চট্টগ্রামে প্রবাসীরা পদে পদে নাজেহাল করোনা পরীক্ষা দিতে গিয়ে

টাকায় সিরিয়াল বেচাকেনা, একটিমাত্র বুথে দুর্ভোগের শেষ নেই

‘এ ভাই সরেন, সাইড দেন। আমারটা আগে করেন’— দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন মাছের হাট! চিৎকার-চেচাঁমেচিতে সরগরম চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে সিরিয়াল না পেয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে কেউ কেউ বসে পড়ছেন মাটিতে। দূর-দূরান্ত থেকে এসে সবার চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ। যাদের টাকায় দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরছে, বিদেশ থেকে বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষা করাতে এসে তাদেরই সইতে হচ্ছে অসহনীয় যন্ত্রণা।

সারাদেশের মত চট্টগ্রাম থেকে বিদেশযাত্রায় বাধ্যতামূলক হয়েছে করোনা (কোভিড-১৯) পরীক্ষার সনদ। কিন্তু চট্টগ্রামের কোভিড পরীক্ষার জন্য রয়েছে একটিমাত্র বুথ। আর বিদেশগামীদের বাধ্যতামূলক করা হয়েছে কোভিড নেগেটিভ সনদ।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন ও নমুনার জন্য ভোর থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িতে থাকতে হয় প্রবাসীদের। নিয়ম অনুযায়ী ফ্লাইটে ওঠার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা সংগ্রহ এবং ২৪ ঘণ্টা আগে রিপোর্ট দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

ইতালি, চীন, কোরিয়াসহ বেশ কিছু দেশে কোভিড পজিটিভ পাওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় অনেক বাংলাদেশিকে। তাই গত ২৩ জুলাই থেকে প্রবাসী রেমিটেন্সযোদ্ধারা ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা কিংবা পর্যটন যে কোনো কাজে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের জন্য কোভিড পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিদেশ যাত্রার আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এ সনদ সংগ্রহ করতে হবে। নমুনা দেওয়ার আগে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে টিকিট, ভিসা এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হচ্ছে। এছাড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি পয়েন্টে রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম করায় শত শত মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

অভিযোগ উঠেছে, বাড়তি অর্থ না দিলেও মিলছে না করোনার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল কিংবা সিডিউল। কারণ বিদেশযাত্রার আগের দিন এসে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। পরদিন আসলে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে পরিবারের সাথে সময় কাটাতে এসে প্রবাসীরা পড়েছেন নতুন বিড়ম্বনায়।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জানান, চলতি বছরের ২২ জুলাই থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫২ হাজার ৯৩০ জন প্রবাসীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছে ৯৪২ জনের।

তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে প্রবাসীরা নমুনা দিলে তা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডি হাসপাতালের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। চেষ্টা করা হয় নমুনা সংগ্রহের পর ল্যাবে পাঠানোর পর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই রিপোর্ট প্রদান করতে।

তবে নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের স্বল্প লোকবল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি চট্টগ্রামের যেকোনো তিনটি প্রতিষ্ঠিত ল্যাব করোনা পরীক্ষার অনুমতি পাক। ইতিমধ্যে আমরা ডেপুটি জেনারেল (স্বাস্থ্য) বরাবরে আবেদন করেছি আমাদের অসামর্থ্যতার কথা জানিয়ে।’

সাতকানিয়ার আবদুল্লাহ নোমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে থাকেন দীর্ঘদিন। দুই মাস আগে দেশে এসে এখন ফিরতে চাচ্ছেন প্রবাসে নিজ কর্মস্থলে। রোববার (৬ ডিসেম্বর) পৌনে দুই ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে পেরেছেন তিনি। লাইনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে নোমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তাদের টপকে পিছনে থাকা অনেক প্রবাসী আগে নমুনা দিতে পেরেছেন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের যেসব স্টাফ রেজিস্ট্রেশন ও নমুনা সংগ্রহের দায়িত্বে থাকেন, তারাই বাড়তি অর্থ নিয়ে আগে সিরিয়াল নিয়ে দেন। এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি এমনকি হাতাহাতিও লেগে যায়।’

এ অভিযোগের বিষয়ে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জানান, ‘এরকম অভিযোগ আমারও কানে এসেছে। আমি ডিজিএফআই ও এনএসআই সদস্যদেরও বলেছি এখানকার পরিবেশের দেখভাল করতে। আমি আবারও এ বিষয়ে নজর রাখবো।’

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!