চট্টগ্রামে সাদা শার্ট না পরায় স্কুল ঢুকতে বাধা হেডমাস্টারের, দেড় বছরের প্রতীক্ষা শেষে প্রথম ধাক্কা

দেড় বছরের প্রতীক্ষা শেষে খুশি মনে স্কুলে গেল শিহাব (ছদ্মনাম)। অনেকদিন পর আবারও সহপাঠীদের দেখা পাবে, স্কুলের শিক্ষকদের ক্লাস করবে। কিন্তু তার আর ক্লাস করা হল না। শুধুমাত্র স্কুলের নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরে না আসায় স্কুলেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি শিহাবকে। অনেক অনুনয়-বিনয় করেও মন গলানো যায়নি শিক্ষকদের। শেষ পর্যন্ত মন খারাপ করেই তাকে ফিরতে হল ঘরে।

শুধু শিহাবই নয়, এমন আরও ২০ জন ছাত্রকে শুধুমাত্র সাদা শার্ট (ইউনিফর্ম) পরে না আসায় স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের আলহাজ্ব মহব্বত আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমির হোসেনের নির্দেশে। এই ২০ শিক্ষার্থীই স্কুলটির দশম শ্রেণির ছাত্র।

জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় শারীরিক গড়নের তুলনায় এই শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম ছোট হয়ে যায়। তাদের অনেকে নতুন শার্ট সেলাই করতে দিয়েছে কয়েকদিন আগে। দর্জির দোকান থেকে সেই নতুন শার্ট এখনও হাতে পায়নি তারা। কিন্তু এ ধরনের কড়াকড়ির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কড়া নিষেধ থাকলেও ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার তোয়াক্কা করেননি।

ক্লাশ করতে না পারা এক ছাত্র জানায়, ‘সকালে স্কুলে গিয়ে দেখি হেড স্যারসহ আরো কয়েকজন স্যার গেইটে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের সাদা শার্ট না থাকায় হেড স্যার আমাদের ভিতরে ঢুকতে দেননি। তখন সৌমিত্র স্যারসহ আরও দুজন স্যার আমাদের ঢুকতে দেওয়ার জন্য হেড স্যারকে অনুরোধ করেন। তারপরও হেড স্যার ঢুকতে দেননি। আমার মত আরও ২০ জন ছাত্রকে স্যার ক্লাস করতে দেননি।’

তবে স্কুলে ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনাটি স্বীকার করলেও ছাত্রদের ঢুকতে না দেওয়ার দোষটি অন্য শিক্ষকদের কাঁধে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্কুলের নিয়ম মেনে চলার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে পরবর্তীতেও ছাত্ররা স্কুলের নিয়ম মেনে চলে।’ আর এমন কাজ অবশ্যই ভুল হয়েছে স্বীকার করে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান এই প্রতিবেদককে।

প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন ড্রেস পরে না আসা সকল ছাত্রকে তিনি ‘দুষ্ট ছাত্র’ বলে অভিহিত করে ছাত্রদের ঢুকতে না দেওয়ার নির্দেশদাতা হিসেবে দশম শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষক সৌমিত্র ব্যানার্জী ও শিক্ষক তপন বাবুর ওপর দোষ চাপান।

তবে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা মেলেনি।

প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ প্রসঙ্গে শ্রেণিশিক্ষক সৌমিত্র ব্যানার্জী বলেন, ‘হেড স্যার স্কুলের প্রধান। উনি যে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা তা ফলো করেছি। ইউনিফর্ম ছাড়া ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তটা ওনার। আমরা অনেকে এই কাজটা না করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু উনি শোনেননি। এখন হেড স্যার নিজে বাঁচার জন্য আমাদের নামে মিথ্যা কথা বলছেন।’

এদিকে প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন ও এক ছাত্রের অভিভাবকের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড হাতে এসেছে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে। সেখানে অভিভাবক এই ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘স্কুলে ইউনিফর্ম পরে না আসলে কেন ঢুকতে দেব? আমরা জুতা আর প্যান্ট মাফ করেছি। কিন্তু শার্ট না পরলে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’

অভিভাবকের পক্ষ থেকে অন্তত প্রথম দিন ক্লাস করতে দেওয়ার অনুরোধ করা হলে প্রধান শিক্ষক এ সময় বলেন, ‘প্রথম দিন হইছে তো কী হইছে? শার্ট ছাড়া ওরকম স্কুলে ঢুকতে পারে না।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচালিত এই স্কুলের বিরুদ্ধে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে টিউশন ফি আদায়ের অভিযোগ উঠে। ফি আদায় করতে চলে রীতিমতো জবরদস্তিও। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের নভেম্বরে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা টিউশন ফি মওকুফের দাবিতে মাঠে নামেন।

এর আগে ২০১৮ সালের দিকে প্রধান শিক্ষক আমির হোসেনের বিরুদ্ধে স্কুলের অর্থ লোপাট ও ছাত্রদের সাথে খারাপ আচরণের প্রতিবাদে স্কুলে সপ্তাহব্যাপী আন্দোলন করেছিল মস্কুলের ছাত্ররা। সে সময় প্রধান শিক্ষকের অর্থ লোপাটের বিরুদ্ধে যেসব শিক্ষক প্রতিবাদ করেছিল, সেই শিক্ষকদের এই ঘটনায় জড়ানো হচ্ছে বলে জানান ২০১৮ সালে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সাবেক এক ছাত্র। সেই সময় ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে স্কুলটি ৭ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তখন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষা কর্মকর্তা এসে আন্দোলনরত ছাত্রদের বুঝিয়ে ঘটনাটির মীমাংসা করেন।

বিএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!