চট্টগ্রামে যৌননিপীড়ক প্রধান শিক্ষককে ছাত্রীদের মার খেয়ে স্কুল ছাড়তে হল এবার

বালিকা স্কুলে ১ যুগ ধরে যৌন হয়রানির জাল ছড়িয়ে ছিলেন

ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে বার বার আলোচনায় আসেন চট্টগ্রাম নগরীর কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। এবার সেই একই অভিযোগে নিজ প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের হাতে মার খেলেন অভিযুক্ত এই শিক্ষক।

চট্টগ্রামে যৌননিপীড়ক প্রধান শিক্ষককে ছাত্রীদের মার খেয়ে স্কুল ছাড়তে হল এবার 1

রোববার (১ জানুয়ারি) সকালে কাপাসগোলা স্কুলের নিজ কক্ষেই এমন ঘটনার সম্মুখীন হন প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন।

নিজ কক্ষেই প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীরা বোতল-জুতা-কাগজ ছুঁড়ে মারে।
নিজ কক্ষেই প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীরা বোতল-জুতা-কাগজ ছুঁড়ে মারে।

প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এ নতুন নয়। ৬ বছর আগে— ২০১৩ সালে দ্বাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে হয়েছিলেন বরখাস্ত। ৫ বছর পর একই বিদ্যালয়ে ফের প্রধান শিক্ষক ফিরে আসার সুবাদে এবং চসিকের ওই সময়কার প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়ার সহপাঠী পরিচয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, ছাত্রীরা তো বটেই, এমনকি মহিলা শিক্ষকরা সঙ্গী ছাড়া প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকতে ভয় পান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক— এই চেহারার আড়ালে বারবারই ধামাচাপা পড়ে যায় যৌন হয়রানির সবগুলো ঘটনা। ২০১৯ সালে বিদ্যালয়ের প্রাতঃ বিভাগের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে আড়ালে অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেন। কিন্তু বরাবরের মতোই প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন পার পেয়ে যান সবাইকে ম্যানেজ করে।

এ নিয়ে ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

এদিকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে রোববার (১ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার আক্ষরিত এক আদেশে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকে কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দক্ষিণ পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। অন্যদিকে হালিশহর আহমদ মিয়া সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রোমা বড়ুয়াকে কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক করা হয়েছে।

জানাযায়, সম্প্রতি কাপাসগোলা স্কুলের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এই শিক্ষকের বিচার ও স্কুল থেকে প্রত্যাহারের দাবি করে আসছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া ‘বন্ধু’ হওয়ায় তেমন কোনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি অভিযুক্ত শিক্ষক আলাউদ্দিনকে।

জানা গেছে, সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান ছাত্রীদের নানাভাবে যৌন হয়রানি ও আপত্তিকর প্রস্তাবের প্রতিবাদে আন্দোলন করে আসছিল স্কুলটির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার (১ জানুয়ারি) স্কুল ফটকে মানববন্ধনের আয়োজন করে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও দুর্ব্যবহারসহ সুনির্দিষ্ট একাধিক অভিযোগ তোলেন।

বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রীরাও বর্তমান ছাত্রীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে কর্মসূচিতে অংশ নেন।

অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিক্ষুব্ধ ছাত্রী ও অভিভাবকরা মিছিল নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় প্রধান শিক্ষক তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রীরা। এ সময় প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীরা বোতল-জুতা-কাগজ ছুঁড়ে মারেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

তবে বরাবরের মতো নিজেকে ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ বলে দাবি করেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।

গত ১০ বছর ধরে একাধিকবার ছাত্রীদের যৌন হয়রানীর অভিযোগ ওঠে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। প্রথমদিকে এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও সবসময়ই পার পেয়ে গেছেন আলাউদ্দিন। পরবর্তীতে আরও এক শিক্ষার্থীকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেওয়ার কারণে ১০ মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত হলেও পুনরায় চাকরি ফিরে পান। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া ‘বন্ধু’ হওয়ায় তেমন কোনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি অভিযুক্ত শিক্ষক আলাউদ্দিনকে— এমন অভিযোগ রয়েছে শুরু থেকেই।

বিএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!