চট্টগ্রামে পিডিবির কর্তা সেজে কর্মচারী ও মিস্ত্রির চাঁদাবাজির চক্র (ভিডিও)

মিটার টেম্পারিংয়ের ভয় দেখিয়ে ঘাবড়ে দেয় গ্রাহককে

একজন সাজেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। আরেকজন মিটার ইন্সপেক্টর কিংবা মিটার রিডার। হোটেল, রেস্তোরাঁ কিংবা বাসায় ঢুকে মিটার চেক করেন তারা। চেক করতে গিয়েই মিটার ব্যবহারকারীর ওপর সওয়ার হন। উদ্দেশ্য টাকা হাতানো। সবার বিরুদ্ধেই তাদের একই অভিযোগ— মিটার টেম্পারিং।

কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই বিদ্যুৎ গ্রাহককে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন মিটার টেম্পারিংয়ের কথিত দায় চাপিয়ে। ঘাবড়ে যাওয়া গ্রাহককে একপর্যায়ে বলেন, ‘মিটার খুলে নিয়ে যেতে হবে। করতে হবে যাচাই-বাছাই।’

এর পরপর এই ভুয়া তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কিংবা মিটার রিডার ও ইন্সপেক্টরের হাত থেকে বাঁচাতে সেখানে জুটে যায় দালাল। গ্রাহকের কাছে প্রস্তাব দেন টাকার! এই টাকার অংক কখনো তিন লাখ, কখনো বা আরও বেশি। শেষমেশ লাখের কাছাকাছিতে রাজি করানো হয় গ্রাহককে। এই টাকা হাতিয়ে মিটার খুলে নিয়ে যাওয়ার কাণ্ড থেকে ‘রেহাই’ দেওয়া হয় ভুক্তভোগী গ্রাহককে।

চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দুই বিভাগের তিন কর্মচারী ও বহিরাগত এক ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রীর চক্র এভাবেই টাকা হাতাচ্ছে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছ থেকে। শেষমেশ খেয়েছে ধরা। তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থাও।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের হালিশহর থানার ঈদগাঁও কাঁচারাস্তা মাথা এলাকায় ‘আপন বাড়ি’ হোটেল এন্ড মেজবান নামের একটি খাবারের দোকানের মিটারে টেম্পারিংয়ের অভিযোগ তুলে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে চক্রটি। পরে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় তাদের সঙ্গে দফারফা হয়। ২০ হাজার টাকা অগ্রীম টাকা তুলে দেয় ওই চক্রের হাতে। বাকি ১ লাখ টাকা পরিশোধের আগে তারা জানতে পারেন এই শহরের বিভিন্ন দোকান ও হোটেল মালিকদের জিম্মি করে অবৈধ উপায়ে চাঁদাবাজি করছে তারা।

চাঁদাবাজির সময় একটি প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ফুটেজে এ চারজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে এই ফুটেজটি।

ওই সিসিটিভি ফুটেজে চট্টগ্রামের মাদারবাড়ি বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের লাইনম্যানের হেলপার শেখ নাছির উদ্দিন, আগ্রাবাদ বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের হেলপার মো. সাদ্দাম, একই অফিসের অস্থায়ী হেলপার মামুন প্রকাশ মোরশেদকে দেখা গেছে। মামুনের পাশে থাকা ব্যক্তিটি তাদের সহযোগী। তিনি চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ বিভাগের কোথাও কর্মরত নেই। তার পরিচয়ও জানা যায়নি।

জানা গেছে, এদের মধ্যে মামুন বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বিদ্যুতের গ্রাহক ঠিক করে ‘অভিযানের’ সিদ্ধান্ত দেওয়া। বাকিরা তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হানা দেয় গ্রাহকের কাছে। অভিযানে চার সদস্যের মধ্যে শেখ নাছির উদ্দিনকে অন্য সদস্যরা পরিচয় করান আগ্রাবাদ অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে।

হালিশহর ও পাহাড়তলী এলাকায় বেশ কিছু হোটেলে, দোকান মিটারে টেম্পারিংয়ে কথা বলে হয়রানি করার একাধিক অভিযোগ উঠে এ চারজনের বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে আপন বাড়ি হোটেলের মালিক আক্তার হোসেন বলেন, ‘ওইদিন যারা আমার হোটেলে এসেই মিটারের ত্রুটি রয়েছে বলে টাকা নিয়ে গেছে তাদের বিরুদ্ধে সিসিটিভি ফুটেজসহ একটি অভিযোগ দিয়েছি পিডিবি আগ্রাবাদ অফিসে। পরে সেখানে থেকে পিডিবি লোক এসেই আমার মিটার চেক করে। তারা মিটারের কোনো সমস্যা পায়নি। শুনেছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।’

জানতে চাইলে মাদারবাড়ি বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈনুদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত ১১ এপ্রিল দুপুরে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে অংশগ্রহণ নেওয়া শেখ নাছির উদ্দিন আমার বিভাগের কর্মচারী হলেও অপরাধটি ঘটেছে অন্য ডিভিশনে। আমিও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আগ্রাবাদ হেড অফিসের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্ত তিনজেনর বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কাজ করতে না পারে।’

এমএ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!