চট্টগ্রামে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে নজিরবিহীন কাণ্ড, হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ

বোর্ডের সিদ্ধান্ত কে বদলে দিচ্ছেন— প্রশ্ন নেতাকর্মীদের

চট্টগ্রামের একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ঘটেছে নজিরবিহীন এক ঘটনা।

হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আলমগীরকে দলের মনোনীত প্রার্থী ঘোষণার ৯ ঘন্টা বাদেই তার মনোনয়ন বাতিল করে মনোনয়ন দেওয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহনেওয়াজ চৌধুরীকে। সেটাও আবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে।

দাবি করা হচ্ছে, শুরুতেও ধলই ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শাহনেওয়াজ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। রহস্যজনকভাবে মনোনয়ন বোর্ডে নেওয়া সেই সিদ্ধান্ত বদলে দিয়ে মো. আলমগীরকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হয়।

বুধবার (২৭ অক্টোবর) বিকেল ৫টা নাগাদ আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন (৩য় ধাপ) সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে মনোনীতদের তালিকায়ও ধলই ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মো. আলমগীরের নাম রয়েছে।

তবে এই ধরনের অভিযোগ উঠতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা। পরে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কেবিএম শাহজাহানের পরামর্শে হোয়াটসঅ্যাপে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানান শাহনেওয়াজ চৌধুরী। এর কয়েক ঘন্টা পরেই দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া শাহনেওয়াজ চৌধুরীকে ফোন করে ধলই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে জানান। এ সময় আগের ঘোষণায় ভুল ছিল বলেও জানান তিনি। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এমনটাই জানিয়েছেন শাহনেওয়াজ চৌধুরী।

শাহনেওয়াজ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন দলের জন্য রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, জেল খেটেছি। এর বিনিময়ে কিছুই চাওয়ার ছিল না আমার, চাইও নি। তবে এবার এলাকার মানুষদের চাপে আমি মনোনয়ন চাই। তবে আমি পার্টি অফিসে যাইওনি। নেতাকর্মীরাই নিজ থেকে সব করেছে। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে আমাকে নিশ্চিত করা হয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আমাকে। এর কিছুক্ষণ পরে দেখি মো. আলমগীর সাহেবের নাম ঘোষণা হয়েছে। এটা নিয়ে একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম ও কেবিএম শাহজাহান আমাকে পরামর্শ দেয় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাতে। কিন্তু আমি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলার সাহস পাইনি। যদিও আমি আগেও বিভিন্ন সময়ে উনার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেছি। শেষে উনাকে হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইনে দেখে আমি দুপুর ২ টা ২৫ মিনিটের দিকে একটা ম্যাসেজ দিই। যেটা উনি ৩ টা ১৮ মিনিটের সময় ‘সিন’ করেন।’

গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ৮ নেতা— যার অন্যতম ছিলেন শাহনেওয়াজ চৌধুরী।
গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ৮ নেতা— যার অন্যতম ছিলেন শাহনেওয়াজ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু সেটা আমি আর খেয়াল করিনি। যখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই, তখন এটা আমার চোখে পড়ে। আমি তখন আমার বন্ধু ইউনুস গণিকে বললাম যেহেতু নেত্রী ‘সিন’ করেছে মনে হয় কিছু একটা হবে। ইউনুস গণি পুরো সময় আমার সাথেই ছিল। এর পরে চট্টগ্রাম এসে গাড়ি থেকে নামার পর রাত ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া আমাকে ফোন করে জানান ধলই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে আগে ভুল হয়েছিল কিছু একটা। আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। আমি যেন আগামীকাল (২৭ অক্টোবর) দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করি।’

এদিকে ধলই ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের তালিকার একটা ছবি অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে শাহনেওয়াজ চৌধুরীর নামের ওপর টিক চিহ্ন দেওয়া থাকলেও সেটি কেটে দিয়ে মো. আলমগীরের নামে টিক চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। সেই ছবিকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা দাবি করছেন, মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থে কেউ বদলে দিয়েছেন।

এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য ইউনুস গণি চৌধুরী বলেন, ‘ছবিটি আমরাও দেখেছি। এমনটা হাটহাজারীর অনেক ইউনিয়নেই হয়েছে বলে আমরা ধারণা করি। সব ইউনিয়নে হয়েছে এমন নয়। যেহেতু বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে আমরা আশাবাদী এসব বিতর্কের অবসান ঘটবে।’

প্রসঙ্গত শাহনেওয়াজ চৌধুরী আশির দশকে চট্টগ্রামের আলোচিত ছাত্রনেতা ছিলেন। চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই ছাত্রনেতা পরে কিছুকাল ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। হাটহাজারীসহ উত্তর চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য আলোচিত এই নেতাকে দীর্ঘসময় কারাগারেও থাকতে হয়েছে। অভাবনীয় এই ঘটনায় নতুন করে আলোচনার তুঙ্গে এলেন শাহনেওয়াজ চৌধুরী।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!