চট্টগ্রামে পোষা পাখির বড় বাজার, মন ভরাচ্ছে বাজরিগার

প্রায় ৪ হাজার বছর আগে সৌন্দর্যকে বন্দি করতে পাখির খাঁচার সূচনা হয়েছিল। প্রাচীনকাল থেকেই পাখি মানুষের বসতির সাথে ছিল মিলেমিশে। প্রাচীন গ্রিসে প্যারাকিট পোষা হতো। রাজাদের মধ্যেও পরস্পরকে পাখি উপহার দেওয়ার রেওয়াজ ছিলো একসময়।

যদিও এদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী খাঁচায় পাখি পোষা বা এ ধরনের ব্যবসা অনেকটাই নিষিদ্ধ। তবুও মানুষ শখের কাছে বন্দি। তাই পাখি পোষায় মনের সুখ কেনেন অনেকেই। কিছু পাখি পোষ মানে, কিছু আবার বন্য। নগরসভ্যতায় পাখি পোষাকে সৌখিনতা ও রুচিশীলতা হিসেবে গণ্য করা হয়। ব্যস্ত নাগরিক জীবনের হয়ত এতটুকুই সুখ!

চট্টগ্রামে পাখি পোষার রেওয়াজ অন্তত ২০০ বছরের পুরনো। শুরুর দিকে এটি কেবল উচ্চবিত্তের শখ ছিলো। আশির দশকে প্রায় ঘরে ঘরে ময়না-তোতা রাখা হতো। অনেকে এটাকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখেন।

মানুষের শখকে ঘিরে চট্টগ্রাম নগরীতে গড়ে উঠেছে পোষা পাখি বিক্রির দোকান। চট্টগ্রাম নগরীতে বিভিন্ন এলাকায় পাখির দোকান রয়েছে। এর মধ্যে চকবাজার, বহদ্দারহাটের শুলকবহর, পাঁচলাইশের কর্ণফুলী কমপ্লেক্স ও পাখির গলি অন্যতম। রিয়াজউদ্দিন বাজারের নূপুর মার্কেট সংলগ্ন পাখির গলি নগরবাসীর কাছে ‘পাখির বাজার’ নামে পরিচিত। এখানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাখি সংগ্রহে থাকে।

খাঁচায় সাজানো হরেক পাখি। রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাখি গলি।
খাঁচায় সাজানো হরেক পাখি। রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাখি গলি।

পাখি গলিতে গিয়ে দেখা যায়, নানা জাত ও রঙের পাখির কিচিরমিচির শব্দ। এখানে পাখি কিনতে ভীড় করে চট্টগ্রাম নগরীর পাখিপ্রেমীরা। পাখি গলির দোকানগুলোতে পাখি ছাড়াও আছে খরগোশ, বিড়াল, বিদেশি কুকুরও।

মো. এরশাদ নামে এক ক্রেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পাখি পোষা আমার শখ। বাসায় আমার আরো ৪ জোড়া পাখি আছে। এখন কিনলাম ১ জোড়া কোকোটাইল পাখি। পাখির জন্য খাবারও নিলাম। পাখি পুষতে যারা ভালোবাসে তারা পাখি গলিতে আসলেই নানারকমের পাখি পেতে পারেন।’

লাবণ্য সরকার নামে এক ক্রেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘আমি বাজরিগার ও লাভবার্ড পুষে আসছি ২ মাস ধরে। এখানে এসেছি পাখিদের খাবার কিনতে। পাখি দেখতে সুন্দর ও ঘুম ভাঙতে পাখির ডাক শুনতে ভালো লাগে আমার। তাই পোষা পাখির প্রতি এতো টান।

মো. ইলিয়াস ও তার সাথে ৫ বছরের কন্যা মাহিমা আসেন পাখি কিনতে। মাহিমা জানায়, ‘পাখি আমার খুব প্রিয়, তাই বাবার সাথে পাখি কিনতে এসেছি। আমরা বাজরিগার পাখি কিনবো।’

ফিঞ্চ পাখি
ফিঞ্চ পাখি

বিক্রেতা মো. রুবেল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানুষ এখন খাঁচায় পাখি ও পায়রা পুষতে খুব ভালোবাসে। মানুষের মধ্যে পাখির চাহিদাও বেড়েছে অনেক। তবে এখন বাজরিগার পাখির চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।’

তিনি বলেন, ‘সব ধরনের পাখিই জন্মের ৬ মাস পর ডিম দেয়। আমরা দেশি পাখি যেমন ময়না, টিয়া, বাবুই এসব পাখি বিক্রি করি না। এগুলো বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাখি বিক্রির লাভ কেমন হবে তা নির্ভর করে কতটা বিক্রি হলো তার ওপর। বিক্রি হওয়া নির্ভর করে মানুষের শখের ওপর। তবে জোড়াপ্রতি পাখি বিক্রিতে ৫০-৬০ টাকা লাভ করি আমরা।’

বাড়িতে পাখি পোষেন শাহরিন মাহবুবা। তিনি বললেন, ‘চার দেয়ালের মাঝে বন্দি আমার শহুরে জীবন। মোটামুটি প্রাথমিক ধারণা নিয়ে ঘরে পালা দুই জোড়া বাজরিগার পাখি কিনে নিলাম। বনের পাখি পালন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। বাজারিগার পাখিগুলো খাঁচাতেই বড় হয়। ওরা খাঁচা থেকে পালিয়ে গেলেও নিজের মতো করে নিজেকে বাঁচাতে জানে না। মিক্সড ফুড (বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা), কলমি শাক, পাট শাক হল তাদের আহার। দুইদিন পর পর খাবার পানি, খাবারের পাত্র আর খাঁচার নিচের ট্রেটুকু ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে দিলেই হয়। এটুকুই যত্ন।’

তিনি বলেন, ‘ওরা ঠোঁটে ঠোঁটে কথা বলে, খাঁচার এ মাথা থেকে ওমাথা ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, আপনি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবেন। সময় যে কখন গড়িয়ে গেছে আপনি টেরও পাবেন না।’

এছাড়াও চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী কমপ্লেক্সে পাখির দোকান ঘুরে দেখা যায়, সেখানে যথেষ্ট সংখ্যক পাখির সংগ্রহ রয়েছে। তবে এর দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। এখানেও মোটামোটি ক্রেতা সমাগম হয় বলে জানান বিক্রেতা মনজুর।

নগরীর বহদ্দারহাটের শুলকবহর ও চকবাজারেও রয়েছে পাখির দোকান। তবে তাদের সংগ্রহ বেশ সীমিত। মূলত পাখির খাদ্য সংগ্রহে রাখেন তারা।

পাখির দরদাম
কোকোটাইল পাখি জোড়াপ্রতি ৫০০০, বাজরিগার পাখি ৫০০-১০০০, ফিঞ্চ ৭০০, ডায়মন্ড ডাব ১২০০,অস্ট্রেলিয়ান বাচ্চা ঘুঘু ৮০০-১০০০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ান বড় ঘুঘু ১২০০ টাকা, বাচ্চা লাভবার্ড সর্বনিম্ন ৩০০০ টাকা। জাত অনুযায়ী লাভ বার্ডের দাম ভিন্ন হয়।

তবে জানা যায় আমাদের দেশে কিছু জাতের লাভবার্ড রয়েছে যার জোড়া প্রতি দাম পড়ে ১ লাখ টাকারও বেশি। কোয়েল ৭০-৮০, কিং পায়রা ৪০০০-৫০০০, লাক্ষা পায়রা ২০০০-২২০০, সিরাজি পায়রা ৩০০০- ৩২০০। এছাড়াও আছে তিথি মুরগি ২০০০ থেকে ১২০০, টার্কি মুরগি ১০০০ টাকা, এছাড়াও রয়েছে খরগোশ। বাচ্চা খরগোশ জোড়া ৫০০ টাকা, বড় খরগোশ ৭০০-৮০০ টাকা।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!