চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রীর শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললো চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড

টাকা নিয়েও জেএসসির রেজিস্ট্রেশন দেয়নি

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সী ভিউ পাবলিক স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাত আক্তার। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে তার স্কুল থেকে ১৮০ জন জেএসসি পরীক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফি জমা দিয়েছিল চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখায়। টাকা জমা হলে পরবর্তীতে নিয়ম অনুযায়ী সবার রেজিস্ট্রেশন হলেও রেজিস্ট্রেশন হয়নি শিক্ষার্থী জান্নাতের। বিষয়টি বোর্ডের কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফা জানানোর পর, বারবার সংশ্লিষ্টরা রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে আসছিলেন।

পরবর্তীতে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে বন্ধ হয়ে যায় সরকারি অধিকাংশ দফতরের কার্যক্রম। এর মাঝে ২০২০ শিক্ষাবর্ষের রেজিস্ট্রেশনকৃত সব শিক্ষার্থীকে ‘অটোপাশ’ দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় অটোপাশের সুযোগ পাননি ওই শিক্ষার্থী। তাই চলতি বছরে সবাই নবম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও একই শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পাননি জান্নাত।

এদিকে ১৮০ জন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন ফি জমা নেওয়ার পর ১৭৯ জন রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেলেও কারিগরি ক্রটির কারণে বাকি একজনের রেজিস্ট্রেশনের দায় নিতে চাচ্ছে না চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ।

চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোছাম্মদ জান্নাত আক্তারের রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেতে একটি লিখিত আবেদন করে পতেঙ্গা সী ভিউ পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই আবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ শিক্ষাবর্ষে রেজিস্ট্রেশনকৃত অষ্টম শ্রেণীর ১৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন কার্ড এসেছে ১৭৯ জনের। বাকি একজনের রেজিস্ট্রেশন কার্ড পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বরও একই আবেদন করা হয়। ওই সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের ইন্সপেক্টর বিপ্লব গাঙ্গুলী স্কুল কর্তৃপক্ষের লিখিতভাবে আবেদনটি গ্রহণ না করে সেকশন অফিসার কুতুব উদ্দিনের কাছে পাঠিয়ে দেন প্রতিবারই।

সী ভিউ পাবলিক পাবলিক স্কুল সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, শিক্ষা বোর্ডের কর্মরত স্টাফদের প্রিন্টিং ভুলের কারণে মোছাম্মদ জান্নাত আক্তারের রেজিস্ট্রেশন কার্ড করা হয়নি। শিক্ষাবোর্ডে বারবার আমরা আবেদন নিয়ে গিয়েছি, কিন্তু তারা এই আবেদন অফিসিয়ালি গ্রহণ না করে বলেছে— আবেদনের প্রয়োজন নেই, তারা এটি ঠিক করে দেবেন। সেকশন অফিসার কুতুব উদ্দিন রেজিস্ট্রেশন করে স্কুল কর্তৃপক্ষের নিকট রেজিস্ট্রেশন কার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন বারবার। পরবর্তীতে করোনায় সব কিছু বন্ধ থাকার মাঝে স্কুল কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছেনি ওই রেজিস্ট্রেশন কার্ডটি।

ভুক্তভোগীর শিক্ষার্থীর বাবা জাকারিয়া হোসাইন খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার মেয়ের কী দোষ ছিল? সব নিয়মকানুন মেনে স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিক্ষাবোর্ড রেজিস্ট্রেশনের টাকা জমা নেওয়ার পরও কেন কার্ড দেয়নি? সব শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন কার্ড আসলো, শুধুমাত্র আমার মেয়ের কার্ডটা আসলো না। শিক্ষাবোর্ডের গাফলতিতে এই ভুল হয়েছে বলে আমি মনে করছি। এর দায়ভারও তাদের নিতে হবে।’

জানতে চাইলে পতেঙ্গা সীভিউ স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাদেকুর রহমান বলেন, ‘২০২০ শিক্ষাবর্ষে ১৮০ জন শিক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দেওয়ার পর সেখানে ১৭৯ জনের রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেলাম, বাকি একজনের পেলাম না। সময়মতো তাদের সঙ্গে ওই কার্ডের জন্য দুইবার আবেদন করেছি। তারা বারবার ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে গেছে। এখন একজন শিক্ষার্থী নবম শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পেল না। তার হতাশার দায়ভার কে নেবে?’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলী বলেন, ‘তাদের স্কুলের ভুলের কারণে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাত আক্তার রেজিস্ট্রেশন হয়নি। তারা (স্কুল কর্তৃপক্ষ) সময়মতো যোগাযোগ করেনি। এখন আর করার কিছু নেই।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘২০২০ শিক্ষাবর্ষে যে মেয়েটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড পায়নি, সেটি এখন আর করা সম্ভব নয়। ওই শিক্ষাবর্ষের সব অটোপাশ হয়েছে। তারা সবাই নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে এক বছর পার করেছে ইতোমধ্যে। এখন আর কিছুই করা সম্ভব না। স্কুল কর্তৃপক্ষ সময়মতো যোগাযোগ না করায় মেয়েটির রেজিস্ট্রেশন কার্ডটি পায়নি।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!