চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ের পাগলাঘোড়া, সোমবারের ৩৪ বুধবারেই একলাফে ১৯০ মেগাওয়াট

মাঝরাত-ভোররাতেও রেহাই মিলছে না

সাম্প্রতিক সময়ে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কিছুটা কমে আসবে— এমনটি আশা করা হলেও দেশের অন্য জোনের মতো চট্টগ্রামেও গত এক সপ্তাহে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। এর আগে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরে লোডশেডিং অর্ধেকে নেমে আসবে। কিন্তু সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে অক্টোবর শুরু হলেও লোডশেডিং কমা তো দূরের, বরং দিনের পর দিন বাড়ছেই। এমনকি মধ্যরাত-ভোররাতেও লোডশেডিং নেমে আসছে হঠাৎ করেই। মানুষ পড়ছে অসহনীয় দুর্ভোগে।

গ্যাস ও ফার্নেস অয়েলের সংকটই মূলত লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ— বলছেন বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে দিনে দুই হাজার ২৫২ এমএমসিএফ গ্যাসের চাহিদা থাকলেও পেট্রোবাংলা থেকে দেওয়া হচ্ছে এর মাত্র অর্ধেকটা। অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তুকির টাকা মিলছে না— এমন কারণ দেখিয়ে ফার্নেস অয়েল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। ফলে এসব কেন্দ্র থেকেও বিদ্যুৎ আর আসছে না।

এসব সংকটে পড়ে সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও (২৯ সেপ্টেম্বর) ১২টি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ থাকে। আংশিক চালু থাকে অপর ১২টি কেন্দ্র। এছাড়া বন্ধ ছিল আটটি ফার্নেস অয়েলচালিত ৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রও।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পিক আওয়ারে ঢাকা ও খুলনার পর চট্টগ্রামে ১৯০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়— যা ছিল মাত্র একদিন আগে হওয়া লোডশেডিংয়ের তুলনায় সাড়ে পাঁচগুণ বেশি। এদিন ঢাকা জোনে ৩৪৫ মেগাওয়াট এবং খুলনা জোনে ২৩০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। এ দিন সারা দেশে সাবস্টেশন পর্যায়ে সবমিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৭১৩ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১২ হাজার ২৪২ মেগাওয়াট। এদিন লোডশেডিং হয় এক হাজার ৪৭১ মেগাওয়াট— যা আগের তুলনায় আরও বেশি।

আগের দিন মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পিক আওয়ারে দেশের ৯টি জোনের মধ্যে চট্টগ্রাম ও বরিশালে সাবস্টেশন পর্যায়ে কোনো লোডশেডিং হয়নি। তবে দেশের বাকি ৭টি জোনে লোডশেডিং হয়েছে এক হাজার ২৪৭ মেগাওয়াট। এ দিন সারা দেশে সাবস্টেশন পর্যায়ে সবমিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৬৩৫ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১২ হাজার ৩৮৮ মেগাওয়াট।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পিক আওয়ারে চট্টগ্রামে লোডশেডিং ছিল তুলনামূলক কম— মাত্র ৩৪ মেগাওয়াট। এ দিন ঢাকায় এই পরিমাণ ছিল ৩৬০ মেগাওয়াট। এ দিন সারা দেশে সাবস্টেশন পর্যায়ে সবমিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৫৬৮ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১২ হাজার ৩৯৭ মেগাওয়াট। এদিন লোডশেডিং হয় এক হাজার ১৭১ মেগাওয়াট।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) পিক আওয়ারে দেশের ৯টি জোনের মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশালে সাবস্টেশন পর্যায়ে কোনো লোডশেডিং হয়নি। এ দিন সারা দেশে সাবস্টেশন পর্যায়ে সবমিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ১৪৮ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১২ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। এদিন লোডশেডিং হয় ৬৮০ মেগাওয়াট— যা অন্য সময়ের তুলনায় খানিকটা কম।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) পিক আওয়ারে দেশের ৯টি জোনের মধ্যে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও বরিশালে সাবস্টেশন পর্যায়ে কোনো লোডশেডিং হয়নি। এ দিন সারা দেশে সাবস্টেশন পর্যায়ে সবমিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১২ হাজার ৪৪৬ মেগাওয়াট। এদিন লোডশেডিং হয় ৭০৩ মেগাওয়াট— যা অন্য সময়ের তুলনায় খানিকটা কম।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!