চট্টগ্রামে যেমন হবে চীনের স্মার্ট সিটি, পতেঙ্গা থেকে মিরসরাই ৬০ বর্গকিলোমিটার

সাগর ভরাট হবে বালু ও চট্টগ্রাম শহরের ময়লা জমিয়ে

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে মিরসরাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বুকে ৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ‘স্মার্ট সিটি’ গড়ে তুলতে চায় চীন। চীনের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এই ‘স্মার্ট সিটি’র বিস্তারিত রূপরেখা জমা দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে। গত বছরের নভেম্বরে দেওয়া ওই প্রস্তাবে সাগরের বালু তুলে ও সিটি কর্পোরেশনের ময়লা-আবর্জনা জমিয়ে স্মার্ট সিটি তৈরির কথা জানানো হয়। এখন এই প্রস্তাব নিয়ে ভাবছে সরকারও। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটিকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে আগেই। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও মিলেছে সবুজ সংকেত। সেই বৈঠকে চট্টগ্রামে চীনা ‘স্মার্ট সিটি’ গড়ে তোলার প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

শ্রীলংকায় চীনের নির্মাণাধীন স্মার্ট সিটির জন্য সমুদ্র ভরাট করা হচ্ছে এভাবে।
শ্রীলংকায় চীনের নির্মাণাধীন স্মার্ট সিটির জন্য সমুদ্র ভরাট করা হচ্ছে এভাবে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এই প্রকল্পের নাম দিয়েছে ‘সি-সাইড বে ভিউ স্মার্ট সিটি’ (পতেঙ্গা থেকে মিরসরাই)। এই ‘স্মার্ট সিটি’ গড়ে তোলার বিনিময়ে চীনের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের একটি জোট চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করে দেবে নিজেদের খরচেই। মেট্রোরেলের টাকা তারা প্রস্তাবিত ‘স্মার্ট সিটি’ থেকে পুষিয়ে নেবে।

মূলত চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বে-টার্মিনাল থেকে মিরসরাই পর্যন্ত ৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাগরের ভেতরে জেগে ওঠা চরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে এই স্মার্ট সিটি। আর এটি পুরোপুরিই গড়ে তোলা হবে সাগর থেকে জমি পুনরুদ্ধার (রিক্লেইম) করে এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার ময়লা-আবর্জনা জমিয়ে। ফলে এজন্য আলাদা করে কোনো ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না।

কেমন হবে স্মার্ট শহর?

স্মার্ট সিটি নিয়ে চীনের রয়েছে ভালো অভিজ্ঞতা। নিজেদের দেশেই অন্তত ৫০০ স্মার্ট সিটি তৈরি করে নিয়েছে চীন। দেশের বাইরে শ্রীলংকার কলম্বোতেও চীন একটি উপশহর তৈরি করছে। অন্যদিকে আরব আমিরাত-সিঙ্গাপুরসহ বহু দেশে সাগরের বুক থেকে ভূমি উদ্ধার করে বানানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন উপশহর।

সচরাচর স্মার্ট সিটি এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে সেখানে অগোছালো কিছু করার সুযোগ না থাকে। সবাইকে মানতে হয় যথাযথ নিয়ম। পরিবহন আইন ভাঙলে যেমন চালকদের ক্রেডিট সিস্টেম থাকে, তেমনি প্রতিটি আইন ভঙ্গের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্রেডিট কাটা যাবে। ক্রেডিট শূন্যে নেমে এলে চালক স্বয়ংক্রিয়ভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স হারায় এবং হাজার চালাকি করেও আর লাইসেন্স পায় না। ঠিক সেভাবে স্মার্ট সিটিতে বসবাসকারী নাগরিকদেরও থাকবে সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেম। প্রতিটি আইন অমান্য করার জন্য কাটা যাবে ক্রেডিট। যত আইন লঙ্ঘন হবে, ক্রেডিটও কমবে থাকবে ততো তাড়াতাড়ি। এভাবে কমতে কমতে কারও ক্রেডিট একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত নেমে এলে তার নাগরিক সুযোগ-সুবিধাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকুচিত হয়ে যাবে।

সবমিলিয়ে স্মার্ট সিটিতে মানুষসহ প্রতিটি জিনিসের দিকেই তাক করা থাকবে অসংখ্য অদৃশ্য চোখ। ফলে এখানে কাউকে ফাঁকি দেওয়া সহজ হবে না। কোনো আইন ভঙ্গ করলে সঙ্গে সঙ্গে হয়তো কোনো সতর্কীকরণ নোটিশ যাবে না, কিন্তু সেন্ট্রাল ডেটাবেজ থেকে ক্রেডিট কমে যাবে।

কী লাভ চট্টগ্রামের?

প্রস্তাবিত স্মার্ট সিটিতে বাংলাদেশের অংশ কতটুকু থাকবে আর চীনের কতটুকু থাকবে— চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দেওয়া প্রস্তাবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু উল্লেখ করা না হলেও চীন চাইছে, স্মার্ট সিটির দায়িত্ব তাদের হাতে থাকবে। তবে প্লট বিক্রির টাকা তারা সরকারের সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে ভাগাভাগি করবে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপস্থাপন করা রূপরেখায় বলা হয়েছে, স্মার্ট সিটির প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এই প্রকল্প ১ দশমিক ১ থেকে ৩ শতাংশ অবদান রাখবে।

কোন্ ৪ কোম্পানি?

চীনের কোন্ চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মেট্রোরেল গড়ে দেওয়ার বিনিময়ে চট্টগ্রামে উপশহর গড়তে চায়, তাদের নাম এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করেনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। তবে গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসিএল) নামের প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগ্রহের কথা জানায়। এই প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রায়ত্ত ওই চার প্রতিষ্ঠানের কনসোর্টিয়ামে আছে বলে সিডিএ সূত্র জানিয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!