চট্টগ্রামে রেলের ২৬ একর জায়গা নিয়ে আরেক নাটক, সেই সিআইকে আবার নোটিশ

চট্টগ্রামের হালিশহরের রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির (আরটিএ) ২৬ একর জমি বেদখল হওয়ার ঘটনায় আবারও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) চিফ ইন্সপেক্টর (সিআই) আমান উল্লাহ আমনকে। অথচ জমি বেদখলের যে দিনক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছিল চিঠিতে, ওই সময়ে আমানের জায়গায় দায়িত্বে ছিলেন মুজিবুল হক।

গত ১০ জানুয়ারি আরএনবি চট্টগ্রাম বিভাগের কমান্ড্যান্ট মোহাম্মদ রেজওয়ান-উর-রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আমানকে ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়। আমান বর্তমানে রেলস্টেশনে সিআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, আমান উল্লাহ আমান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনী চৌকি, চট্টগ্রামের চিফ ইন্সপেক্টর পদে ২০২০ সালের ৫ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বদলি আদেশ পেয়ে একই দিন বিকেলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনী চৌকি চট্টগ্রামের সিজিপিওয়াই পদে যোগদান করেন। তার আগে নিরাপত্তা বাহিনী চৌকি, চট্টগ্রামের চিফ ইন্সপেক্টর পদে ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ৫ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন মুজিবুল হক। তার দায়িত্ব পালনকালীন ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে ৩০ মে সময়ের মধ্যে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির ভেতর থেকে অতীতে উচ্ছেদকৃত একটি প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় এসব জমি হস্তান্তর করে দেওয়া হয়। অথচ ট্রেনিং একাডেমির রেক্টর এ ঘটনায় মুজিবুল হককে দায়ী না করে অভিযোগ তোলেন ২০২০ সালের ৫ জুন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনী চৌকি চট্টগ্রামের সিজিপিওয়াই পদে যোগদান করা আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে।

এরপর ২০২১ সালের ২ নভেম্বর রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির রেক্টর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর ট্রেনিং একাডেমির ৯ নম্বর পরিত্যক্ত বাংলো এলাকায় জলাশয়, বাগান ও ভূমি একটি প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে ২৫ দশমিক ৯০ একর জমি লিজ দেওয়া হয়। চুক্তির শর্তভঙ্গ ও সরকারি জমি অবৈধপন্থায় ব্যবহারের কারণে এই লিজ বাতিল করা হয়। রেল মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কমিটিই এই লিজ বাতিল ও প্রতিষ্ঠানটিকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত দেন। ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর এই প্রতিষ্ঠানটিকে উচ্ছেদ করে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি এই ভূমি হেফাজতে নেয়। এই ভূমির নিরাপত্তায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ছয় সদস্য মোতায়েন করতে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মৌখিক আদেশ দেন।

চিঠিতে ট্রেনিং একাডেমির রেক্টর মনির হোসেন চৌধুরী আরও উল্লেখ করেন, ‘২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে ৩০ মের মধ্যে লকডাউন চলাকালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনী চৌকি চট্টগ্রামের তৎকালীন চিফ ইন্সপেক্টর আমান উল্লাহ আমান এই ভূমি উচ্ছেদকৃত প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় হস্তান্তর করে। যা সরকারি স্বার্থ উপেক্ষা ও অর্পিত দায়িত্ব অবজ্ঞার শামিল।’

এই অভিযোগ তুলে তিনি তদন্তসাপেক্ষে আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলামকে।

২০২১ সালের ২ নভেম্বরের এই চিঠির প্রেক্ষিতে যাচাই ছাড়াই ১০ নভেম্বর চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এতে আহ্বায়ক করা হয় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ঢাকার এসিকে। এছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও হালিশহরের সিগন্যাল ট্রেনিং অফিসারকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়।

এরপর চট্টগ্রাম রেলের সহকারী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. শহীদুজ্জামান স্বাক্ষরিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে আমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়নি বলে জানানো হয়।

এর আগে ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘চট্টগ্রামে রেলের ২৬ একর জমি বেহাতের ঘটনায় একের দায় পড়েছে অন্যের ঘাড়ে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর আরটিএর রেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) মনির হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠি দিয়ে তারিখ পরিবর্তন করেন। সেই চিঠিতে বলা হয়, আমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের যে চিঠি (২০২১ সালের ২ নভেম্বর) দেওয়া হয়েছে সেটিতে ৩য় প্যারায় ‘২৫.০৩.২০২০ তারিখ হতে ৩০.০৫.২০২০ তারিখ পর্যন্ত’ এর স্থলে ‘মার্চ/এপ্রিল ২০২১’ প্রতিস্থাপিত করা হলো।

অথচ ওই জায়গা লিজ নেওয়া প্রতিষ্ঠান সিলভার জুবিলী লিমিটেড ২০১৯ সালে দুটি রিট পিটিশন (নম্বর-৪০১২/২০১৯ ও ১১৪৬৪/২০১৯) উচ্চ আদালতে দাখিল করলে আদালত ওই জায়গার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। যা এখনও পর্যন্ত বলবৎ আছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে কোনো পক্ষই ওই জায়গায় কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না।

এই বিষয়ে আরএনবির সিআই আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘কিছুদিন পর আমার পদোন্নতির পরীক্ষা। তাতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখতেই এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি কাগজপত্র তলব করে যাচাই করবো। নির্দোষ হলে অবশ্যই তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে আর যদি দোষের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে শাস্তি পাবেন।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!