চট্টগ্রামে ভাগ্নির ১২ কোটি টাকা মেরে দিয়ে মামা গ্রেপ্তার

ভাগ্নির ব্যাংক হিসাবের সই জাল করে শেয়ার স্থানান্তরের মাধ্যমে ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামা ছালেহ মুহাম্মদ আবু ফয়েজকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ছালেহ মুহাম্মদ আবু ফয়েজ রাঙ্গুনিয়া থানার মরিয়মনগর এলাকার মৃত মুমিনুল হকের ছেলে। তিনি বর্তমানে পরিবার নিয়ে চাঁন্দগাও থানার আল আমিন বাড়িয়া দরবার শরীফ রোড এলাকার বাসায় বাস করছেন।

প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাত মামলার আসামি আবু ফয়েজকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) আলী হোসেন।

তিনি বলেন, ‘ভাগ্নির প্রায় ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় একটি মামলা হয়। সেই মামলার তদন্ত পর্যায়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।’

আলী হোসেন বলেন, ‘বাদীর ব্যাংক হিসাবের স্বাক্ষর জাল করে নগদ টাকা ও ব্যাংকের শেয়ার স্থানান্তরের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তে পর্যায়ে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’

মামলার বাদী সেলিনা আক্তার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, তার বাবা মৃত আবদুস ছালাম এনসিসি ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তারা ভাই-বোন বাবার শেয়ারের হিস্যা অনুযায়ী মালিক হন। বাদী স্বামীর সঙ্গে দুবাইপ্রবাসী এবং বাদীর ভাই পাইলট হওয়ার কারণে মামা ছালেহ মুহাম্মদ আবু ফয়েজকে এনসিসি ব্যাংকের অথরাইজড পরিচালক মনোনীত করেন।

সেই সুবাদে আসামি বাদীর নামে ব্যাংক হিসাব খোলেন। ওই ব্যাংক হিসাবে বাদীর ঠিকানা ও নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে আসামির। এই কারণে বাদীর অজান্তেই ব্যাংক লেনদেনের সুযোগ অর্জন করে। এছাড়াও বাদীর নামে লংকাবাংলা সিকিউরিটি, নাসিরাবাদ শাখা ও ইস্টার্ন ব্যাংক, পাঁচলাইশ শাখায় হিসাব খোলেন। ওই হিসাবগুলোর মাধ্যমে শেয়ার, শেয়ারের স্থানান্তর ও লভ্যাংশ গ্রহণ করেন।

বাদী সেলিনা আক্তার বলেন, ‘আমি বিদেশ থাকার সুবাদে আসামি নিজের মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করে ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে আমার অজ্ঞাতসারে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে শেয়ার স্থানান্তরের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি টের পাইনি। শুধু টাকা আত্মসাত নয়, লংকাবাংলা সিকিউটিজ থেকে আমার নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে আমার শেয়ারের বিপরীতে প্রাপ্ত লভ্যাংশ থেকে ঋণের কিস্তি শোধ হচ্ছিল। এখনও প্রায় ৬১ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজে।’

টাকা আত্মসাতের বিষয়টি কখন টের পেলেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমি বিদেশ থেকে ফিরে নিজের আয়কর দাখিলের জন্য যখন এনসিসি ব্যাংক থেকে শেয়ারের তথ্য সংগ্রহ করতে যাই, তখনই জানতে পারি, আমার নামে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজে ঋণ রয়েছে। তাই এনসিসি ব্যাংকের শেয়ারের লভ্যাংশ ঋণের কিস্তি হিসেবে সমন্বয় হচ্ছে। এরপর ব্যাংক থেকে তথ্য নিতে গিয়ে এনসিসি ব্যাংক, লঙ্কা বাংলা সিকিউরিটিজ এবং ইস্টার্ণ ব্যাংক থেকে তথ্য পাই।’

তিনি বলেন, ‘আপন মামা হওয়ার কারণে পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করি। তিনি প্রথমে দোষ স্বীকার করে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে সময়ক্ষেপণ করেন। কিন্তু পরে টাকা ফেরত দেননি। এই কারণে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!