চট্টগ্রামে হঠাৎ ডায়রিয়ার ছোবল, ইপিজেড-হালিশহরের রোগী বেশি

নমুনা পরীক্ষায় মিলছে কলেরার জীবাণুও

চট্টগ্রাম নগরীতে হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) পর্যন্ত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৭২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

আক্রান্তদের অধিকাংশই নগরীর দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের ইপিজেড, হালিশহর, সল্টগোলা এলাকার বাসিন্দা। তবে এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১৭ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালসহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালেও ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে আট থেকে ১০ জন রোগী। এরমধ্যে বিআইটিআইডির রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ জনের শরীরে কলোরার জীবাণু পাওয়া গেছে।

নগরীর দক্ষিণ অংশে ওইসব এলাকাগুলোতে খাবার পানি থেকে এ রোগ ছড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। প্রথমে হালকা জ্বর ও বমির সঙ্গে শুরু হচ্ছে ডায়রিয়া। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেয়েও ভালো হচ্ছেন না অনেকে। পরে তাদের হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে। মূলত ওয়াসার পানি ফুটিয়ে পান না কার ফলে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সাধারণত কলেরা একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ। দূষিত খাবার এবং পানির ফলে এ রোগ হতে পারে। এছাড়া আক্রান্ত রোগীর মলের এবং আবর্জনার মাধ্যমেও এ রোগ ছড়ায়।

জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৫ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেলের ১৩, ১৪, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

বিআইটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক মো. মামুনুর রশীদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত ১৫ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ১৬ আগস্ট ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিআইটিআইডিতে ভর্তি হন ৬৯ জন রোগী। পরের ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছিলেন ৫৮ জন। এছাড়া বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৪৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরই মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১১৭ জন আর চিকিৎসাধীন আছেন ৫৫ জন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আক্রান্তদের মধ্যে কলেরার উপসর্গ বেশি মনে হচ্ছে। কারো কারো জ্বর, কারো বেশি বমি হচ্ছে। সব বয়সের রোগীই আছে এখানে। তবে আক্রান্তদের মধ্যে ২০ থেকে ৬০ বয়সী মানুষ বেশি। আক্রান্তরা বেশিরভাগই না ফুটিয়ে ওয়াসার পানি পান করেন বলে জানা গেছে। প্রথম দিন আক্রান্ত ২২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সাতজনের শরীরে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় দিন ১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০ জনের শরীরে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। প্রতিদিন যে স্যাম্পল কালেকশন করা হচ্ছে, পরের দিন তার ফল প্রকাশ করছি।’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীতে হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (আইইডিসিআর) চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠির প্রেক্ষিতে দ্রুত তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন।’

চট্টগ্রাম মেডিকেলের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নাদিমুল ইসলাম বলেন, ‘কলেরায় আক্রান্ত হলে পানির মত পাতলা পায়খানা হবে ঘনঘন। বমি বমি ভাব এবং বমিও হতে পারে। পেটে ব্যথা অনুভূত হয় না, তবে নাভির নিচে জ্বালা ভাব হতে পারে। দেহের মাংসপেশিগুলোর সংকোচন কলেরা রোগের আরও একটি বড় লক্ষণ। যার ফলে মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব হয়। অনেক সময় দেহের তাপমাত্রা কমে গিয়ে ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে নেমে আসে। ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য হ্রাসের ফলে রক্তে প্রোটিনের পরিমাণ অধিকাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। শরীরে খিচুনিসহ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের ধরন দেখে কলেরায় আক্রান্ত বলে ধারণা করছি।’

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!