চট্টগ্রামে ভয়ানক ডেঙ্গু চোখ রাঙাচ্ছে করোনার আড়ালে

মারা গেছেন দেওয়ানহাটের কলেজছাত্রী ও লালখানবাজারের গৃহবধূ

করোনাভাইরাস যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে চট্টগ্রামে, ঠিক এমন সময়ে নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ভয়ানক ডেঙ্গু। দিন দিন চট্টগ্রাম নগরজুড়ে মশার অসহনীয় বংশবিস্তার। করোনাভাইরাসের ফাঁকেই আড়ালে উঁকি দিচ্ছে আরেক প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গু— সুযোগ বুঝে যা ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতি বছরই।

নগরীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। সরকারি হিসেবে গত একমাসে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে ৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন এবং অন্তত দুজনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ অনেকেই বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ছাড়াও চিকিৎসা নেন বাসায় থেকেও।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত একমাসে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭ জন। মৃত্যু হয়েছে দুজনের। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ৩০ জুলাই মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান দেওয়ানহাট সিটি করপোরেশন কলেজের এইচএসসির ছাত্রী নাফিসা জাহান হৃদি। অন্যদিকে গত ৫ জুলাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লালখানবাজার এলাকার এক গৃহবধূ।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার ও দেওয়ানহাট এলাকায় এডিস মশার লার্ভা ও পিউপির অস্তিত্ব মিলেছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদেরও বেশিরভাগই এই দুই এলাকার বাসিন্দা।

কোরবানি ঈদের পর থেকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছিটানো হচ্ছে লার্ভিসাইড ও কালো তেল।
কোরবানি ঈদের পর থেকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছিটানো হচ্ছে লার্ভিসাইড ও কালো তেল।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর ৯৯টি এলাকার ৫১টি স্পট এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ৬টিসহ মোট ৫৭টি স্পট থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ১৫টি স্পটে শতভাগ এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা বলেন, এসব লার্ভা সংগ্রহ করে কিছুদিন রাখার পরে মশার উৎপত্তি হয়। এ থেকে গবেষকরা বুঝতে পারেন, কোন্ কোন্ পজিশনে মশার লার্ভার মধ্যে এডিস মশার উপস্থিতি থাকে। গবেষণাকালে বাড়ির ফুলের টব, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পাত্র, দোকানের ব্যাটারির সেল ও টায়ার এবং রাস্তার পাশের পাইপে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা। এসব এলাকা থেকে পাওয়া লার্ভার শতভাগই ছিল এডিস মশার।

এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) থেকে শুরু করছে ৩০ দিনের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। ওয়ার্ড পর্যায়ে চলমান মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি ১০০ জনের একটি বিশেষ দল এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে বলে জানানো হয়েছে। তারা একেকদিন একেক ওয়ার্ডে স্প্রে করবে। ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডকে তিনবার করে স্প্রে করা হবে। ওয়ার্ডের কোনো এলাকা যাতে বাদ না পড়ে, সেজন্য মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি গত কোরবানি ঈদের পর থেকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছিটানো হচ্ছে লার্ভিসাইড ও কালো তেল। ১৬৪ জনের একটি দল এতে নিয়োজিত রয়েছে বলে দাবি করছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এছাড়া মশা রুখতে ফগার মেশিনের পাশাপাশি মোটরচালিত ২০টি হাইপাওয়ার স্প্রে মেশিন কিনছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কোরিয়ার তৈরি এই স্প্রে মেশিন দিয়ে হ্যান্ড মেশিনের চেয়ে কমপক্ষে ১০ গুণ বেশি স্প্রে করা যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে দেশে ২৭২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। জুলাইয়ে এসে একলাফে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার ২৮৬ জনে। অন্যদিকে আগস্টের প্রথম দুই দিনে দেশে ৫২৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে রোববার (১ আগস্ট) থেকে সোমবার (২ আগস্ট) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৮৭ জন। চলতি বছর এটি একদিনে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের রেকর্ড।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!