চট্টগ্রামে বেপরোয়া ‘সোর্স’ ভয়ানক অপরাধে, পুলিশই সহযোগী (ভিডিও)

চট্টগ্রাম নগরে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে পুলিশের কথিত সোর্সরা। তাদের বেশিরভাগ অপরাধই ধামাচাপা দেওয়া হলেও ইদানিংকালে বেরিয়ে আসছে একের পর এক অপরাধের কাহিনী। চট্টগ্রামের পুলিশের অধিকাংশ সোর্সই সাধারণত পেশাদার অপরাধী। নামে ‘পুলিশের সোর্স’ হলেও পুলিশ কর্মকর্তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নিরীহ লোকজনকে ফাসিয়ে অর্থ আদায়, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধই কথিত এই সোর্সদের মূল কাজ। মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করেন, পুলিশের সোর্সরা প্রায়ই নিজ স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহার করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ সোর্সদের ওপর এতো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে যে তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই না করেই অভিযান চালায়— যাতে অনেক নিরীহ মানুষ বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে শুধু চট্টগ্রাম নগরীর বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পুলিশ সোর্সদের সরাসরি জড়িত থাকার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় পুরো নগরজুড়েই। সদরঘাট, চকবাজার, ইপিজেড, ডবলমুরিং, চান্দগাঁও থানাসহ নগরীর আরও বেশ কয়েকটি থানায় এই সোর্সদের দৌরাত্ম্যে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত আগস্টেই ঘটেছে কমপক্ষে তিনটি ঘটনা। গত ৬ আগস্ট বিকেলে সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন সিডিএ মার্কেট সংলগ্ন একটি আবাসিক হোটেলে পুলিশের সোর্স বলে কথিত সাব্বির (৩২), খোকন (৩০), মোবারক (২৫)— এই তিন সোর্স পাহাড়তলী থানার উপ-পরিদর্শক রেজাউলের নেতৃত্বে ঢুকে টাকা ও ফোন ছিনতাই করার প্রমাণ মিলেছে সিসিটিভি ফুটেজে।

এলাকা থেকে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ থেকে জানা যায়, পাহাড়তলী থানার উপপরিদর্শক রেজাউল পাঁচ কথিত সোর্স পাহাড়তলী জোলাপাড়ার সাব্বির, পাহাড়তলী কাজীপাড়ার সাইফুল ইসলাম, আকবরশাহ বিহারী কলোনির খোকন বিটলা ওরফে খোকন এবং মোবারকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।

ওই হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ৬ আগস্ট বিকেল ৫টা ৪২ মিনিটে পাহাড়তলী থানার তিন সোর্স আবাসিক হোটেলটির পার্শ্ববর্তী বিল্ডিংয়ের ছাদ টপকে হোটেলে ছাদের সিঁড়ি বেয়ে হোটেলের রিসিপশনে প্রবেশ করেন। তারা নিজেদের ‘পুলিশের লোক’ পরিচয় দিয়ে হোটেলের তিনটি রুমে তল্লাশির নামে বোর্ডারদের টাকা ও ফোন ছিনিয়ে নিয়ে একটি রুমে আটকে রাখে। এ সময় তারা হোটেলের স্টাফদের মারধরও করে। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, এর সাত মিনিট পর ৫টা ৪৯টা মিনিটে পাহাড়তলী থানার উপপরিদর্শক রেজাউল ওই হোটেলে ঢোকেন।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এক বোর্ডার অভিযোগ করেন, নীল গেঞ্জি পরা সোর্স মোবারক তার স্ত্রীর ফোন এবং সঙ্গে থাকা ১২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। ফেনী থেকে আসা এই দম্পতি পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তিনি বলেন, সোর্সদের রক্ষা করার জন্য পুলিশ পর দিন তাদেরসহ সাতজনকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৭৬ ধারায় আদালতে চালান দিলে জরিমানা দিয়ে তারা ছাড়া পান। সামাজিক মর্যাদাহানির আশঙ্কায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীর এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিসিটিভি ফুটেজে বের হয় ঘটনার সত্যতা। তবে এই বিষয়ে পাহাড়তলী থানা থেকে সদ্য বদলি হওয়া ওসি হাসান ইমামকে সিসিটিভি ফুটেজ পাঠিয়ে সোর্সদের গ্রেপ্তার করার অনুরোধ করা হলেও তিনি পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যান।

ওই হোটেলের ম্যানেজার আতিক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মতো প্রতি রাতে অতিথির তালিকা থানায় জমা দিয়ে রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর নিই। এরপরও সোর্সদের এমন অপতৎপরতা খুবই দুঃখজনক।

পাহাড়তলী থানার নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে তথ্য প্রদান করে সে-ই সোর্স। তবে নির্দিষ্ট কোনো সোর্স থানায় নেই। পুলিশের কোনো কর্মকর্তার সোর্স পালনের প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গত ২৮ আগস্ট নগরীর ডবলমুরিং থানার জোড় ডেবা লেকভিউ আবাসিক এলাকার ১২ কোয়ার্টারে র‍্যাবের সোর্স বলে কথিত হৃদয় ছুরিকাঘাত করেন ফয়সাল (২৭) নামের এক যুবককে। এ ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের হলেও গ্রেপ্তার হয়নি হৃদয়, বরং ঘুরছেন প্রকাশ্যেই।

চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার বড় একটি অংশজুড়ে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচয় দেওয়া বেলাল হোসেন নামের এক ব্যক্তির দাপট। তিনি নিজের পরিচয় দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পশ্চিম জোনের ক্যাশিয়ার বা অলিখিত চাঁদা আদায়কারীর। কখনও আবার নিজের পরিচয় দেন কথিত অনলাইন টিভির সাংবাদিক হিসেবেও। জানা গেছে, এই বেলালের উৎপাতে আগ্রাবাদ এলাকার ব্যবসায়ীরা রীতিমতো অতিষ্ঠ। ‘ডিবির ক্যাশিয়ার’ পরিচয় দিয়ে মাসিক চুক্তি করার ‘নির্দেশ’ দিয়ে তিনি মোবাইল নম্বর পাঠান ব্যবসায়ীদের। আগ্রাবাদ, মনসুরাবাদ, মজুরী পাড়া এলাকায় এরকম অহরহ অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। কখনও ‘ডিবির ক্যাশিয়ার’, আবার কখনও অনলাইন টিভির ‘রিপোর্টার’ পরিচয় দিয়ে বেলাল হোসেন নামের এই লোক দীর্ঘদিন ধরে এমন অপকর্ম করে গেলেও পুলিশ তাকে কখনও ধরে না। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পশ্চিম জোনে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকে তার ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দায় সেরেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেলাল হোসেন নগরীর ডবলমুরিং থানার সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার ‘সোর্স’ হিসেবে আগ্রাবাদ এলাকায় পরিচিত। বেলালের সহযোগী ক্যাশিয়ার হিসেবে আবার ‘দায়িত্ব’ পালন করেন বায়েজিদ থানার সাবেক ‘ক্যাশিয়ার’ জাহাঙ্গীর। এরা ‘ডিবির ক্যাশিয়ার’ পরিচয় দিয়ে মাসিক চুক্তি করার ‘নির্দেশ’ দিয়ে মোবাইল নম্বর পাঠান বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী বলেন, ১৫ আগস্ট থেকে বেলাল ডিবি পশ্চিম জোনের ‘ক্যাশিয়ার’ পরিচয় দিয়ে মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে ব্যবসা করার কথা জানিয়ে মোবাইল নাম্বার পাঠাচ্ছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে। মাসিক চুক্তিতে না এলে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে বলেও বেলাল সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন একই সঙ্গে।

জানা গেছে, নগরীর আকবরশাহ এলাকার পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত হাসানের নেতৃত্বে নানা অপকর্ম পরিচালিত হয়ে আসছিল বেশ অনেকদিন ধরে। সোর্স হাসান বেশ কিছুদিন ধরে গোপনে জুয়া ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। ২০১৬ সালে অস্ত্র বিক্রি করার অভিযোগে নৌবাহিনীতে কর্মরত জসিম নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলে সে সোর্স হাসানের নাম উল্লেখ করে। পুলিশের কথিত সোর্স হাসানের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ভূমি দখল ও মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার মামলা রয়েছে। চলতি বছরের ২ মে আকবরশাহ থানা এলাকার পাঞ্জাবি লেইন মুক্তকন্ঠ মাঠে সোর্স হাসানের জুয়া ও মাদকের আসরে পুলিশের এক অভিযানে ৭ জনকে আটক করা হলেও মূল হোতা সোর্স হাসান পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

চট্টগ্রামের ইপিজেড থানা এলাকার বন্দরটিলা, হাসপাতাল গেইট থেকে আকমল আলী রোড, এস আলম-বি আলম গলিজুড়ে অবাধ বিচরণ পুলিশের কথিত চার সোর্সের। নিজেদের তারা দাবি করেন ‘পুলিশের লোক’। সড়কগুলোতে যত স্থায়ী, অস্থায়ী দোকান ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে সবগুলোকেই চাঁদা দিতে হয় এই চারজনকে। এরা হলেন জাহাঙ্গীর, রাজু ও রফিকুল আর ক্যাশিয়ার সুলতান। প্রায় দুই শতাধিক দোকান থেকে দৈনিক ছয় হাজার টাকা মাসোহারা পান এই চার ‘পুলিশের লোক’। কেউ এই মাসোহারা দিতে অস্বীকার করলে তাদের হতে হয় নাজেহাল, নয় তো বরাদ্দ থাকে পুলিশি হয়রানি।

পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে সন্ত্রাস ও ছিনতাইয়ে জড়িত মনির নামের এক ব্যক্তিকে গত ১ আগস্ট টাইগারপাস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামের খুলশী থানা পুলিশ। এর আগে ২৯ জুলাই রাত আনুমানিক ১০টার দিকে টাইগারপাস রেলের সীমানায় (পানির পাম্প এলাকা) ঢুকে মনির ও তার কয়েকজন সহযোগী মাদকসেবনের চেষ্টা করলে রেলের অস্থায়ী নৈশপ্রহরী সুকুমার দাশ বাধা দেন। এ সময় কথিত সোর্স মনির ও তার সহযোগীরা সুকুমার দাশকে মারধর করে। স্থানীয় যুবক শাকিল নৈশপ্রহরীকে মারধরের প্রতিবাদ করলে মনির শাকিলের ওপর চড়াও হয়ে তাকেও মারধর করে। এই মনির এলাকায় মাদক সেবন, মাদকব্যবসা, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে।

এদিকে নগরীর চকবাজার থানা পুলিশের কথিত দুই সোর্সের বিরুদ্ধেও রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। আলোচিত এই দুই সোর্স হচ্ছে— নাছির উদ্দিন ওরফে ল্যাডা নাছির ও সেকান্দর। নাছির একসময় শিবিরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ছিল। ফটিকছড়িতে নিজের মাকে হত্যাসহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত নাছির বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ছিল চকবাজার এলাকার ত্রাস। পুলিশের করা শিবির ক্যাডারদের তালিকায় প্রথমেই তার নাম থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর হঠাৎ ‘পুলিশের সোর্স’ হিসেবে আবির্ভাব ঘটে নাছিরের। মূলত গ্রেফতার এড়াতেই সোর্স হিসেবে কাজ করছে নাছির— এমন তথ্য জানিয়েছে চকবাজার থানার একটি সূত্র।

তবে ক্ষমতার বদল হলেও, এমনকি অপরাধের ধরন বদলে গেলেও বন্ধ হয়নি নাছির ও সেকান্দরের অপকর্ম। পুলিশের সহায়তায় নিরীহ লোকজনকে ফাসিয়ে অর্থ আদায়, মাদক ও জুয়ার স্পটগুলো থেকে পুলিশের নামে মাসোহারা আদায় করে যাচ্ছে কথিত এই দুই সোর্স। থানায় আসা ভুক্তভোগীদের থেকেও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। চকবাজার এলাকায় তাদের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাই চক্র সক্রিয়। তারা এমনই বেপরোয়া যে, এমনকি থানা ফটকের ভেতর ও বাইরে ইয়াবাও বিক্রি করে কথিত দুই সোর্স নাছির ও সেকান্দর।

চকবাজারের পুলিশের আরেক সোর্স আক্কাস। চকবাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে পুলিশের পক্ষ হয়ে নিয়মিত চাঁদা আদায় করাই তার মূল কাজ। এর বাইরে নিরীহ মানুষকে মাদক দিয়ে ধরিয়ে সাজানো গ্রেপ্তারের বাণিজ্যেও তাকে প্রায়ই দেখা যায়। কয়েক বছর আগে চকবাজারের ক্ষুব্ধ মানুষ কথিত এই সোর্স আক্কাসের কান কেটে দেয়। সেই থেকে তাকে ‘কানকাটা আক্কাস’ হিসেবেই স্থানীয়ভাবে সবাই চেনে।

চকবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আক্কাস মূলত র‌্যাব ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করেন। এক সময় চকসুপার মার্কেটে তিনি ভিডিও-সিডির দোকানে কাজ করতেন। সেই আক্কাস এখন পুলিশের সোর্স। চকবাজার জামে মসজিদের বিপরীতে চক সুপার মার্কেটের পশ্চিম দিকের কোণায় একটা জায়গা দখল করে রাস্তার ওপর তার একটি দোকান তৈরি করেছেন। ইজারাদাররা সেটা তুলে দিলেও চকবাজার থানার পুলিশ আবার তাকে সেখানে বসিয়েছে। আক্কাস ওই দোকান এক লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন।

গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বোনের বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে গিয়ে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং এলাকার সুপারিওয়ালাপাড়ায় এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে। যাদের মধ্যে প্রধান আসামি চান্দু মিয়া ‘পুলিশের সোর্স’ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এই পরিচয় ভাঙিয়ে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, নিরীহ লোকজনকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায়, নারীদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

একই থানা এলাকায় গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আইয়ুব আলী নামে এক ড্রাইভার। তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। ঘটনার দিন রিক্সাযোগে লালখান বাজার থেকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বারিক বিল্ডিংয়ের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে প্রকাশ্য সড়কে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় আটক হয় পাঁচজন। এদের মধ্যে বাবু নামে এক আসামি সদরঘাট থানা পুলিশের ‘সোর্স’ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। কথিত এই সোর্সের বিরুদ্ধে মানুষের গাড়ি-অফিসে বা ঘরে মাদক রেখে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ রয়েছে। পরে নগদ টাকায় রফাদফা করা হতো থানায়। পুলিশের অভিযানে উদ্ধার করা মাদকদ্রব্য আবার এই ‘সোর্স’ বাবুর মাধ্যমে বিক্রি করা হতো— এমন অভিযোগের কথাও জানা গেছে একাধিক সূত্রে। সম্প্রতি মাদারবাড়ি এলাকায় মুন্না নামের এক গাড়িচালকের মোবাইল ছিনিয়ে নেয় বাবু। এরপর তাকে এলাকাবাসী ধরে মারধর করার পর সেই মোবাইল উদ্ধার হয়। কিন্তু এরপর থেকে উল্টো ঘটনার শিকার মুন্নাকে সদরঘাট থানার এসআই মাহতাবের হয়রানিতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয় বেশ অনেকদিন।

এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযানের পর এক কিশোরকে মৃত্যুর ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে চালানোর চেষ্টা করে পুলিশ। এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কথিত দুই সোর্সকে সঙ্গে নিয়ে ডবলমুরিং থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বাদামতলীর বড় মসজিদ গলিতে একটি বাসায় অভিযানে যান। দুই সোর্সের সঙ্গে মিলে মারুফ নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে তারা প্রচণ্ড মারধর করে। একপর্যায়ে তার কাছ থেকে টাকা দাবি করে পুলিশ। পরে তাকে আটকের চেষ্টাও করা হয়। তখন তার পরিবারের সদস্যরা বাধা দিলে ধস্তাধস্তিতে ওই কিশোরের মা ও বোন আহত হন। পরে পুলিশ তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলেও রাতে নিজ বাসা থেকেই মারুফের ‘ঝুলন্ত লাশ’ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ওই অভিযানের বিষয়ে সুস্পষ্ট কারণও দেখাতে পারেনি। স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে সাদা পোশাকে অভিযানে যাওয়া এসআই হেলাল উদ্দিনকে পরে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। জানা গেছে, এ ঘটনায় এসআই হেলালের সঙ্গে যাওয়া দুই সোর্সের মধ্যে সুপারিওয়ালা পাড়ায় কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় আটক চান্দু মিয়াও ছিল সেদিন।

সিএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম জোন) আবদুল ওয়ারীশ বলেন, অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা নিজেদের সোর্স পরিচয় দেয়। যারা এমন পরিচয় দেয় তাদের ধরে অথবা তাদের তথ্য জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!