তারা সাত জন বন্ধু। করোনা পরিস্থিতিতে তাদের যত উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা। নিজেদের নিয়ে এই উদ্বেগ নয়। কর্মহীন মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ, তাদের ঘরে যে খাবার নেই- তা নিয়েই তাদের এই ভাবনা। কিছু একটা করতে হবে- এমন চিন্তা থেকে তারা বসলেন একসঙ্গে। যোগাড় করলো কিছু আইডিয়া।
প্রথম দফায় ফেসবুকে খুলে বসলো পেইজ। নাম দিল ‘স্বদেশ ফাউন্ডেশন’৷ এই পেইজে দেওয়া হল তাদের সঙ্গে যোগাযোগের নাম্বার। পেইজে সহযোগিতা চেয়ে দেওয়া হল কিছু পোস্ট। পরে সহযোগিতার হাত বাড়ালেন অনেকেই।
আবার নিজেদের অর্থায়নের পাশাপাশি পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত মানুষদের কাছ থেকেও টাকার যোগান এসেছে তাদের হাতে।
এসব টাকায় ৪২০টি পরিবারকে ১২ কেজি করে খাবার যোগান দিয়েছে এই ছয় বন্ধুর দল।
‘স্বদেশ ফাউন্ডেশন’ নামে মানবিক এই প্লাটফর্মের উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান, অভি বিশ্বাস, আরমান হোসেন, তারেক চৌধুরী, আসলাম পারভেজ, মোহাম্মদ ফরহাদ উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম রিফাত।
তাদের একজন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুধুমাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এই প্লাটফর্ম করেছি আমরা। স্বদেশ ফাউন্ডেশন নাম দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেইজ খুলে তাতে যোগাযোগের জন্য সংগঠনের কর্মীদের মোবাইল দিয়ে দিই। অনেকেই মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেছে। কেউ সাহায্য পাঠিয়েছে। কেউ সাহায্য নিয়েছে। আমরা পরিচয় গোপন রেখেই সাহায্যপ্রার্থীদের সহযোগিতা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মোট ৪২০ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিই। প্রথম ধাপে ১০০ পরিবার, দ্বিতীয় ধাপে ১২০ পরিবার,তৃতীয় ধাপে ২০০ পরিবার। প্রতি পরিবারকে চাল, ডাল, আলু, ছোলা, তেল, পেয়াজ, সেমাই, লবণসহ ১২ কেজি করে খাবার দিয়েছি যাতে কিছুদিন অন্তত তারা খেতে পারেন। চট্টগ্রামের বাকলিয়া, চান্দগাঁও, চকবাজার, পাঁচলাইশ, কোতায়ালী থানার বিভিন্ন জায়গায় থেকে আমরা বেশি ফোন কল পেয়েছি। এই পর্যন্ত যারা খাদ্যসামগ্রী নিয়েছে তাদের একটা তালিকা আমরা করেছি। নিজেদের স্বচ্ছতা বিষয়ের জন্য আমরা সকল তথ্য সংরক্ষণ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রথম রোজা থেকে ১০০ জন পথচারী, রিক্সাচালকসহ ভাসমান মানুষদের ইফতার বিরতরণ কার্যক্রম চালু রয়েছে। আমরা বাকলিয়া থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় ইফতারি বিতরণ করি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু করেছি তার জন্য প্রতিদিন একটা বড় অংকের টাকার প্রয়োজন। আমরা প্রতিদিন অসংখ্য ফোন কল পাচ্ছি। যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। লোকবল ও অর্থসংকট দুটোই আমাদের রয়েছে। আমরা মনে করি স্বদেশ ফাউন্ডেশনের মত সংগঠনের পাশে সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসা উচিত।’
আদর/এমএফও