চট্টগ্রামে শনাক্ত বাড়লেও লকডাউনের কারণে কমছে করোনার নমুনা পরীক্ষা

লকডাউনে মানুষ কিভাবে যাবে করোনার নমুনা দিতে?

শনাক্তের সংখ্যা বাড়লেও চট্টগ্রাম নগরে অনেক ল্যাবেই কমেছে করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের বিধিনিষেধের ফল। ওই এই তিনদিনে রিকশা ছাড়া সব ধরনের ব্যক্তিগত ও গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে করোনা টেস্টের ক্ষেত্রে আগ্রহীরা কিভাবে বাসা থেকে বের হয়ে করোনার নমুনা দিতে যাবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকায় শাটডাউনে করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও কমার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে শুরু করে সপ্তাহব্যাপী এই লকডাউন বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে যেতেও মানা করা হয়েছে জনসাধারণকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার (৩০ জুন) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয় মাত্র ৮৪ জনের। অথচ এর তিনদিন আগে লকডাউন যখন ছিল না সেই রবিবারে এই হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে আসেন ১৫৪ জন। লকডাউনের ৩ দিনে এই সংখ্যা প্রতিদিনই ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। সোম, মঙ্গলবারে এই হাসপাতালে করোনার নমুনা জমা দেন যথাক্রমে ১৩০ ও ৯৪ জন। সবশেষ বুধবারে এসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ৮৪ জনে।

জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানজিমুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

লকডাউনে যান চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে নগরে টেস্টের পরিমাণ কমছে বলে জানিয়েছেন বিআইটিআইডির ল্যাবে কর্মরত চিকিৎসা কর্মকর্তারাও।

আজ বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউনে করোনা টেস্টের নমুনা জমা দেওয়ার বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় করোনার উপসর্গধারী সাধারণ মানুষ কিভাবে নমুনা দিতে যাবে— এটি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা নিয়ে আসলে আমরাও ভাবছি। কাল পর্যন্ত তো তাও রিকশা ছিল। বৃহস্পতিবার থেকে তো তাও থাকবে না। তাছাড়া এই সময়ে তো ঘর থেকে বের হওয়াও নিষেধ। যারা বাইরে বের হতে পারবে তাদের ব্যাপারে কিছু ক্রাইটেরিয়া সেট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা টেস্ট করতে যারা আসবে তাদের বিষয়ে সেরকম কিছুই তো নাই। কাজেই নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কিছুটা কমবে বলেই মনে হচ্ছে।’

অন্যদিকে বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ ড. শাকিল আহমেদ এখন পর্যন্ত নগরে করোনা টেস্টের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমেনি বলে মনে করলেও লকডাউনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা কমে আসার আশংকার কথা জানিয়েছেন।

এই বিষয়ে ড. শাকিল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেখুন অনেক বিষয় নিয়েইতো কথা হচ্ছে। যেমন অফিস খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ করা। এসব নিয়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে আবার সমাধানও বের হচ্ছে। এখন আসলে লোকজন কীভাবে টেস্ট করাতে আসবে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। তবে এখন পর্যন্ত মনে হয় না টেস্টের সংখ্যা অতটা কমেছে। কাল থেকে কী হবে— এটা নিয়ে চিন্তা করছি আমরা।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যাদের উপসর্গ বেশি তারাই শুধু টেস্ট করবে। আমাদের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র আছে সেখানে গিয়ে তারা নমুনা দেবে। তাছাড়া এর মধ্যে মানুষজন ঘর থেকে বের না হলে আমরা যেজন্য এই লকডাউনের কথা বলছি সেটা তো সফল হবে। সংক্রমণও কম ছড়াবে।’

এদিকে যানবাহনের সংকট নিরসনে সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সহযোগিতায় রোগীদের পরিবহনের জন্য ৩০টি সিএনজিচালিত ট্যাক্সি ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে প্রয়োজন হলে এসব সিএনজিচালিত ট্যাক্সির মাধ্যমে নমুনা দিতে আসা মানুষদের আনা-নেওয়া করা যেতে পারে বলেও এ সময় জানান সিভিল সার্জন।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!