চট্টগ্রামে ‘বড়লোকের’ রিহ্যাব মেলা, কোটি টাকার নিচে ফ্ল্যাট নেই

শুরুর দুই দিনই গেল ক্রেতাশূন্য

চট্টগ্রামের পাঁচতারকা হোটেল ‎র‌্যাডিসন ব্লুতে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের মেলায় সাড়া নেই ক্রেতাদের। প্রতিদিন হাতেগোনা কিছু দশনার্থী মেলায় ঢুকলেও ঘোরাঘুরি করে বেরিয়ে যাচ্ছে সবাই। অবস্থা এখন এমনই যে, ক্রেতার চেয়ে সেখানে স্টলকর্মীদের সংখ্যাই বেশি থাকছে প্রতিদিনই। তাছাড়া ফ্ল্যাটের দামও আকাশচুম্বী— মধ্যবিত্ত তো বটেই, উচ্চ মধ্যবিত্তদেরও যা নাগালের বাইরে।

বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) রেডিসন ব্লু’ বে ভিউর মোহনা বলরুমে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) উদ্যোগে এই আবাসন মেলা বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করা হলেও প্রথম দুইদিনই গেছে ক্রেতাশূন্য। ফ্ল্যাট বিক্রেতারাও এতে বেশ হতাশ।

শুক্রবার মেলায় এসেছিলেন চট্টগ্রাম নগরীর হামজারবাগের গৃহিণী মোতাহেরা বেগম মুক্তা। স্বামী প্রবাসে থাকেন। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল শহরে নিজেদের একটি ফ্ল্যাট হবে। বেশ আশা নিয়েই তিনি মেলায় এসেছিলেন। কিন্তু মেলায় এসেই হতাশ তিনি। সাধারণ মানের একটি ফ্ল্যাট কিনতেও লাগবে কোটি টাকার কাছাকাছি।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘সাধ আছে সাধ্য নেই। কম টাকায় বা অর্ধকোটি টাকার মধ্যে কোনো ফ্লাট এখানে নেই। তাই আমি মেলায় এসেও কোনো ফ্ল্যাট বুকিং দিতে পারলাম না।’

মেলায় কথা হয় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী আলী আকবরের সাথে। তিনি বললেন, ‘মেলায় ঢুকতে ৫০ টাকার টিকিট কাটতে হয়েছে। কিন্তু মেলা থেকে আমার ৫০ টাকারও উপকার হলো না। কারণ আমি ভেবেছি, মেলায় বিভিন্ন অফারে কম টাকার ফ্ল্যাট হয়তো পাওয়া যাবে। কিন্তু এখানে সবগুলো স্টল ঘুরে দেখলাম আমার চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে ফ্ল্যাট নেই।’

দর্শনার্থীদের কথার সঙ্গে মিল পাওয়া গেল মেলায় আসা বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির স্টলে কথা বলেও।

বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডের (বিটিআই) কনসালটেন্ট (সেলস) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘মেলা দুই দিন পার হয়ে গেল। কিন্তু আমাদের কোম্পানি থেকে একটি ফ্ল্যাটও বুকিং দিতে পারিনি।’

কনকর্ড রিয়্যাল এস্টেট এন্ড বিল্ডিং লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ কোনাল চৌধুরী বললেন, ‘মেলায় ক্রেতারা শুধু দেখছেন কোথায় তাদের পছন্দের বাড়ি পাওয়া যায়। আমাদের স্টলে এ দুই দিনে কোনো বুকিং হয়নি। ফ্ল্যাটের দামের সাথে লোকেশনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

ফিনলে প্রপার্টিজ লিমিটেডের স্টলে কথা হয় মার্কেটিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিহাদের সাথে। তিনি বললেন, ‘ফিনলের ১২টি প্রকল্পের কাজ চলতেছে। যেখানে একটি ফ্ল্যাটের সর্বনিম্ন মূল্য প্রতি বর্গফুট ৬০০০ টাকা থেকে ১৭০০০ টাকা পর্যন্ত। কোটি টাকান নিচে কোন ধরনের ফ্ল্যাট পাওয়া যাবে না আমাদের প্রজেক্টে।’

চকবাজার, হালিশহর, আগ্রাবাদসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রজেক্টের কাজ চলমান আছে উল্লেখ করে র‌্যাংকস এফসি প্রপার্টিসের কর্মকর্তা রায়হান ইসলাম বলেন, ‘মেলায় বুকিং তেমন নেই। কিন্তু কেউ কেউ এসে দেখছেন, খোঁজখবর নিচ্ছেন।’

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) ১৪তম বারের মতো এই মেলা আয়োজন করেছে। মেলার এবারের স্লোগান ‘স্বপ্নিল আবাসন সবুজ দেশ, লাল সবুজের বাংলাদেশ।’

চারদিনব্যাপী আবাসন মেলায় অংশ নিচ্ছে ২৯টি আবাসন প্রতিষ্ঠান। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের ৭১টি স্টল রয়েছে। আবাসন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ভবন নির্মাণসামগ্রী ও ঋণদাতা আর্থিক প্রতিষ্ঠানও অংশ নিচ্ছে এতে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চার দিনব্যাপী এই মেলা চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত। মেলায় একবার প্রবেশমূল্য রাখা হয়েছে ৫০ টাকা এবং মাল্টিপল টিকিটে চারবার প্রবেশ করা যাবে ১০০ টাকায়।

রিহ্যাব চট্টগ্রাম কমিটির সভাপতি আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, মেলায় সাড়া পাওয়া যায় শেষে দিনে। আমরা আশা করি, এবার মেলায় উল্লেখযোগ্য হারে ফ্ল্যাট বুকিং হবে।

কম দামে ফ্ল্যাট নেই কেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মধ্যবিত্তরা যদি খুলশীতে ফ্ল্যাট চান তাহলে তো হবে না। অফসাইট থেকে ফ্ল্যাট কিনতে হবে। তখন পাওয়া যাবে। মধ্যবিত্তকে তো মধ্যবিত্তের লোকেশনে যেতে হবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!