চট্টগ্রামে নিখোঁজ স্কুল ছাত্র সাকিব কুমিল্লায় উদ্ধার, করতো হোটেল বয়ের কাজ

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাকিব সাহাবের (১৫) নিখোঁজ রহস্য অবশেষে উদঘাটন হয়েছে। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের একটি খাবার হোটেল থেকে কুমিল্লা সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ (ডিবি)।

বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে তাকে উদ্ধার করা পর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়। পরে সাকিবের পিতার জিম্মায় দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মীর্জা সায়েম মাহমুদ।

মীর্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, ‘১৬ জুন নিজ থেকে নিখোঁজ হয় স্কুল ছাত্র সাকিব। সরাসরি সে সিলেট শাহজালালের মাজারে যায়। সেখানে একদিন থাকার পর বাসে করে চট্টগ্রাম আসার পথে কুমিল্লা সদরে নেমে যায়। সেখান থেকে মনোহরগঞ্জ নামে একটি জায়গায় খাবার হোটেলে বয়ের কাজও নেয়। কয়েকদিন আগে এক চায়ের দোকানদার থেকে তার মায়ের সঙ্গে দেড় মিনিট কথা বলে। সে সময় আমরা অভিযান চালালেও তার সন্ধান পাইনি।’

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি আমরা নজরদারি করলেও তার খোঁজ পাচ্ছিলাম না। তবে নিজের কাছে টাকা কম থাকায় গত পরশু তার মায়ের সোনার বালা জোড়া বিক্রি করতে যায় একটি দোকানে। কিন্তু দোকানদার চট্টগ্রাম যাওয়ার ভাড়াসহ সব মিলিয়ে এক হাজার টাকা দিয়ে একটি রশিদ দিয়ে দেন। কিন্তু তাকে বালার সম্পূর্ণ দাম দেননি। এরপর সে তার মাকে ফোন করলে সেই নম্বর ট্র্যাকিং করে মঙ্গলবার রাতে তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়। পরে কুমিল্লা সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় সাকিবের পিতা সাহাব উদ্দিন সাকিবকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে বুধবার সকালে রওনা দেন। বিকেলে চট্টগ্রাম পৌঁছালে আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে সাকিবকে তার পিতার জিম্মায় দিয়ে দিই।’

এর আগে গত ১৬ জুন স্কুলে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় সাহাব সাকিব। এ ঘটনায় তার মামা পাঁচলাইশ থানায় একটি জিডি করেন। এরপর বিষয়টি তদন্তে নামে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই সময় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছিল, ওইদিন সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দুটি পাঞ্জাবি, বেল্টসহ একটি প্যান্ট, একটি সাবান, টুথপেস্ট, ব্রাশ ও কলম সঙ্গে নিয়ে গেছে সাকিব। তবে স্কুলের ব্যাগসহ বের হলেও স্কুলের পরিচয়পত্র ও বইপত্র সে বাসায় রেখে যায়। এছাড়া নিয়মিত নামাজ পড়া এ স্কুল ছাত্র তাবলীগ জামাতের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। তাবলীগের বৈঠকেও অংশ নিতো নিয়মিত। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে তাবলীগের প্রশংসাও করতো সে। ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েই সে স্কুলে যাওয়ার নাম করে তাবলীগে চলে গেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছিল, সাকিব, সুমাইয়া ও তার ছোট ভাইকে নিয়ে প্রতিদিনের মত সকাল সাতটায় নগরীর মেহেদীবাগের বাসা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নাসিরাবাদে যান তার মা। নাসিরাবাদের সাউথ পয়েন্ট স্কুলে সুমাইয়া দশম শ্রেণিতে আর সাকিব নবম শ্রেণিতে পড়ে। আর এই সড়কের প্রায় ১০০ হাতের মধ্যে একই স্কুলের প্রাইমারি শাখায় পড়ে তাদের ছোট ভাই। প্রতিদিনের মত সাকিবের মা সাউথপয়েন্ট স্কুলের সামনে সাকিব ও সুমাইয়াকে নামিয়ে দিয়ে অদূরেই অবস্থিত প্রাইমারি শাখায় ছোট ছেলেকে দিতে যান। এ সময় বড় বোন সুমাইয়া স্কুলে প্রবেশ করলেও সাকিব যে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মেহেদীবাগ থেকে আসে সেটি নিয়ে চলে যায়। পরে স্কুল ছুটির পরও বোন ও মা সাকিবকে স্কুলে না পেয়ে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেন। সব জায়গায় খুঁজেও সাকিবের খোঁজ না পেয়ে রাতে তার মামা আতাউর রহমান পাঁচলাইশ থানায় একটি জিডি করেন।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!