চট্টগ্রামে মন্ত্রীপুত্রের বাড়ির চুলা জালিয়াতির মামলায় জামিন হয়নি সার্ভেয়ারের

চট্টগ্রামে গ্যাসের ২২টি দ্বৈত চুলা বরাদ্দে জালিয়াতি ও দুর্নীতি মামলার আসামি সার্ভেয়ার দিদারুল আলমের জামিন দেননি আদালত। গত ২১ জুন গ্রেপ্তার হয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন চট্টগ্রাম কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) এই সার্ভেয়ার।

সোমবার (২৬ জুলাই) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের ভার্চুয়াল আদালত এ আদেশ দেন।

গত ১০ জুন হালিশহরের বাসিন্দা নুরজাহানের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তার নামে বরাদ্দ থাকা চুলার মধ্য থেকে ১২টি চুলাসহ মোট ২২টি দ্বৈত চুলা চট্টগ্রাম নগরীর চাঁন্দগাও এলাকার বাসিন্দা মুজিবুর রহমানের নামে বরাদ্দ দিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এই পুরো অনিয়মটিই করা হয়েছে ভুয়া আবেদনপত্র ও ভুয়া নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ভুয়া অঙ্গীকারনামা ও জাল স্বাক্ষর দিয়ে।

যার নামে ২২টি দ্বৈত চুলা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তিনি সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমান।

এ ঘটনায় দুদক সম্মিলিত-১ এর উপ-সহকারী কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় কেজিডিসিএলের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দুদকের মামলা দায়েরের পর নগরীর চান্দগাঁও থানার সানোয়ারা আবাসিক এলাকার ওই বাড়িতে ১১ ও ১২ জুন টানা দুদিন অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

এর আগে গত ৯ জুন নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গ্যাস–সংযোগ স্থানান্তর ও নতুন সংযোগ দেয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামে দুদক একটি মামলা দায়ের করেন দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১–এর উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। ওই মামলায় মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিসেস) মো. সারওয়ার হোসেন, দক্ষিণ জোনের টেকনিশিয়ান (সার্ভেয়ার) মো. দিদারুল আলম, সাবেক ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ও গ্রাহক মুজিবুর রহমান।

মামলা দায়েরের পর ওইদিনই কেজিডিসিএলের বর্তমান মহাব্যবস্থাপক মো. সারওয়ার হোসেন, টেকনিশিয়ান দিদারুল আলম এবং সাবেক ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে দুদক। তারা বর্তমানে কারাগারে আছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি আদেশে আবাসিক খাতে নতুন ও বর্ধিত চুলায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। সেই সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে আসামিরা একে অপরের যোগসাজশে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধমূলক অসদাচরণের মাধ্যমে নুরজাহান বেগম নামে হালিশহরের এক আবাসিক গ্রাহকের ১২টি দ্বৈত চুলা ভিন্ন খতিয়ান ও দলিলের মালিকাধীন জায়গায় চান্দগাঁওয়ের আবাসিক ভবনে স্থানান্তর করেন।

যদিও খাতে গ্যাস বিপণন নিয়মাবলী-২০১৪ এর ৯, ৩ এ হস্তাস্তুৰ/স্থানান্তর/একত্রীকরণ প্রসঙ্গে বলা আছে, কোনো গ্রাহকের জন্য বরাদ্দকৃত শুধুমাত্র গ্যাস লোড অন্য কোন গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর কিংবা বিক্রি করা যাবে না, যৌক্তিক কোনো কারণে গ্যাস সংযোগ স্থান পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে মালিকানা অপরিবর্তিত রেখে প্রস্তাবিত স্থানে গ্যাস সংযোগ করা যাবে। আবার কোন গ্রাহক যদি স্থায়ীভাবে সংযোগ বন্ধ করার ঘোষণা দিলে গ্যাস লোড বিতরণ কোম্পানির কাছে সমর্পিত করতে হবে। অথচ অভিযুক্তরা মূল মালিক না হওয়া সত্ত্বেও আলাদা রাইজারের মাধ্যমে খতিয়ান ও দলিলের জায়গার অন্য মালিককে ২২টি গ্যাস সংযোগ প্রদান করে।

এজাহারে ঘটনার সারসংক্ষেপে বলা হয়, মৃত এম এ সালাম নামে একজন গ্রাহক তার বাড়ির আঙিনায় স্থাপিত ১৮টি দ্বৈত চুলার মধ্যে ৬টি দ্বৈত চুলা রেখে ১২টি দ্বৈত চুলা চান্দগাঁওয়ের সানোয়ার আবাসিক এলাকায় স্থানান্তরের আবেদন করেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরের ২৫ তারিখ আবাসিক খাতে স্থানান্তরে নিরুৎসাহিত করুন মর্মে আবেদনটি কেজিডিসিএলের তৎকালীন উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়-দক্ষিণ) প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন আবেদনটি ফিরিয়ে দেন।

পরে মৃত এমএ সালাম নামে ওই গ্রাহকের স্ত্রী নুরজাহান সালামের নাম ব্যবহার করে তৎকালীন ডিজিএম মো. সারওয়ার হোসেন ভুয়া আবেদনপত্র ও দলিল সৃজন করে একে অপরের যোগসাজসে জাল দলিল সৃজন করে তথ্য জরিপকারী মো. দিদারুল আলম জরিপ করে স্থানান্তরের সুপারিশ করে। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিজিএমের অবৈধ নির্দেশনায় তার নিচের কর্মকর্তাগণ মো. মুজিবুর রহমানের নামে স্থানান্তরের জন্য অনুমোদন করেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়-উত্তর) চাহিদাপত্র দেওয়ার অনুমতি দেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!