চট্টগ্রামে নারী পুলিশের বর্ণাঢ্য আয়োজন, সংবর্ধিত হলেন দশ পুলিশ সদস্য

জাতীয় জরুরি সেবার কল সেন্টারে ৯৯৯-এ জরুরি প্রয়োজনে সেবা দিয়ে থাকেন পুলিশ কনস্টেবল নুসরাত জাহান। সারাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ ৯৯৯-এ সেবা পেতে ফোন করেন প্রতিদিন। হোক গুরুত্বপূর্ণ বা কম গুরুত্বপূর্ণ তবুও হাসিমুখে সব অভিযোগ শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করিয়ে দেন নুসরাত। তার এই ত্বরিত দায়িত্বশীল ভূমিকায় অনেকে রক্ষা পেয়েছেন নানা দুর্ঘটনা থেকে। অনেক বড় অপরাধমুলক ঘটনা থেকেও নুসরাত রক্ষা করেছেন সাধারণ মানুষকে।

আবার ফেসবুকে শিক্ষার্থীকে ইভ টিজিংয়ের খবর দেখে নিজ উদ্যোগেই জড়িতদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। তেমনি মাদরাসা ছাত্রীর ধর্ষণ মামলার আসামিকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় গিয়ে সেই অভিযুক্ত নিহতও হয়েছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনের অভিযানে। এছাড়া পাখি, জুলেখা, সানু, খালেদা ও রহিমার মত অসংখ্য মাদক মামলার আসামিদের সেই পথ থেকে ফিরিয়ে এনে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসা ধরিয়ে দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয় তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করেন ওসি মহসীন।

নারী পুলিশ অ্যাওয়ার্ড-২০১৯
নারী পুলিশ অ্যাওয়ার্ড-২০১৯

শুধু কনস্টেবল নুসরাত বা ওসি মহসীন না, এরকম জনবান্ধব দশজন পুলিশ কর্মকর্তাকে কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্ক। প্রথমবারের মত চট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (আইসিসি)। সেখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নারী পুলিশ অ্যাওয়ার্ড ২০১৯ অর্জনকারী দশ পুলিশ সদস্যকে পুরস্কার তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান। এবার চতুর্থবারের মতো নারী পুলিশ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে। অনুষ্ঠানের পূর্বে প্রদর্শন করা হয় প্রয়াত অতিরিক্ত আইজিপি রওশন আরার উপর বিশেষ তথ্যচিত্র।

বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সারাদেশ থেকে ১০ চৌকস পুলিশ সদস্য এবার নারী পুলিশ অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ অর্জন করেছেন। এদের মধ্যে ৮ জন উর্ধ্বতন নারী পুলিশ কর্মকর্তা, একজন নারী পুলিশ কনস্টেবল এবং একজন পুরুষ পুলিশ পরিদর্শক এই পুরস্কার জিতেছেন।

পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন, সাহসিকতায় র‌্যাব-৮ (বরিশাল)-এর অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) শম্পা রাণী সাহা।

‘এক্সেলেন্স ইন সার্ভিস’ ক্যাটাগরিতে রাজারবাগ বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার মাফুজা বেগম, পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা, ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সিটিটিসি) মাহ্ফুজা লিজা ও সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফাহমিদা হক শেলী।

‘প্রমোশন অফ জেন্ডার সেনসিটিভিটি’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার নিচ্ছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।
‘প্রমোশন অফ জেন্ডার সেনসিটিভিটি’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার নিচ্ছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।

‘কমিউনিটি সার্ভিস’ ক্যাটাগরিতে বরগুনার জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্রের এসআই জান্নাতুল ফেরদৌস ও মৌলভী বাজার জেলা থেকে সংযুক্ত জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯, টিঅ্যান্ডআইএম এর কনস্টেবল নুসরাত জাহান। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (স্বাস্থ্য ও শিক্ষা) তাপতুন নাসরীন ‘পিসকিপিং মিশন’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পান। ‘প্রমোশন অফ জেন্ডার সেনসিটিভিটি’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পান কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।
এছাড়া মরেণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয় বাংলাদেশ পুলিশ স্টাফ কলেজের সাবেক রেক্টর প্রয়াত অতিরিক্ত আইজিপি রওশন আরা বেগমকে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল. সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান, মহা পুলিশ পরিদর্শক ড. জাবেদ পাটোয়ারী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল আলম নিজামী, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, পুনাক সভাপতি হাবিবা জাবেদ।স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম।
অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন নারী পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। রোদ বৃষ্টি ঝড় কিংবা যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে নারী পুলিশ সদস্যরা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ৯৯৯ এর সেবায় সার্বক্ষণিক নারী সদস্যরা সারাদেশের মানুষকে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এজন্য আজ ৯৯৯ সেবায় দায়িত্বরত একজন নারী কনস্টেবলও পুরস্কার অর্জন করেছে।’

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে নারী পুলিশের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। বঙ্গবন্ধু নারীদর এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এখন সর্বত্র নারীদের জয় জয়কার। নারীদের এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের নারীরা এখন হিমালয় পর্বতে গিয়েও বাংলাদেশের পতাকা ওড়াচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে নারী সদস্যরা সাফল্যজনক ভুমিকা রাখছে।’

দেশের পুলিশ বিভাগে ২৩ হাজার নারী সদস্য কাজ করেন। তার মধ্যে ৭২ জন পুলিশ সুপার ও তদুর্ব্পু কর্মকর্তা। বাৎসরিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের আয়োজনে তাদের এ পুরস্কার দেয়া হয়।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!