চট্টগ্রামে বসে যেভাবে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন অংকন বাবলা

শুক্রবার আন্ডার-গ্রাজুয়েট ভার্চুয়াল মেলা

বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে বরাবরই সেরা পছন্দ যুক্তরাষ্ট্র। ইন্সটিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের ২০২০ ওপেন ডোরস রিপোর্ট অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করতে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আমেরিকায় অধ্যয়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিশ্বতালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৭তম এবং গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের দিক থেকে অষ্টম।

দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকাই শুধু নয়, চট্টগ্রাম থেকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা করছেন। তাদের বেশিরভাগই ‘এডুকেশনইউএসএ ফেয়ারের’ সহায়তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়েছেন। তাদেরই একজন চট্টগ্রামের অংকন বাবলা সুশীল। চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের সাবেক এই শিক্ষার্থী বর্তমানে পড়াশোনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অ্যালাবামা কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। তিনি কিভাবে ‘এডুকেশনইউএসএ’র নির্দেশনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সারির একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার সুযোগ পেলেন, সেসব নিয়ে তার মুখোমুখি হয়েছিল দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন।

বর্তমানে আপনি যুক্তরাষ্ট্রে কোথায় লেখাপড়া করছেন?

অংকন বাবলা : বর্তমানে আমি ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অ্যালাবামা কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য লেখাপড়া করছি। আমি এখানে লেখাপড়া শুরু করেছি ২০২১ শিক্ষাবর্ষের বসন্ত ষান্মাসিকে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও তড়িৎ প্রকৌশলের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়েই উৎসাহ আমার।

বাংলাদেশে ‘এডুকেশন-ইউএসএ’র কার্যক্রম সম্পর্কে আপনি প্রথম কিভাবে জানতে পারেন?

অংকন বাবলা : আমি যখন স্নাতক শিক্ষার্থী, ওই সময় আমি এডুকেশন-ইউএসএ’র ওয়েবিনারে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় অংশ নিই। মূলত সেখান থেকেই আমি আমেরিকায় লেখাপড়া করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি।

ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অ্যালাবামা কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং
ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অ্যালাবামা কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং

এডুকেশন-ইউএসএর পরামর্শ নিয়ে উপকৃত হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আপনি অন্যতম। সেখানে আপনার অভিজ্ঞতাটা কেমন?

অংকন বাবলা : স্নাতক শিক্ষা সফলভাবে শেষ করার পর আমি প্রকৌশল খাতে কাজ শুরু করি। কিন্তু সেখানে আমার বারবারই মনে হতে থাকে, আমার যে আগ্রহের জায়গা, তার জন্য আমার উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া জরুরি। একসময় আমি যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার্থে আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। এর একপর্যায়ে আমি চট্টগ্রামে অবস্থিত আমেরিকান কর্নারে এডুকেশন-ইউএসএ’র পরামর্শ কেন্দ্রের খোঁজ পাই। সৌভাগ্যক্রমে সেখানে আমি আমার প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপকরণগুলো পেয়েছি। আমেরিকান কর্নারে যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই এডুকেশন-ইউএসএর পরামর্শক আসমা আলম আমাকে পথ দেখিয়েছেন। তিনি ধৈর্য ধরে আমার সমস্ত জিজ্ঞাসার উত্তরও দিয়েছেন। এর কয়েকদিন পরেই আমি আমেরিকান সেন্টারের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে বের করা, জিআরই/আইইএলটিএসের প্রস্তুতি, ভর্তির জন্য রচনা লেখার কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে কিছু কার্যক্রমে যোগ দিই। এর মধ্যে যখনই আমার মনে কোনো প্রশ্ন এসেছে কিংবা কোনো বিবৃতির খসড়া লিখতে সমস্যায় পড়েছি অথবা কোনো অধ্যাপককে ইমেইল করতে গিয়ে আটকে গেছি— তখনই আমি পরামর্শকের সহায়তা পেয়েছি।

শিক্ষার যে পর্যায়ে আপনি এখন আছেন, সেখানে পৌঁছাতে এডুকেশন-ইউএসএ থেকে আপনি কী কী তথ্য ও সহায়ক উপকরণ পেয়েছেন?

অংকন বাবলা : প্রথমত, পরামর্শ কেন্দ্রের লাইব্রেরিতে আছে জিআরই, টোফেল, আইইএলটিএসের প্রচুর বইপত্র এবং বিনামূল্যে ওয়াইফাইসহ কম্পিউটার— যা আমাকে কলেজ খুঁজে বের করা ছাড়াও আমার আবেদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে। দ্বিতীয়ত, আমেরিকান সেন্টারের সাপ্তাহিক কার্যক্রমগুলো থেকে নানাভাবে উপকৃত হয়েছি। চমৎকার ওই আয়োজনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো। এছাড়া সেন্টারের আয়োজনে বিনামূল্যের ভার্চুয়াল কলেজ মেলায় বেশ উপকৃত হয়েছি। সেখানে ভার্চুয়াল বুথের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা সরাসরি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আগ্রহী বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীদের অনেকেই। তাদের উদ্দেশ্যে কী পরামর্শ আছে আপনার?

অংকন বাবলা : প্রথমত, আমি যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরকে এডুকেশন-ইউএসএ’র নিকটতম কেন্দ্রের (আমেরিকান সেন্টার, ইএমকে সেন্টার, চট্টগ্রাম ও খুলনায় আমেরিকান কর্নার সেন্টার) সাথে যোগাযোগের জন্য উৎসাহিত করবো। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তারা আপনাকে সঠিক ও প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে। স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট, রচনা লেখা ও কলেজ অনুসন্ধানে আপনার প্রস্তুতিতে সহায়তার জন্য তাদের দেওয়া বিনামূল্যের বিপুল তথ্য ও উপকরণের সুবিধাকে কাজে লাগান। গবেষণায় আপনার আগ্রহের কথা জানিয়ে যত বেশি সংখ্যক অধ্যাপককে সম্ভব ইমেইল করুন। কারণ, আপনার পক্ষে এটা জানা সম্ভব নয় যে, কারা তাদের বিভাগে কোন্ শিক্ষার্থীকে পূর্ণ স্কলারশিপের জন্য আগ্রহ নিয়ে খুঁজছে।

বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে কী কী সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে?

অংকন বাবলা : ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অ্যালাবামায় একটি পুরো বিভাগই রয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য। অ্যালাবামার মোবাইল সিটিতে পৌঁছানোর অল্প সময়ের মধ্যেই বিভাগটি আমাদেরকে স্থানীয় একজন সমাজকর্মীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, যিনি আক্ষরিক অর্থেই যুক্তরাষ্ট্রের জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের সহায়তা করেছেন। এই বিভাগ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি অনেক আন্তরিক।

আপনার অভিজ্ঞার আলোকে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার অনন্য সুফলগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?

অংকন বাবলা : আমার অভিজ্ঞতা যতদূর, সে অনুযায়ী যে সুফলগুলো আমার কাছে প্রধান মনে হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে— মূল বিষয় বা মেজর নির্বাচনে নমনীয়তা, হাতে-কলমে শিক্ষানবিশি এবং পেশাগ্রহণ পরিকল্পনায় সহায়তার মাধ্যমে পেশাগত উন্নয়নে ব্যাপক গুরুত্ব এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষায়িত সেবা ও সহায়তা।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিগ্রি কিভাবে আপনার পেশাগত লক্ষ্য ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়তা করছে?

অংকন বাবলা : এটা সবারই জানা যে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রকৌশল ডিগ্রি নেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) ক্ষেত্রে সফল পেশাজীবন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পায়। তাছাড়া আমি মনে করি, শক্তিশালী যোগাযোগ, দলীয় কাজ, বিশ্লেষণী চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতার মতো বিভিন্ন পেশাগত দক্ষতা জোরদার হওয়ার ফলে সেটা আমাকে আমার পেশাগত লক্ষ্য অর্জনের পথে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে ও তার জন্য প্রস্তত করে তুলবে।

আপনার ক্যাম্পাসে কি কোনো বাংলাদেশি বা দক্ষিণ এশীয় শিক্ষার্থীদের এসোসিয়েশন বা সমিতি আছে, যেখানে আপনি সম্পৃক্ত?

অংকন বাবলা : হ্যাঁ, ক্যাম্পাসে আমাদের বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএ) আছে। আমি ভাগ্যবান যে, আমি তাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচিত হয়েছি।

শুক্রবার এডুকেশনইউএসএ ফেয়ার

বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট বা স্নাতক কোর্সে পড়তে আগ্রহীদের জন্য বরাবরের মতো এবারও আয়োজিত হচ্ছে ‘এডুকেশনইউএসএ ফেয়ার’। শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬:০০ টা থেকে রাত ১১:০০ টা পর্যন্ত ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে এই মেলার আয়োজন করছে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পড়তে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ১৫০টিরও বেশি স্বীকৃত আমেরিকান কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এই মেলা আয়োজিত হতে যাচ্ছে।

ভার্চুয়াল মেলায় অংশগ্রহণকারীরা ইন্টারঅ্যাকটিভ দলীয় আলোচনায় অংশ নেওয়া ছাড়াও এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রতিনিধি, এডুকেশনইউএসএ এডভাইজার, স্ট্যান্ডার্ডাইজড টেস্টিং সংস্থার প্রতিনিধি এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কনসুলার কর্মকর্তাদের সাথে অনলাইন বুথের মাধ্যমে কথা বলে তাদের প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নিতে পারবেন। মেলায় যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবে, তার মধ্যে রয়েছে — ডিগ্রি সংক্রান্ত সকল প্রশ্ন, আবেদনের যোগ্যতা, আর্থিক সহায়তা, স্ট্যান্ডার্ডাইজড টেস্টিং (অর্থাৎ স্যাট, জিআরই, জিম্যাট ইত্যাদি) এবং শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মেলা চলাকালীন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানতে ও ভর্তি প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগের দিক নির্দেশনা পাবেন এডুকেশনইউএসএ বাংলাদেশ বুথ পরিদর্শন করে।

শুক্রবারের (৩ সেপ্টেম্বর) আন্ডার-গ্রাজুয়েট ভার্চুয়াল মেলায় যোগদানের জন্য নিবন্ধন করা যাবে এই ওয়েবসাইটেhttps://educationusa.events/undergraduatefair

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!