চট্টগ্রামে যুবলীগ চেয়ারম্যানের ‘ক্যাশিয়ার’ কে?

ক্যাসিনো কাণ্ডের পর প্রতাপশালী রাজনীতিক আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এখন অনেকটাই কোণঠাসা। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের ব্যাংক হিসাব জব্দের পাশাপাশি তার দেশত্যাগেও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এমনই সময়ে এবার আলোচনায় এসেছে চট্টগ্রামের রাউজানের সন্তান ওমর ফারুকের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের এক যুবলীগ নেতার নাম।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য নওশাদ মাহমুদ রানার সাম্প্রতিক দেওয়া একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকজুড়ে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, ওমর ফারুক চৌধুরীর ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করতেন চট্টগ্রামের যুবলীগের এক নেতা। তার মাধ্যমেই কমিটি বাণিজ্য থেকে শুরু করে টেন্ডার-তদবিরসহ সব লেনদেনই করতেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।

যুবলীগের সাবেক সদস্য নওশাদ মাহমুদ রানা স্পষ্ট করে কারও নাম উল্লেখ না করলেও খোঁজ নিয়ে ওমর ফারুক চৌধুরীর ক্যাশিয়ার হিসেবে যার দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি যুবলীগের চট্টগ্রামের একটি সাংগঠনিক ইউনিটের শীর্ষ নেতা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি প্রথমবারের মত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। মূলত তার মাধ্যমেই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগ, মহানগর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি গঠিত হয়েছে এমন অভিযোগ বেশ কয়েকজন যুবলীগ নেতার।

২০১৩ সালে মহানগর কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়কসহ বিভিন্ন পদে আসতে প্রায় দুই কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন পেতেও ওই ক্যাশিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা সংশ্লিষ্ট মহল জ্ঞাত।

যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত কথিত যুবলীগ নেতা জি কে শামীম চট্টগ্রামে যেসব প্রকল্পের টেন্ডার পেয়েছিলেন তার সবকটিতেই ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রভাব ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সেখানেও চেয়ারম্যানের হয়ে কাজ করেছেন ক্যাশিয়ার-খ্যাত ওই যুবলীগ নেতা।

এছাড়াও কথিত আছে, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চুর সঙ্গে চেয়ারম্যানের সখ্যের কারণে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখনও স্বপদে বহাল রাখা হয়েছে। এমনকি নগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা আলতাফ হোসেন বাচ্চুকে নগর যুবলীগের কমিটি গঠনের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বও দেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। অন্যদিকে, চেয়ারম্যানের সঙ্গে সখ্য থাকার কারণে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য হয়েও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদকের পদে বসানো হয়েছে জাফর আলমকে।

এমনকি নগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে খুন, চাঁদাবাজির মামলার আসামিদেরও অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে স্থান দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে চাহিদামত টাকা না দেওয়ায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য নওশাদ মাহমুদ রানাকে কোনও পদে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ তার।

তিনি বলেন, ‘আমি শেখ সেলিমের কমিটিতে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটিতে ছিলাম। নানক-আজম কমিটিতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম। কিন্তু গত আহ্বায়ক কমিটিতে কোনও পদে আমাকে রাখা হয়নি। তার কারণ হচ্ছে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে ক্যাশিয়ারখ্যাত ওই যুবলীগ নেতার দাবিকৃত ৩০ লাখ টাকা না দেওয়াতে পদ পাইনি। তবে যারা কোটি টাকা দিয়েছে তারা পদ পেয়েছেন কোনও বাছবিচার ছাড়াই।

তবে ওই ক্যাশিয়ারের নাম সরাসরি বলতে রাজি নন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটির সাবেক এ সহ-সম্পাদক নওশাদ মাহমুদ রানা।

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে চাউর আছে, ১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া ওমর ফারুক চৌধুরী সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম জেলা বিড়ি শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এইচএম এরশাদ ক্ষমতায় আসার সময় ওমর ফারুক শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাতীয় পার্টির প্রয়াত নেতা নাজিউর রহমান মঞ্জু এরশাদের মন্ত্রিসভার সদস্য হলে ওমর ফারুক দলবদল করেন। জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন যুব সংহতির চট্টগ্রাম উত্তর জেলার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ওমর ফারুক চৌধুরী নাজিউর রহমানের ভায়রা ভাই এবং শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভগ্নিপতি। পরে কিছুদিন নিরব থাকলেও ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলে তিনি সদস্য হন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি উত্তর জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ হন।

এরপর মুরব্বি সংগঠন আওয়ামী লীগ ছেড়ে ২০০৩ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন ওমর ফারুক চৌধুরী। এর আগের কমিটিতে কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আর ২০১২ সালে হন চেয়ারম্যান। এরপর থেকে যুবলীগে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তার প্রভাবে চট্টগ্রামে যুবলীগের অনেকেই টেন্ডার বাণিজ্য, খুনসহ নানা অপরাধে ছিল বেপরোয়া—বিভিন্ন মহলে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।। চট্টগ্রামে আসলে তাকে রাজনৈতিক প্রটোকল দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন সুবিধাভোগে নেতা-কর্মীরা।

তবে এ প্রসঙ্গে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ওমর ফারুক চৌধুরী ফোন ধরেননি।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!