চট্টগ্রামে লিয়াকতসহ ৩ পুলিশ ও চার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা

এসপি বাবুলসহ দুই ওসি তালিকা থেকে বাদ

ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা আদায় এবং ১৩টি মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ কর্মকর্তা ও চার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আদালত ছয় পুলিশকে বাদ দিয়ে তিন পুলিশ ও তাদের চার সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের ডিসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

বুধবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মামলাটি দায়ের করেন।

অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তা হলেন লিয়াকত আলী, এসআই আব্দুল হান্নান ও এসআই মো. নজরুল ইসলাম। ঘটনার সময় তারা চট্টগ্রাম নগর পুলিশে কর্মরত থাকলেও লিয়াকত সম্প্রতি কক্সবাজারে সেনা বাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় চাকরিচ্যূত হয়ে কারাগারে আছেন। আব্দুল হান্নান কুমিল্লার দাউদকান্দি থানায় আর নজরুল ইসলাম সাতকানিয়া থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত আছেন।

অভিযুক্ত অন্য চার আসামি হলেন এস এম সাহাবুদ্দীন, বিষ্ণুপদ পালিত, কাজল কান্তি বৈদ্য ও জিয়াউর রহমান। তাঁরা চারজনই চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী।

মামলার আরজিতে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার, সদরঘাট থানার সাবেক ওসি (বর্তমানে খুলশী থানা) প্রণব চৌধুরী, উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তার, পিবিআইয়ের তিন পরিদর্শক সন্তোষ নাথ, কামরুল ইসলাম এবং তালাত মাহমুদকেও আসামি করা হয়। আদালত এই ছয়জন ছাড়া অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন। তবে তদন্তে যদি তাদের কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে অপরাধ আমলে নেবেন আদালত।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এসএম নাসিরউদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত তিন পুলিশ সদস্য ও চার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নগর গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।

বাদী জসিম উদ্দিনের আইনজীবী জুয়েল দাশ বলেন, আমরা নয় পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের চার সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে সাত জনের বিরুদ্ধে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপকমিশনারকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদি জসিম উদ্দিন জানান, ২০১৪ সালে ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষের করা মামলার প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য লিয়াকত আলী তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। ওই সময় লিয়াকত নগর ডিবিতে এসআই পদে কর্মরত ছিলেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে ৪ নম্বর আসামি শাহাবুদ্দিনের খালাতো বোন মরিয়ম বেগমকে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় তিনি জামিনে হলে লিয়াকত তাকে গাড়িতে তুলে পুরো শহর ঘুরিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে আড়াই লাখ টাকা নেন।

লিয়াকতের সঙ্গে অন্য আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্রসফায়ারের হুমকি দেন বলে দাবি জসিমের। একে একে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৩টি মিথ্যা মামলা দায়ের হয়, যার নেপথ্যে লিয়াকত ছিলেন বলে তার দাবি। ইতোমধ্যে তিনি ১০টি মামলা থেকে খালাস পান, বাকি তিনটি চলছে। মামলায় জর্জরিত জসিম চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য বর্তমানে নিদারুণ অর্থকষ্টে আছেন বলে জানান।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!