চট্টগ্রামে সরকারি চাকরিতে তথ্য গোপন করেও বহাল তবিয়তে শিক্ষিকা

চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ার চরচাক্তাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন প্রিয়া মুহুরী। এর আগে তিনি রাউজানের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সরকারি একটা চাকরি থাকা অবস্থায় তথ্য গোপন করে একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরি নেন তিনি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের রাউজানের বিনাজুরীর লেলিংগারার বাসিন্দা দেখিয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে সরকারি চাকরি নেন প্রিয়া মুহুরী। চাকরি নেওয়ার পর তিনি প্রথমে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন রাউজানের এয়াছিন নগর ফকিরটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালীর আলকরণের বাসিন্দা দেখিয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে আবার নতুন করে সরকারি চাকরি গ্রহণ করেন এই প্রিয়া মুহুরী। চাকরি হওয়ার পর সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন বাকলিয়া থানার চরচাক্তাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

বিষয়টি জানাজানি হলে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রাউজানের চাকরি ছেড়ে দেন প্রিয়া মুহুরী।

বর্তমানে বাকলিয়ার চরচাক্তাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মরত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সৌমা দত্ত।

প্রধান শিক্ষিকা সৌমা দত্ত বলেন, ‘সহকারী শিক্ষিকা প্রিয়া মুহুরী সম্পর্কে আমি বেশি কিছু জানি না।’

এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ এর ৫ (খ) ধারায় উল্লেখ আছে, সরকারি চাকরি কিংবা কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চাকরিতে নিয়োজিত থাকাকালীন স্বীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দরখাস্ত দাখিল না করলে কোনো পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে কর্মরত কোনো কর্মচারী একই পদে পুনরায় চাকরি পেতে আবেদন করতে পারেন না। যার কারণে বৈধভাবে দ্বিতীয়বার সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ ছিল না প্রিয়া মুহুরীর। তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে তথ্য গোপন করে চাকরি নেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিয়া মুহুরী বলেন, ‘আমার একটাই চাকরি, একটাই ঠিকানা।’

দুই ঠিকানা দেখিয়ে সরকারি দুই স্কুলে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এসব আপনারা তদন্ত করে বের করেন। আমাকে এসব ফালতু বিষয়ে ফোন করবেন না। আমি একটাই চাকরি করি এবং রাউজানে কখনোই ছিলাম না’-বলেই মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাউজানের সহকারী থানার শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মোমেন বলেন, ‘২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চাকরি হতে অব্যাহতির আবেদন করেন প্রিয়া মুহুরী। ওইদিনই তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সেটি মঞ্জুর করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, আমার তখন মনে হয়েছিল প্রিয়া মুহুরী তথ্য গোপন করছেন। কেননা আমি তাকে অনেক বুঝিয়েছি যে সরকারি চাকরি কেন ছাড়ছেন? তিনি বারবার বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে।’ এভাবে তথ্য গোপন করে একই পদে দুটি চাকরি নেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনার মাধ্যমেই জানলাম। এভাবে তথ্য গোপন করে একই পদে চাকরি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারি চাকরি নিয়োগ বিধিমালায় উল্লেখ আছে, আবেদনকারী কোন তথ্য গোপন করতে পারবেন না। এ বিষয়ে কেউ সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইটি) মো. আবু রায়হান দোলন বলেন, ‘তথ্য গোপন করে কেবল সরকারি চাকরি নয়, কোনো কিছুই করার সুযোগ নেই। তিনি যদি মিথ্যা তথ্য দেন, সেটি অবশ্যই বেআইনি। এছাড়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে জেলা প্রশাসকও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। এ ধরনের অপরাধ করলে সরকারি চাকরি বিধিমালায় যে শাস্তির বিধান রয়েছে তাই তার ওপর প্রযোজ্য হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!