি। অন্য গ্রুপের এইসসহ অন্য ওষুধ থাকলেও জ্বর ও সর্দিজাতীয় ওষুধে বেক্সিমকোর প্যারাসিটামলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি।

চিকিৎসকদের মতে, সর্দি জ্বর ও মাথাব্যথা নিরাময়ে অন্যতম প্রাথমিক ওষুধ ‘প্যারাসিটামল’। যেহেতু এখন করোনা, ডেঙ্গু এবং সিজনাল ভাইরাল জ্বরের কারণে জ্বর ও ঠাণ্ডায় আক্রান্ত রোগী মিলছে ঘরে ঘরে। তাই এর চাহিদাও প্রচুর। সাধারণ মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সামান্য জ্বর হলেই একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিচ্ছেন। করোনাকালীন এ চর্চাটা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে বহুগুণ।

ওষুধ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। গত বছরও হয়েছিল এটি। এবারও হয়েছে। ঈদের পর দেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ কেনার ধুম লেগে গেছে।

আর এই সুবাদে গত অন্তত এক সপ্তাহ ধরে সরবরাহ কমে গেছে প্যারাসিটামলের। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কোনো কোনো ফার্মেসিতে মিললেও বেশিরভাগ জায়গাতেই তৈরি হয়েছে হঠাৎ সংকট।

রোববার (৮ জুলাই) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর বেশ কয়েকটি বড় ফার্মেসিতে যোগাযোগ করা হলে তারা প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ সরবরাহে সংকটের কথা জানিয়েছেন। তবে ওষুধ বিক্রেতারা এও বলছেন, অনেকে প্রয়োজন ছাড়াই অতিরিক্ত ওষুধ কিনে রাখছেন। সংকটের অন্যতম মূল কারণও এটি। তারা জানান, অনেকে একসঙ্গে ১০ পাতা করেও কিনে রাখছেন বাসায়।

বেক্সিমকো চট্টগ্রাম জোনের সেলস সুপারভাইজার মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা আগে চট্টগ্রাম নগরীতে ৩০০ থেকে ৫০০ বক্স সরবরাহ করতাম। এখন চাহিদা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। কিন্তু আমরা সরবরাহ দিতে পারছি না।’

সংকটের সুযোগে ফার্মেসি মালিকরা বেশি দাম রাখছেন— এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা তো দাম বাড়াইনি। তাহলে ওরা দাম বাড়াবে কেন?’

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!