চট্টগ্রামে হকার্স মার্কেটের ‘ফায়ার জোনে’ পার্কিংবাণিজ্য, মাসে ৬ লাখের ‘ধান্ধা’

চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘির পৌর জহুর হকার্স মার্কেটের ‘ফায়ার অ্যাসেম্বলি এরিয়া’কে গাড়ির পার্কিং জোন বানিয়ে প্রতি মাসে অন্তত ৬ লাখ টাকা পকেটে ভরছে মার্কেট সমিতি। প্রায় তিন দশক আগে প্রতিষ্ঠা হওয়া এই মার্কেটে এতদিন ছিল না কোনো পার্কিং ফি। গত তিন মাস ধরেই এভাবে টোকেন দিয়ে টাকা তুলছে মার্কেট সমিতি। এসব কাজে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা গেছে।

অথচ মাসখানেক আগে মার্কেটে ফায়ার অ্যাসেম্বলি জোন না থাকায় জরিমানাও গুনতে হয় পৌর জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতিকে। এরপরও পার্কিং জোন বানিয়ে টাকা তুলে চলেছে তারা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হকার্স মার্কেটে ফায়ার অ্যাসেম্বলি জোনের জায়গায় রাখা হয়েছে সারি সারি মোটরসাইকেল। এসব মোটরসাইকেল রাখতে গিয়ে ২০ টাকা করে গুনতে হচ্ছে আরোহীদের। এই টাকা নিচ্ছেন এক নিরাপত্তাকর্মী। টাকার বিনিময়ে একটি টোকেন দেওয়া হচ্ছে। তবে টোকেনের গায়ে মার্কেট সমিতির কারো কোনো স্বাক্ষর নেই। এমনকি মার্কেট কমিটির নামও নেই। এছাড়া কার ও মাইক্রো পার্কিংয়ের জন্য ৫০ টাকা ফি আদায় করা হচ্ছে।

এভাবে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা তোলা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, জহুর হকার্স মার্কেটের মালিকানা সিটি কর্পোরেশনের। মার্কেটের অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লালদীঘি প্রান্তের প্রবেশমুখে রাখা হয়েছে ‘ফায়ার অ্যাসেম্বলি এরিয়া’। সেখানে কোনোভাবেই পার্কিং করার সুযোগ নেই। পার্কিং করলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। যার ফলে মার্কেটের অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

অভিযোগ রয়েছে, তিন মাস ধরে মার্কেটের ফায়ার অ্যাসেম্বলি এরিয়াতে পার্কিং বাণিজ্য চলে আসছে। সিটি কর্পোরেশনে এস্টেট অফিসার জসিম উদ্দিনের ইন্ধনে চলছে এই বাণিজ্য। পার্কিং বাণিজ্যের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা মার্কেট কমিটির নেতা ছাড়াও যায় এই কর্মকর্তার পকেটে।

মোটরসাইকেল পার্কিং করা গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আগে এখানে টাকা দিতে হতো না, এখন টাকা নিচ্ছে মার্কেট কমিটির নামে। কিন্তু টাকার রশিদে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম নেই।’

ফায়ার অ্যাসেম্বলি এরিয়াতে কেন পার্কিং বানিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে এবং কারা আদায় করছে—জানতে চাইলে এক নিরাপত্তাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শুনেছি সিটি কর্পোরেশন থেকে মার্কেট কমিটি পার্কিং ইজারা নিয়েছে। তাদের নির্দেশে টাকা আদায় করা হচ্ছে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের এস্টেট অফিসার জসিম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সেখানে পার্কিংয়ের নামে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে শুনেছি। খুব শিগগির অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

টাকা আদায়ে সম্পৃক্ততা আছেন কি-না, জিজ্ঞেস করতেই তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার কল দিলেও তার সাড়া মেলেনি। অভিযোগের বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বিস্তারিত পাঠানো হলেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।

সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জহুর হকার্স মার্কেটের মালিক সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশন দোকানগুলো বরাদ্দ দেয়। প্রবেশপথের খালি জায়গাটি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। ওই জায়গা ব্যবহার করে টাকা আদায় করার সুযোগ নেই। করলে সেটা অনিয়ম।’

পৌর জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ‘এটি ব্যক্তি মালিকাধীন মার্কেট। মার্কেটে আগত ক্রেতাদের গাড়ির নিরাপত্তার জন্য পার্কিংয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। যে টাকা তোলা হচ্ছে তা নিরাপত্তাকর্মীদের দেওয়া হয়।’

পৌর জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বোরহান উদ্দিন সালেহীন বলেন, ‘মার্কেটটি ব্যবসায়ী সমিতির নামে বরাদ্দ দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। মার্কেট পরিচালনা করে ব্যবসায়ী সমিতি। তাই ক্রেতাদের গাড়ির নিরাপত্তার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে সমিতি।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!