চট্টগ্রামে লুকাতে চেয়েছিলেন ৫০ টাকার জন্য অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়া আসাদুল

বকশিশ না পেয়ে মুমূর্ষূ এক কিশোরের মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক খোলার ঘটনায় তোলপাড় তৈরি হওয়ার পর অভিযুক্ত সেই কর্মচারী বগুড়া থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে তার আগেই র‍্যাব-১২ অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ভোরে ঢাকা থেকে অভিযুক্ত ওই আসাদুলকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গ্রেপ্তার কর্মচারী মো. আসাদুল ইসলাম মীর ওরফে ধলু স্বীকার করেছেন, চাহিদা অনুযায়ী বকশিশ না পেয়ে ওই রোগীর মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে নেন তিনি।

মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে মুখ থেকে আসাদুল অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়ার পরই বিকাশ চন্দ্র কর্মকার (১৫) নামের এক রোগী মারা যায় বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনেরা।

বুধবার (১০ নভেম্বর) দিবাগত রাতে বিকাশের মৃত্যুর ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় আসাদুলকে আসামি করে একটি মামলা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অভিযুক্ত আসাদুল শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৬ বছর ধরে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মী (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) হিসেবে অস্থায়ীভাবে কাজ করে আসছেন। তিনি প্রতিদিন বেলা দুইটা পর্যন্ত কাজ করতেন। বিকেল থেকে তিনি হাসপাতালের জরুরি আউটডোরে রোগীদের ট্রলিতে করে পৌঁছে দেওয়াসহ দালালির কাজ করতেন। এ কাজের মাধ্যমে তিনি রোগীদের কাছে থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করতেন।

এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসাদুল স্বীকার করেছেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাশের মুখ থেকে তিনি অক্সিজেন মাস্ক বিচ্ছিন্ন করেছেন। ঘটনার পর তিনি পালিয়ে বগুড়া থেকে নওগাঁ যান, পরে ঢাকায় আসেন। এরপর ঢাকা থেকে তিনি চট্টগ্রামে গিয়ে আত্মগোপন করার পরিকল্পনা করছিলেন।

র‍্যাব জানিয়েছে, হাসপাতালে মারা যাওয়া বিকাশ গাইবান্ধার একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি সে স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করত। ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিকাশ বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়। তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে বিকাশকে বগুড়ায় নেওয়া হয়।

ওইদিন রাত ১০টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পৌঁছায় সে। এ সময় আসাদুল দালালি বাবদ ৫০০ টাকা দাবি করেন। পরবর্তী সময়ে ২০০ টাকায় রাজি হন। বিকাশকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক রোগীকে জরুরি সেবা দিয়ে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন। আসাদুল রোগীকে সার্জারি ওয়ার্ডে নিয়ে যান। শয্যা ফাঁকা না থাকায় তাকে মেঝেতে শয্যা দেন তিনি।

এরপর বিকাশের অভিভাবকের কাছে টাকা চান আসাদুল। অভিভাবকের কাছে ১৫০ টাকা ছিল। তাই তিনি আসাদুলকে ১৫০ টাকা দেন। তখন আসাদুল আরও টাকা দাবি করেন। বিকাশের অভিভাবক বলেন, তার কাছে আর টাকা নেই। তখন আসাদুল উত্তেজিত হয়ে বিকাশের মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেন, গালাগালি করেন। এরপরই শ্বাসকষ্টের কারণে বিকাশ মারা যায়।

র‍্যাব জানায়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রচারিত হওয়ার পর তারা আসাদুলকে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ভোরে র‍্যাব-১২ এর অভিযানে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে আসাদুলকে গ্রেপ্তার হন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!