চট্টগ্রামে সাড়ে ৩ লাখ পোশাকশ্রমিক করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে

চট্টগ্রামের বন্দর-ইপিজেড এলাকার পোশাকশ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কর্মী। একেকটি কারখানায় একসঙ্গে কাজ করছেন কয়েক হাজারের বেশি শ্রমিক। যৌথভাবে হয় খাওয়াদাওয়াও। এসব শ্রমিক কাজ শেষে ফেরেন জনবহুল বস্তিতে। বেশিরভাগ পোশাক শ্রমিক একই কক্ষে গাদাগাদি করে বসবাস করেন। এর ফলে এদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও অনেক বেশি।

সোমবার (২৩ মার্চ) সরেজমিনে ঘুরে চট্টগ্রামের ইপিজেড, বন্দর ও পতেঙ্গায় দেখা যায়, তেমন কোন সুরক্ষা ছাড়া সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত কারখানায় যাচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস থেকে দেওয়া নির্দেশনার সেভাবে মানা হচ্ছে না চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও সিইইপিজেডের গার্মেন্টসগুলোতে। এতে বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে কর্মরত সাড়ে ৩ লাখ পোশাক শ্রমিক।

সূত্র বলছে, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (বেপজা) সিইপিজেডের মোট গার্মেন্টস রয়েছে ১৫৮টি। প্রায় আড়াই লাখ পোশাক শ্রমিক কর্মরত রয়েছে সেখানে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (বেপজা) কর্ণফুলী ইপিজেডে ৫০টি গার্মেন্টস ও সেখানে প্রায় ১ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।

বেশিরভাগ পোশাক শ্রমিক একই কক্ষে গাদাগাদি করে বসবাস করেন।
বেশিরভাগ পোশাক শ্রমিক একই কক্ষে গাদাগাদি করে বসবাস করেন।

ইপিজেড আকমল আলী এলাকায় কাজ শেষে একসঙ্গে থাকছেন প্রায় ১০-১৫ জন নারী শ্রমিক। সেখানে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রহিমা খাতুন নামে এক শ্রমিকের। তিনি বলেন, ‘এখানকার সবাই ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেড কারখানার শ্রমিক। করোনা ভাইরাস নিয়ে আমরা কোন নির্দেশনা পাইনি। আগের মতো কাজ করছি। তবে একটু সচেতন থাকছি। তবে সবার মধ্যে করোনার ভয় কাজ করছে।’

কর্ণফুলী ইপিজেডের আনজুমান আরা নামে আরেক পোশাক শ্রমিক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয়ে বাসায় বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। নিয়ম মেনে কী আর হবে? ফ্যাক্টরি বন্ধ হলে কিভাবে চলবো। দেশের বাড়িতে কিভাবে টাকা পাঠাবো।’

মুহাম্মদ ফারুক নামে ইপিজেড কারখানার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা চাকরি করতে বাধ্য। করোনার ঝুঁকি থাকলেও চাকরি না করলে সংসার চলবে কী করে! ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ কিভাবে পরিশোধ করব? চাকরি না করলে কে বেতন দেবেন?’

রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল কর্ণফুলী ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার মসিউদ্দিন বিন-মেজবাহ বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত এখানকার ইন্ডাস্ট্রিগুলো বন্ধের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। নতুন করে কোন ফ্যাক্টরিতে অর্ডার নেই। ফ্যাক্টরিগুলোতে আগের অর্ডারে কাজ করছেন শ্রমিকরা। সার্বিক পরিস্থিতি ভাল। বেপজার নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মস্থলে প্রবেশের সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

বেশিরভাগ পোশাক শ্রমিক একই কক্ষে গাদাগাদি করে বসবাস করেন।
বেশিরভাগ পোশাক শ্রমিক একই কক্ষে গাদাগাদি করে বসবাস করেন।

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (বেপজা) সিইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার খুরশিদ আলম বলেন, ‘গত ২১ মার্চ শ্রম মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা এসেছে। তবে ফ্যাক্টরি বন্ধের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ইপিজেডে কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ পোশাক কারখানায় নিয়মিত ডিউটি করছেন শ্রমিকরা। নতুন করে কোন অর্ডার নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার সব প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেপজার নির্দেশনার আলোকে কর্মরত পোশাক শ্রমিকদের অফিসে ঢোকার সময়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে মেশিনে বসার নিয়ম চালু করা হয়েছে। তবে বাইরে থাকা পোশাক শ্রমিকদের করোনা থেকে নিরাপদে রাখার বিষয়ে বেপজা থেকে আপাতত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কর্ণফুলী ও সিইপিজেডের কারখানার মালিকপক্ষ ও বেপজা অথরিটিকে সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে বলা হয়েছে কর্মরত শ্রমিকদের কোয়ারেন্টাইনে রাখাসহ কর্মস্থলে এক মিটার দূরত্বে কাজ করার জন্য। সেখানে কোন শ্রমিক সর্দি, কাশি বা জ্বরে আক্রান্ত হলে তাদের ছুটি দিয়ে দিতে বলা হয়েছে।’

সিভিল সার্জন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো কেউ নিয়ম মানছে না। একই বিষয়ে বারবার বলার পর যদি নির্দেশ অমান্য করে সেখানে আমাদের কী করার আছে?’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!