চট্টগ্রামে ভূমিমন্ত্রীর এপিএস প্রতীক বরাদ্দের আগেই ভোটের প্রচারে

‘উদ্দেশ্য ছিল মন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটা সালাম পৌঁছে দেওয়া’

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর প্রতীক বরাদ্দের আগেই নির্বাচনী প্রচারণা সভা করায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠেছে ভূমিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিবের (এপিএস) বিরুদ্ধে।

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় আওয়ামী লীগ মনোনীত ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আমির আহমদের পক্ষে কর্ণফুলীর পশ্চিম জুলধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রীর এপিএস রিদওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম। প্রতীক বরাদ্দের আগে সভায় বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন ভূমিমন্ত্রীর এপিএস।

অথচ তফসিল অনুযায়ী ১৮ অক্টোবর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের দিন।

সভায় তিনি দলীয় ঘোষিত তিন প্রার্থীর পক্ষে ভোট ও সমর্থন চান। যদিও একজন এপিএস সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করা আচরণবিধি লঙ্ঘনের সামিল।

সভায় ভূমিমন্ত্রীর এপিএস রিদওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম বলেন, ‘কর্ণফুলী উপজেলা সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশের কোনো জায়গায় কর্ণফুলীর মতো জনসংখ্যা নিয়ে অর্থাৎ পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে স্বতন্ত্র উপজেলা করার নজির নেই। শুধুমাত্র কর্ণফুলী উপজেলা সম্ভব হয়েছে ভূমিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায়। যদিও এটা কোনো নির্বাচনী জনসভা বা মিটিং নয়। আগামী ২ নভেম্বর কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিষয়ে স্বাভাবিক মতবিনিময় সভা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে কর্ণফুলীর অভিভাবক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির সুপারিশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফারুক চৌধুরীকে নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন দেন। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে গতবার দলীয় প্রতীক থাকলেও এবার নেই। তবুও মন্ত্রী ও কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আমির আহমদ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোমেনা আক্তার নয়নকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে।’

জুলধা-ডাঙ্গারচরবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা বলতে আমরা চেয়েছিলাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যারা আছেন, এলাকার মুরুব্বি যারা আছেন, তাদের প্রতি একটা ম্যাসেজ দিতে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এটা কোনো নির্বাচনী সভা না হলেও খবর পেয়ে সব এলাকার নেতাকর্মীরা চলে এসেছে। ফলে বড় জনসভার মতো হয়ে গেছে। যদিও মূল উদ্দেশ্য ছিল মন্ত্রীর পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি একটা সালাম পৌঁছে দেওয়া। যারা প্রার্থী তাদেরকে একটু পরিচয় করিয়ে দেওয়া, আর কিছু নয়।’

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও এক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, ‘দলীয় প্রার্থী কিংবা নৌকার পক্ষে সমর্থন দিতে সাধারণ ভোটার ও নেতাকর্মীদের নানাভাবে প্রভাবিত করা এবং হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে সাধারণ ভোটাররা জানাচ্ছেন। তবে অতীতেও ইউপি নির্বাচনের সময়ে এ ধরনের পরিস্থিতি ছিল, কিন্তু জনগণ তার সমুচিত জবাব দিয়েছেন। এবারও জনগণ যাকে চাইবে তিনিই হবেন কর্ণফুলীর চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান। কারো কথায় জনগণ চিঁড়া ভেজাবে না।’

জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচার চালানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নির্বাচনীবিধির কোনো তোয়াক্কা করছেন না একাধিক প্রার্থী। প্রকাশ্যে বিপুলসংখ্যক লোকজন নিয়ে প্রচার, গণসংযোগ, সভা, সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট ও সমর্থন আদায়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছেন। যা দেখেও যেন দেখছেন না নির্বাচন অফিস। প্রশ্ন উঠেছে, লেবেল ফ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি নিয়েও।

কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. সেলিমের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন কর্ণফুলী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী।

এতে প্রধান বক্তা ছিলেন কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রনি। উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এমএন ইসলাম, নৌকা প্রতীকের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আমির আহমদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মোমেনা আক্তার নয়ন, জুলধার সাবেক চেয়ারম্যান রফিক আহমদ।

আচরণ বিধি প্রসঙ্গে জানতে সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে মুঠোফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি। তবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল শুকুর বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা করতে হবে প্রার্থীদের। আচরণবিধি মেনে চলার জন্য আমরা এর মধ্যে প্রার্থীদের বলে দিয়েছি। কেউ যদি এরপরও নিষেধ অমান্য করে প্রচারণা করে তাহলে বিপক্ষীয় প্রার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন। আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৮ অক্টোবরের পর মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করতে পারবে না।’

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২ নভেম্বর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ১৭ অক্টোবর।

নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ফারুক চৌধুরী, স্বতন্ত্র মোহাম্মদ আলী ও মাহবুব আলম তাঁরা মনোনয়ন জমা করেছেন।

এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে আমির আহমদ, মো. আবদুল হালিম ও মহিউদ্দিন মুরাদ মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোমেনা আক্তার নয়ন, বানাজা ভূইয়া, ফারহানা মমতাজ, মুন্নী বেগম, রানু আকতার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!