চট্টগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবনশঙ্কায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরও পুলিশ নিরব

সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বেরিয়েই বেপরোয়া চটপটি আলাউদ্দিন

চট্টগ্রাম নগরীর আকবরশাহ থানার সন্ত্রাসী তালিকার ১০ নম্বরে থাকা এক ব্যক্তি রহস্যজনকভাবে সেই তালিকা থেকে মুক্ত হওয়ার পর আবার বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন। নিজের এলাকাতেই এবার ছেলে-ভাগ্নেসহ মিলে সন্ত্রাসী তালিকায় ইতিপূর্বে নাম থাকা ওই ব্যক্তি হয়রানি করছেন এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। ওই মুক্তিযোদ্ধা তার জায়গায় বাড়ি তৈরি করতে গেলে পদে পদে বাধা দিয়ে যাচ্ছেন ওই ব্যক্তি ও তার সহযোগীরা। দেওয়া হচ্ছে হত্যার হুমকিও। এমন অবস্থায় জা‌কির হো‌সেন নামের সেই বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা ও তার পরিবার জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ নিয়ে আবেদন-নিবেদন করার পরও আপিল বিভা‌গের চেম্বার জজের আ‌দেশেও কর্ণপাত ক‌রছেন না খোদ চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনারই— এমন অভিযোগ ওই মুক্তিযোদ্ধার।

জানা গেছে, নগরীর আকবরশাহ থানার উত্তর কাট্টলী ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেনের মালিকানাধীন একটি জায়গা দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রাখেন আকবরশাহ থানার সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সদ্য নাম কাটা যাওয়া আলাউদ্দিন ওরফে চটপটি আলাউদ্দিন। এ নিয়ে আইনি লড়াই শেষে গত বছরের ১ ন‌ভেম্বর সিভিল রিভিশন মূলে হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেনকে বিনা বাধায় কাজ করার আদেশ দেন সংশ্লিষ্টদের।

পরে প্রতিপক্ষ সুুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে গেলেও মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেনের পক্ষে গত বছর দেওয়া ১ ন‌ভেম্বরের আদেশই বহাল থাকে।

জানা গেছে, এরপর দালানের অসমাপ্ত পাইলিংয়ের জন্য বিসমিল্লাহ সয়েলটেক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর গত ১ মার্চ পাইলিং মালামাল আনতে গেলে ঠিকাদারকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সদ্য নাম কাটা যাওয়া আলাউদ্দিনের ছেলে ও তার ভাগ্নেরা প্রাণে মারার হুমকি দেন। শুধু তাই নয়, মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেনসহ তার পরিবারের সদস্যদের মারধর ও মালামাল লুট করার জন্য ভাড়াটে সন্ত্রাসী আনা হয়। এর এক প্রত্যক্ষ সাক্ষীর ভিডিও সাক্ষ্য চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে।

গত ৯ মার্চ চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার বরাবরে দেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন নির্মাণকাজে বাধাদান ও ভয়ভীতি দেখানো ১২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ জমা দেন। এর মধ্যে রয়েছেন— উত্তর কাট্টলীর মো. ইসহাক, হাফিজুর রহমান, আলাউদ্দিন ওরফে চটপটি আলাউদ্দিন, আলাউদ্দিনের ছেলে ফয়সাল, আলাউদ্দিনের ভাগ্নে এমরান, ফোরকান মিয়া ও দৌলত, পশ্চিম নাসিরাবাদের শফিউল আলম, হাফিজুরসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জন।

এর পরদিন ১০ মার্চ বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেনের আবেদন অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আকবরশাহ থানার ওসিকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন নগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম)।

জানা গেছে, আলাউদ্দিন আকবরশাহ থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিলেন। কোনো এক রহস্যজনক কারণে সেই আলাউদ্দিনকে সেই সন্ত্রাসী তালিকার ১০ নম্বর ক্রমিক থেকে বাদ দেয় আকবরশাহ থানা।

অথচ চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী, পাহাড়তলী ও আকবরশাহ থানার পৃথক পৃথক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ডবলমুরিং জোনের তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার তোফায়েল আহমেদের দেওয়া প্রতিবেদনে আলাউদ্দিনকে ‘সন্ত্রাসী ও পেশাদার চাঁদাবাজ’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘সে পাহাড়তলী থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ ডন গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। এলাকাবাসী তাহার বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য করিতে সাহস পায় না।’

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) বরাবরে আকবরশাহ থানার ওসি জহির হোসেনের পাঠানো এক চিঠিতে সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত আলাউদ্দিনের নাম বাদ দেওয়ার কথা জানিয়ে লেখা হয়— ‘বিস্তারিত বিষয়ে অবহিত হইয়া আমি অফিসার ইনচার্জ হিসেবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সহিত আলোচনা করিয়া পূর্বের ধারাবাহিকতায় চাহিত সন্ত্রাসী তালিকায় মো. আলাউদ্দিন প্রঃ চটপটি আলাউদ্দিন (৪৩) এর নাম বাদ দিয়া চূড়ান্ত সন্ত্রাসী তালিকা প্রস্তুতপূর্বক আকবরশাহ থানায় স্মারক নং মূলে দাখিল করা হয়।’

উত্তর কাট্টলী ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেনের মালিকানাধীন জায়গায় বাড়ি তৈরিতে বাধা নিয়ে ব্যবস্থা নিতে ওসিকে নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম)

উত্তর কাট্টলী ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেনের মালিকানাধীন জায়গায় বাড়ি নির্মাণে বাধাদানের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে আকবরশাহ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (পশ্চিম) আবদুল ওয়ারিশ।

এ বিষয়ে আবদুল ওয়ারিশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উনি (বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন) এখন নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারছেন। ওই জায়গা নিয়ে যখন দ্বন্দ্ব ছিল, তখন আদালতের নির্দেশে কাজ বন্ধ ছিল। এখন যেহেতু বিজ্ঞ আদালত কাজ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে কেউ কাজে বাধা দিতে পারবে না।’

আরএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!