চট্টগ্রামে পাড়ায় পাড়ায় প্রবাসী আতঙ্ক

প্রায় দুই বছর পর দেশে ‍ফিরেছেন দুবাই প্রবাসী নাজিম উদ্দিন (ছদ্মনাম)। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) চট্টগ্রামে ফিরে তিনি উঠেন চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ার ভাড়া বাসায়। তবে নাজিমের ঘরে ফেরা নিয়ে শুরু হয় কানাঘুষা। পরদিন শুক্রবার। নাজিম যেন জুমার নামাজ পড়তে বের হতে না পারেন এজন্য পাড়ার ছেলেরা পাহারা বসিয়েছেন নাজিমের ঘরের সামনে। অবশ্য বাসা থেকে নিজ থেকেই আর বের হননি প্রবাসী নাজিম।

শুধু নাজিম নয়, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পরপরই প্রবাসীদের বাড়ি ফেরা নিয়ে উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে পাড়ায় পাড়ায়। নিজেদের নিরাপদ রাখতে দেশে ফিরে এলেও প্রবাসীদের মাধ্যমেই এ পর্যন্ত বেশিরভাগ রোগী আক্রান্ত হয়েছে।

অতীতের তুলনায় এ হারে প্রবাসীদের দেশে ফিরে আসার ঘটনা এবারই প্রথম। এ কারণে দেশজুড়ে প্রবাসীরাই এখন আতংকের প্রধান কারণ। যেখানেই প্রবাসী আসার খবর পৌঁছেছে, সেখানেই ‘হানা’ দিয়েছে প্রশাসন। কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ না মানলে অনেক প্রবাসীকে গুণতে হয়েছে জরিমানাও। প্রবাসীদের খোঁজেই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নির্ধারিত ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে না চলায় চট্টগ্রামে এই প্রবাসীকে জরিমানা করে প্রশাসন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নির্ধারিত ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে না চলায় চট্টগ্রামে এই প্রবাসীকে জরিমানা করে প্রশাসন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত হওয়া বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের গণহারে দেশে ফেরা আতংক সৃষ্টি করেছে। চট্টগ্রামের প্রত্যেক উপজেলার মানুষ প্রবাসে থাকে। চট্টগ্রামে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা লোকজনের সংখ্যাই বেশি। মধ্যপ্রাচ্যে ইউরোপের তুলনায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম। তবুও আমরা প্রস্তুতি কিংবা সচেতনতামূলক কর্মসূচির কোন ঘাটতি রাখছি না।’

এ বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আকাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রবাসীদের গণহারে দেশে আসার বিষয়টি শুরু থেকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আরও ভাল হতো। এখন তাদের নিয়েই বেশি আতংকে থাকতে হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ দিনে চট্টগ্রাম হয়ে দেশে ফিরেছেন ৯৭৩ জন। যারা বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তবে এর আগে যারা দেশে ফিরেছেন, তাদের অনেকেরই এখন খোঁজ মিলছে না। যাদের খোঁজ মিলছে, প্রশাসন তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে যেতে বাধ্য করছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, আত্মগোপনে থাকা প্রবাসীর খোঁজ মিললে প্রতিবেশীরাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রশাসনকে সেটা জানিয়ে দিচ্ছেন। গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে হোম কোয়ারেন্টাইন মানতে না চাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রফেরত এক ব্যক্তির (৭৫) বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে নালিশ করেছেন তারই ছেলে। পরে বোঝানোর পর তিনি হোম কোয়ারেন্টাইন মানবেন বলে অঙ্গীকার করেন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘স্থানীয় পর্যায়ে প্রবাসীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের প্রধান করে প্রতি ওয়ার্ডে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এসব বিষয় মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতদিন নির্বাচনের কারণে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে একটু সমস্যা ছিল। নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় তারা সক্রিয়ভাবে এই সমস্যা নিয়ে কাজ করতে পারবে।’

পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রবাসীরাই আমাদের এখন মূল বিষয়। তারা দেশে ফিরলেই আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। যারা শেষ ২০ দিনে বিদেশ থেকে এসেছেন তাদের ভবনগুলোতে আমরা স্থানীয় সমাজ কমিটির মাধ্যমে নজরদারি রেখেছি। তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে স্থানীয়ভাবে তদারকি জোরদার করা হয়েছে।’

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!