চট্টগ্রামে পাহাড়ের টিলা কেটে সর্বনাশা বাঁধ, ইকবালসহ পিএইচপির তিনজন মামলার জালে

মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে আমের বাগানে যায় খালের পানি

পাহাড়ের টিলা কেটে বাঁধ দিয়ে পাহাড়ি প্রাকৃতিক ছড়া বন্ধ করে দিল পিএইচপি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস। পরিকল্পিতভাবে ওই পাহাড়ি খাল বা ছড়ার স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করে কৃত্রিম জলাধার— যা দিয়ে তাদের আমের বাগানে পানি দেওয়া হয়। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের রাস্তা ও পানি নিষ্কাশনের ছড়া ব্যবহার করতে না পেরে এলাকাবাসী পড়ে গেছে চরম ভোগান্তিতে। মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে খালের ওপর বাঁধ দিয়ে সেই পানি নিজেদের কাজে ব্যবহার করার এমন ঘটনা জেনে পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিন অনুসন্ধানে যায়। এরপর ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত মুচলেকা দেওয়ার পরও সেই বাঁধ না সরানোয় শেষ পর্যন্ত পিএইচপির তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলায় যেতে বাধ্য হল পরিবেশ অধিদপ্তর।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড পাহাড়ে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস কারখানার পূর্ব পাশে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের নির্দেশে এমন কাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে থানায় দেওয়া অভিযোগে জানা গেছে।

বুধবার (২ মার্চ) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানায় দায়ের করা মামলায় পিএইচপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, কারখানার আমবাগান প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. আলফাতুন ও কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অভিজিৎ চক্রবর্তীকে আসামি করা হয়েছে।

জানা গেছে, পাহাড়ি টিলা কেটে বাঁধ দিয়ে পাহাড়ি প্রাকৃতিক ছড়া বন্ধ করে দেওয়ার খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল গত ৩০ জানুয়ারি ওই এলাকা পরিদর্শন করার পর ঘটনার সত্যতা পায়।

এরপর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কারখানা কর্তৃপক্ষের শুনানি শেষে সাত দিনের মধ্যে বাঁধটি সরিয়ে পানির প্রবাহ সচল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সময় ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড না করার জন্য ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা বা মুচলেকাও দেয় পিএইচপির কর্মকর্তারা। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সেই সময় এই নির্দেশ অমান্য করলে পরিবেশ আইনে মামলা করা হবে বলেও সতর্ক করে দেয় ঘটনার সঙ্গে জড়িত পিএইচপি কর্মকর্তাদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কারখানাটির আমবাগান প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. আলফাতুন ও পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অভিজিৎ চক্রবর্তী।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই শুনানি শেষে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা পালন করা হয়েছে কি না, সেটি দেখার জন্য নির্দেশের সাত দিন পর আবার ঘটনাস্থলে যান পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা দেখেন, পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস কারখানা কর্তৃপক্ষ পাহাড়ি প্রাকৃতিক ছড়ায় দেওয়া বাঁধটি অপসারণ করেনি।

এরপর বুধবার (২ মার্চ) সন্ধ্যায় পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আশরাফ উদ্দিন বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করেন পিএইচপি ফ্লোট গ্লাসের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মফিদুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এনফোর্সমেন্টের শুনানি শেষে যে রায় দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর—সেটি হলো সাতদিনের মধ্যে খালের পানিতে দেওয়া বাঁধ সরিয়ে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ঠিক করতে হবে। এ শর্তে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে তারা অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছে।

এদিকে এর আগে এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। বেআইনিভাবে সরকারি রাস্তা ও পানির ছড়া দখলে নিয়ে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস তাদের কারখানার আওতাভুক্ত করে দখল করেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন তারা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!