চট্টগ্রামে যেভাবে পাবেন ই-পাসপোর্ট, এমআরপি আর হবে না

প্রচলিত মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) যুগ শেষ হতে চললো। বিশ্বের সব উন্নত দেশেই এখন ই-পাসপোর্ট চলছে। এতে সুবিধাও অনেক। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমে ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। কোনো গরমিল থাকলে জ্বলে উঠবে লালবাতি। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গে।

চট্টগ্রামে প্রথম ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয় মনসুরাবাদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে। দেশে করোনাভাইরাস হানা দেওয়ার পর ২৩ মার্চ শুরু হওয়া সেই কার্যক্রম খুব একটা গতি পায়নি। এখন সরকারি অফিসগুলো খুলে দেওয়ার পর চট্টগ্রামেও ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম আবার গতি পেতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই রোববার (২৮ জুন) থেকে পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেও ই-পাসপোর্টের আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছে।

রোববার সকালে একটি আবেদন জমা নেওয়ার মাধ্যমে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের উপ-পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ নুরুল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মাসুম হাসানও।

ঢাকা বিমানবন্দরের ই-গেট— ই-পাসপোর্টধারীরা এই ই-গেট পার হলেই ইমিগ্রেশন শেষ।
ঢাকা বিমানবন্দরের ই-গেট— ই-পাসপোর্টধারীরা এই ই-গেট পার হলেই ইমিগ্রেশন শেষ।

ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও নতুন করে প্রচলিত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেওয়া হবে না। নতুন সব আবেদনকারীকেই দেওয়া হবে ই-পাসপোর্ট। তবে প্রচলিত এমআরপি পাসপোর্টগুলো মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলবে। বর্তমানের এমআরপি পাসপোর্টধারীরা যখন নবায়ন করতে যাবেন, তখন তাদেরকেও ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সব এমআরপি পাসপোর্ট তুলে নেওয়া হবে।

কিভাবে আবেদন করবেন
ই-পাসপোর্ট আবেদন দুটি প্রক্রিয়ায় করা যায়। অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে হলে প্রথমে (https://epassport.gov.bd/) এই ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে। ওয়েবসাইটে ঢুকে ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনে (Directly to online application) ক্লিক করতে হবে। অথবা ক্লিক করুন এই ঠিকানায়— http://172.16.130.173:3000/onboarding । অনলাইন পেমেন্ট অপশন নির্বাচন করুন, এতে আপনার সময় সাশ্রয় হবে।

অন্যদিকে অফলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্টের পিডিএফ আবেদন ফরম ডাউনলোড করার পর কম্পিউটারে সেটা সরাসরি পূরণ করতে হবে। পিডিএফ এডিটরের সহায়তায় ফরম পূরণ করে প্রিন্ট করুন। পূরণ করা ফরম প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ (যেমন জাতীয় পরিচয় পত্র, পুরাতন পাসপোর্ট (যদি থাকে), প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রমাণ) পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। মনে রাখবেন ডাউনলোড করা আবেদন অবশ্যই কম্পিউটারে পূরণ করতে হবে। হাতে লেখা কোন আবেদন গৃহীত হবে না।

এরপরের ধাপে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করতে হবে। তালিকাভুক্তির জন্য পাসপোর্টের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করুন । আপনি যখন অনলাইন আবেদন করবেন তখন ফি পরিশোধের জন্য অনেক বিকল্প পাবেন (যেমন : ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ ও অন্যান্য) এছাড়া নির্ধারিত ব্যাংকে ফি পরিশোধের সুযোগ রয়েছে । যখন ব্যাংকে ফি পরিশোধ করবেন তখন পাসপোর্ট আবেদনপত্র সাথে রাখবেন।

এবার ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন। ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়েছেন কিনা নিশ্চিত হোন। কমপক্ষে প্রিন্টেড আবেদন, পেমেন্ট স্লিপ, জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম সনদ, সর্বশেষ পুরোনা পাসপোর্ট (যদি থাকে) এবং অন্যান্য কাগজপত্র (যেটি আপনি সহায়ক মনে করেন) সঙ্গে রাখুন। তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিস কাগজপত্র ও ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই, আবেদনকারীর ফটো তোলা, আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশের ছবি নেওয়া এবং যথাযথভাবে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ হয়েছে কিনা সেটা যাচাই করে দেখে।

তালিকাভুক্তির পর সরবরাহকৃত ডেলিভারি স্লিপ সংরক্ষণ করুন। পাসপোর্ট সংগ্রহের সময় ডেলিভারি স্লিপ দেখানো বাধ্যতামূলক।

এবার নির্দিষ্ট তারিখে পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করার পালা। আবেদনকারীকে সশরীরে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। পাসপোর্ট সংগ্রহের সময় আবেদনকারীর ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে এনরোলমেন্টের ফিঙ্গার প্রিন্টের মিল আছে কিনা পরীক্ষা করা হবে। পাসপোর্ট সংগ্রহের সময় ডেলিভারি স্লিপ বা রশিদ এবং সর্বশেষ পুরানো পাসপোর্ট (যদি থাকে) সঙ্গে আনতে হবে।

তবে বিশেষ ক্ষেত্রে উপযুক্ত বাহকের কাছে পাসপোর্ট দেওয়া হতে পারে। যেমন ১১ বছরের কম বয়সী সন্তানের পিতামাতা/বৈধ অভিভাবক নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র, আবেদনকৃত পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ/রশিদ ও পূর্বের পাসপোর্ট (যদি থাকে) প্রদর্শন সাপেক্ষে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্ষমতা হস্তান্তর পত্র, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র, পুরাতন পাসপোর্ট (যদি থাকে) এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র, পুরাতন পাসপোর্ট (যদি থাকে) যাচাইসাপেক্ষে পাসপোর্ট দেওয়া হতে পারে।

ই-পাসপোর্টের ফি দেবেন কোথায়
ই-পাসপোর্ট আবেদন অনলাইনে দাখিল করার সময়ে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করা যাবে। পাসপোর্ট ফি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব করা হবে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিসের আবেদন দাখিলের ক্ষেত্রে অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে। অনলাইন পেমেন্ট ছাড়াও ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং ঢাকা ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যাবে। সোনালী ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট দেওয়া হয় এবং এখন পর্যন্ত চালু করা অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি হলো স্টারকার্ড, ভিসা, কিউ-ক্যাশ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিকাশ ও ডিবিবিএল নেক্সাস। অনলাইনে পেমেন্ট করার জন্য আপনার ব্রাউজারের পপ-আপ ব্লকার ডিজেবল বা অক্ষম করতে হবে।

ফি কতো লাগবে?
৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট স্বাভাবিক সময়ে অর্থাৎ ২১ কার্যদিবসে পেতে হলে জমা দিতে হবে ৪ হাজার ২৫ টাকা। একই পাসপোর্ট এক্সপ্রেস ডেলিভারি অর্থাৎ ১০ কর্মদিবসে পেতে লাগবে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা এবং দুই কর্ম দিবসে পেতে হলে ৮ হাজার ৬২৫ টাকা জমা দিতে হবে।

১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট ২১ কর্ম দিবসে পেতে হলে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, ১০ কর্মদিবসে পেতে ৮ হাজার ৫০ টাকা এবং দুই কর্মদিবসে পেতে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা জমা দিতে হবে।

অন্যদিকে ৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার পাসপোর্ট ২১ দিনে পেতে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, ১০ কর্মদিবসে পেতে ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং দুই কর্মদিবসে পেতে ১২ হাজার ৭৫ টাকা ফি জমা দিতে হবে।

একই সংখ্যক পাতার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট ২১ কর্ম দিবসে পেতে ৮ হাজার ৫০ টাকা, ১০ কর্মদিবসে পেতে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা এবং সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির মাধ্যমে মাত্র দুই কর্মদিবসে পেতে হলে ফি দিতে হবে ১৩ হাজার ৮০০ টাকা।

যেসব বিষয় জেনে রাখা দরকার
ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে অথবা পিডিএফ ফরমেট ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। এতে কোনো ছবি এবং কোনো ধরনের কাগজপত্র সত্যায়নের প্রয়োজন নেই। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদপত্রসহ বাবা-মায়ের এনআইডির কপি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় হাতের ১০ আঙুলের ছাপ, ছবি ও চোখের আইরিশ ফিচার নেওয়া হবে।

ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে। অতি জরুরি ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্ট করার জন্য প্রি-পুলিশ ভেরিফিকেশন নিজ উদ্যোগে করে নিয়ে যেতে হবে। প্রচলিত ব্যবস্থার মতো ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ভিসার বিষয়টি একই থাকবে। ভিসা কর্তৃপক্ষ বা দূতাবাসগুলো এই পিকেডি ব্যবহার করে আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে নিতে পারবে। এরপর বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার, সিল দিতে পারবে বা বাতিল করে দিতে পারবে।

আবেদনের অবস্থা কিভাবে জানবেন
ই-পাসপোর্ট পোর্টালে ‘স্ট্যাটাস চেক’ করা যাবে। জন্মতারিখ ও আবেদনের ক্রমিক সংখ্যা দিয়ে সার্চ অপশনে ক্লিক করতে হবে। আপনার অনলাইন পোর্টাল অ্যাকাউন্ট থেকে আপনার সব আবেদনের অবস্থা দেখতে পারেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!