চট্টগ্রামে সিগারেট চোরাচালানকাণ্ডে সিএন্ডএফের লাইসেন্স বাতিল, ‘হপ ইক’ এখনও অধরা

ঘোষণা ছিল গার্মেন্টসের কাঁচামাল, বাস্তবে দেখা গেল নিয়ে আনা হয়েছে পুরো এক কনটেইনার বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট। পোশাকখাতকে দেওয়া সরকারি সুবিধার অপব্যবহার করে শুল্ক ফাঁকি দিতে এমন প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় এবার বাতিল হয়ে গেল চট্টগ্রামের সিএন্ডএফ এজেন্ট চান্দু করপোরেশনের লাইসেন্স (নম্বর ৪০০৫/১৫)। কিন্তু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হপ ইক (বাংলাদেশ) লিমিটেডের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সাভারের (ডিইপিজেড ওয়েস্ট) আমদানিকারক হপ ইক (বাংলাদেশ) লিমিটেড চীন থেকে পোশাক শিল্পের উপকরণ আনার মিথ্যা ঘোষণায় সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন ওজনের অবৈধ ওই সিগারেট আমদানি করে। তবে বিপুল পরিমাণ সিগারেটের এই চালান খালাস হওয়ার আগেই কাস্টমস গোয়েন্দারা সেটা আটক করে। জালিয়াতির মাধ্যমে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওই এক চালানেই ২৩ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছিল।

এদিকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার হপ ইক (বাংলাদেশ) লিমিটেড দাবি করছে, চীন থেকে আসা অবৈধ সিগারেটের কনটেইনারটির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। এমনকি ওই কনটেইনার খালাসে নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্ট চান্দু কর্পোরেশনের সঙ্গেও তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, তাদের এমন দাবি হাস্যকর। আমদানিকারক এই প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই জালিয়াতির দায় এড়াতে পারে না।

কনটেইনারে ৮৫০টি বড় কার্টনে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ব্রান্ডের এক কোটি ৭০ লাখ শলাকা বিদেশি সিগারেট।
কনটেইনারে ৮৫০টি বড় কার্টনে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ব্রান্ডের এক কোটি ৭০ লাখ শলাকা বিদেশি সিগারেট।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের এআইআর শাখার সহকারী কমিশনার রেজাউল করিম বলেন, ‘জালিয়াতির এই ঘটনায় জড়িত থাকায় সিএন্ডএফ এজেন্ট চান্দু করপোরেশনের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। তবে এই জালিয়াতির সঙ্গে আমদানিকারকসহ যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও কাস্টমস আইনে মামলা হবে।’

এদিকে এই ঘটনা তদন্তে কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার (জেটি) তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে এই কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর পণ্য খালাসের জন্য সিএন্ডএফ এজেন্ট চান্দু করপোরেশন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। চট্টগ্রামের দক্ষিণ আগ্রাবাদ আবিদার পাড়া চান্দু ম্যানশনের পঞ্চম তলায় এই সিএন্ডএফ এজেন্টের কার্যালয়। বিল অব এন্ট্রি দাখিল করলেও পণ্য খালাসের আগে কাস্টমসের অনুসন্ধানে জানা যায়, তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য দেওয়া শুল্কমুক্ত সুবিধায় পোশাকশিল্পের কাঁচামাল আমদানির কথা থাকলেও বাস্তবে আনা হয়েছে কনটেইনারভর্তি বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট।

বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামালগুলো শুল্কমুক্তভাবে দ্রুত খালাস দেওয়া হয়। এই সুযোগের অপব্যবহার করে পোশাকশিল্পের কাঁচামাল ঘোষণায় আমদানি করা হয় এসব সিগারেট। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টম হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ টিম (এআইআর) ও কাস্টমস গোয়েন্দা শাখা ওই কন্টেইনার জব্দ করে।

কাস্টমসের এআইআর শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা ইমরুল ইসলাম বলেন, ‘গার্মেন্টসের পণ্যের ঘোষণা দিয়ে আনা ওই কনটেইনারে ৮৫০টি বড় কার্টনে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ব্রান্ডের এক কোটি ৭০ লাখ শলাকা বিদেশি সিগারেট। জব্দকৃত সিগারেটগুলো মুন ও ৩০৩ ব্রান্ডের। মিথ্যা ঘোষণায় সিগারেট আমদানির এই ঘটনায় প্রায় ২৩ কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা ছিল। প্রাথমিকভাবে সিএন্ডএফ এজেন্ট জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়ায় অস্থায়ীভাবে সেটার লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।’

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!