চট্টগ্রামে মধ্যবিত্তের ভিড় টিসিবি-ওএমএসের গাড়ির লাইনে, সংসার চালাতে হিমশিম মানুষ

চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকায় সরকারি খাদ্য অধিদপ্তরের ওপেন মার্কেট সেলে (ওএমএস) চাল বিক্রি শুরু হয় সকাল ১০ থেকেই। সকাল ১১টা হতেই প্রায় ২০০ লোক প্রতিজন ৫ কেজি করে চাল সংগ্রহ করেন। দেওয়া হবে আরও ২০০ জন লোককে। কিন্তু তখনও লাইনে দাঁড়ানো ছিল প্রায় ৬০০ মানুষ।

এমন চিত্র বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকালের। মাত্র দুই মেট্রিক টন বা ২০০০ কেজি চাল নিয়ে ওএমএসের গাড়ি হাজির হয়েছিল ২ নম্বর গেট কর্ণফুলী মার্কেটের সামনে। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকেন মানুষের সংখ্যা। দীর্ঘ হতে থাকে লাইন। ৩০ টাকা দরে এই চাল একজন ব্যক্তি নিতে পারবেন সর্বোচ্চ ৫ কেজি। আর প্রতিদিন দেওয়া যাবে ৪০০ জনকে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র পরিবারের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনবেলা ভাত-ডাল জুটাতে পারে না প্রায় পরিবার। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির ফলে সংসারে টান পড়েছে অনেকদিন আগে থেকেই। কাজের বিনিময়ে যে পরিমাণ টাকা আয় হয়, তারচেয়ে ব্যয়ের খাতাটা লম্বা। তাই যারা আগে কখনও ওএমএস পণ্য ক্রয়ের লাইনে দাঁড়াননি তারাও এখন লাজ-লজ্জা ফেলে দাঁড়াচ্ছেন।

আবার অনেকে মুখ বেঁধে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন, যাতে চলাচলের পথে পরিচিত কেউ তাদের চিনে না ফেলেন। শুধুমাত্র সংসারের চাকা সচল রাখতেই ১৫০ টাকায় ৫ কেজি চাল কিনতে লাইনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নারী-পুরুষ। তবে স্টক না থাকায় অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েও চাল নিতে পারছেন না।

খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন নগরীর ১৪টি পয়েন্টে ১৪টি খোলা ট্রাকের মাধ্যমে (ট্রাক সেল) ২৮ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া ১৯টি পয়েন্টে নির্ধারিত ডিলারের মাধ্যমে (দোকান সেল) ২ মেট্রিক টন চাল এবং সাড়ে ৫০০ কেজি আটা বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ক্রেতা খোলা ট্রাক থেকে ৩০ টাকা দামে ৫ কেজি চাল কিনতে পারবেন। এছাড়া ডিলারের দোকান থেকে ৩০ টাকায় ৫ কেজি চাল ও ১৮ টাকায় ৫ কেজি আটা কেনা যাবে।

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় শুরু হয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় ১৫ উপজেলার ৮০ হাজার ৬৯৪ পরিবার প্রতিমাসে প্রতিকেজি ৩০ টাকা দরে চাল পাবেন।

খবর নিয়ে আরও জানা গেছে, বাজারে বর্তমানে ৬৫ টাকার নিচে চাল পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের আমন ধানের মৌসুম চলছে কিন্তু আমনের চাল এখনও বাজারে আসেনি। নতুন ধানের চাল বাজারে আসতে আরও এক-দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এর মধ্যে চালের বাজারে চলছে হাহাকার।

২ নম্বর গেট এলাকায় সরকারি ওএমএসের চাল বিক্রির ডিলার মুকুল চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি সকালে ২ মেট্রিক টন চাল নিয়ে এসেছি। এক ঘণ্টার মধ্যে ২০০ লোককে দিয়েছি। মোট ৪০০ লোককে ৫ কেজি করে চাল দিতে পারবো। কিন্তু আমি যে পরিমাণ চাল এনেছি, তা লাইনে দাঁড়ানো এতো লোককে দেওয়া সম্ভব না। আমার কিছুই করার নেই। আমার চাল দেওয়া শেষ হয়ে গেলে এখান থেকে চলে যাবো। আমার নিজেরও ইচ্ছে করে লাইনের দাঁড়ানো সব লোককে চাল দিতে। কিন্তু আমার এ সামর্থ্য নেই।’

লাইনে দাঁড়ানো শীলা রাণী নামের ৫০ বছর বয়সী এক মহিলা বলেন, ‘আমি এবারসহ তিনদিনে তিনবার লাইনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আমি চাল পাইনি। লাইনের পেছনের দিকে দাঁড়ানোর ফলে আমার নাম আসতে আসতেই চাল শেষ হয়ে যায়।’

অপর এক গৃহিণী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জীবনে কখনও ভাবিনি ওএমএসের চাল গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে লাইনে আসতে বাধ্য হয়েছি। এখন চাল কিনতেই আয়-রোজগারে সব টাকা চলে যায়। আসলে সংসার চালাতে পারছি না। স্বামীর বেতনের টাকা দিয়ে চলে না সংসার। নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম হু হু করে বেড়েছে, কিন্তু আয়তো বাড়েনি।

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের বলেন, ‘এই কার্যক্রম তিন মাসব্যাপি চালু হয়েছিল গত ১ সেপ্টেম্বর থেকেই, চলবে নভেম্বর মাসজুড়ে। নগরীতে ১৪টি ট্রাকের মাধ্যমে ২৮ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিদিন। এছাড়া নগরীর ১৯টি পয়েন্টে ডিলার দোকান থেকে চাল ও আটা কিনতে পারবেন। একই কর্মসূচি চলছে সকল পৌরসভা ও উপজেলাগুলোতেও।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!