চট্টগ্রামে যুবলীগের সম্মেলনে বেফাঁস মন্তব্য বদির, সোহাগ গিয়ে থামালেন

দল নিয়ে বেফাঁস ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম। তাকে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করতে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ নির্দেশ দিলেও তিনি থামেননি। পরে আবারও বক্তব্য শেষ করতে সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ অনুরোধ করলেও বদি বক্তব্য থামাননি। এমন আচরণের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

শনিবার (২৮ মে) পটিয়ার আদর্শ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনে এই ঘটনা ঘটে।

এদিকে বদিউল আলমের এই আচরণ ‘পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক’ বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদরা। সম্মেলনে ঝামেলা পাকিয়ে পটিয়াকে বিতর্কিত করতে বদি এমনটাই করছে বলে অভিমত তাদের।

সকাল ১১টায় শুরু হওয়া সম্মেলনে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলমকে আহ্বান জানান সঞ্চালক পার্থ সারথি চৌধুরী।

এ সময় তিনি নিজের ত্যাগ-তিতিক্ষার ফিরিস্তি তুলে ধরে আত্মগীতি শুরু করেন। দীর্ঘ সময় বক্তব্য দিতে গিয়ে মুখ ফসকে বেশ কিছু বেফাঁস মন্তব্য করেন বদি। দেলোয়ার হোসেন সাঈদী বিরোধী আন্দোলনে তিনি এবং আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ছাড়া কোনো মন্ত্রী-এমপিকে পাশে না পাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন বদি।

এ সময় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় না থাকায় পটিয়ার এমপির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বদি বলেন, ‘আপনি যখন এসেছিলেন তখন আওয়ামী লীগের অফিস ছিল। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কোনো অফিস নাই, ঠিকানা নাই। আমি এমপিকে বলতে চাই, আমার দল আওয়ামী লীগ আজকে জামায়াত-বিএনপি, জাতীয় পার্টি দখল করেছে। হাইব্রিডমুক্ত আওয়ামী লীগ আমরা চাই।’

এ সময় একবার মৌখিক ও একবার লিখিতভাবে বদিকে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশ দিলেও তিনি তা উপেক্ষা করে বক্তব্য অব্যাহত রাখেন। পরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ তার আসন থেকে উঠে এসে বদিকে থামতে বলেন।

এ সময় সোহাগ বলেন, ‘অনেক হয়েছে এবার থামুন।’ সোহাগের অনুরোধের পরও বদিউল আলম তার বক্তব্য চালিয়ে যান। পরে বিরক্ত হয়ে সাইফুর রহমান সোহাগ দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

সম্মেলনের সঞ্চালক পার্থ সারথি চৌধুরী বক্তব্য ছোট করার জন্য যুবলীগ চেয়ারম্যানের নির্দেশের কথা বদিকে জানালে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান বলছে? আমাকে বলতে দিন প্লিজ। একটু বলতে দিন।’ একথা বলেই তিনি তার বক্তব্য চালিয়ে যান। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য অতিথিদেরও বিরক্ত হতে দেখা যায়।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে বদি নিজেকে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র বলে জানিয়ে ডায়াসে সজোরে থাপ্পড় মারেন। এ সময় স্লোগান দেওয়া কর্মীদের ওপর ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘স্টপ, ডোন্ট সিনক্রিয়েট হেয়ার।’

এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘যুবলীগের সম্মেলনে তিনি (বদিউল আলম) আওয়ামী লীগ নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন। মূলত পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে ঝামেলা সৃষ্টি করার জন্য একের পর এক বেঁফাস মন্তব্য করেছেন। কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের কাছে পটিয়ার রাজনীতিকে বিতর্কিত করতে এসব করা হয়েছে। সে ষড়যন্ত্রে পা দেয়নি মানুষ।’

তিনি বলেন, ‘পটিয়ার আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গসংগঠনের রাজনীতি হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।’

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।

সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল। বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি।

বিশেষ বক্তা ছিলেন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ।

আরএম/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!