চট্টগ্রামে নামি শিল্পগোষ্ঠীর ৪৬ কোম্পানি, ৪০টিই কর ফাঁকি দিচ্ছিল বছরের পর বছর

চট্টগ্রামের একটি বড় শিল্পগোষ্ঠীর একজন পরিচালক একইসঙ্গে ৪৬টি কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চট্টগ্রামভিত্তিক বৃহৎ এই শিল্পগোষ্ঠীর সেবা, উৎপাদন, ট্রেডিং ব্যবসাসহ নানা ধরনের ব্যবসা আছে। কিন্তু এই ৪৬টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র চারটি কোম্পানির কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) আছে। বাকি ৪০টি কোম্পানিই কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়ে আসছে বছরের পর বছর।

এতো বছর কর ফাঁকি দিয়ে আসা এই শিল্পগোষ্ঠীর বাকি ৪০টি কোম্পানিকে এখন টিআইএন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। এরই মধ্যে ২০টি কোম্পানিকে টিআইএন দেওয়া হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও করের আওতায় আনা হচ্ছে।

গত এক বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করপোরেট কমপ্লায়েন্স গঠিত টাস্কফোর্স এমন ৮০ হাজার নতুন কোম্পানির খোঁজ পেয়েছে, যারা বছরের পর বছর ধরে কর ফাঁকি দিয়ে আসছে। অথচ কোনো প্রতিষ্ঠান চালু করার সময়েই টিআইএন নিয়ে কর দেওয়া বাধ্যতামূলক।

এনবিআরের টাস্কফোর্স এমন কোম্পানিরও খোঁজ পেয়েছে, যারা ৫০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসরেও কখনোই কর দেয়নি। আবার দেখা গেছে, অনেক কোম্পানির ঠিকানা একটিই। ঢাকার কারওয়ান বাজারের দুটি ঠিকানা ব্যবহার করে খোলা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোম্পানি। অথচ বাস্তবে ওই ঠিকানায় এসব কোম্পানির অস্তিত্বই পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) সমীক্ষা অঅনুসারে, বাংলাদেশে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪০০ প্রতিষ্ঠান কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত। এত কোম্পানির নিবন্ধন থাকা সত্ত্বেও করের আওতায় আছে মাত্র ৭৮ হাজার কোম্পানি। অর্থাৎ প্রায় ১ লাখ কোম্পানি বছরের পর বছর কর ফাঁকি দিয়ে আসছে।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর দেওয়ায় কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহ তৈরি হয় মূলত কয়েকটি কারণে। যেমন করপোরেট করের উচ্চহার, হয়রানির ভয় এবং জটিল করব্যবস্থা। পদে পদে দিতে হয় অগ্রিম কর ও আগাম ভ্যাটসহ নানা ধরনের কর। অনেক কোম্পানির মালিক মনে করেন, একবার কর দিলে হয়রানির সম্মুখীন হতে হবে।

এদিকে কিভাবে এতদিন প্রায় ৮০ হাজার কোম্পানি কর ব্যবস্থার আওতার বাইরে ছিল তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সেই সঙ্গে এর দায় সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের বলে মনে করে টিআইবি।

সোমবার (২ আগস্ট) টিআইবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে করের আওতার বাইরে থাকা এসব কোম্পানি শনাক্ত এবং কর ব্যবস্থার আওতায় আনার এনবিআর পরিচালিত টাস্কফোর্সের চলমান প্রক্রিয়া ও উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর করপোরেট কমপ্লায়েন্স নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের করজালের বাইরে থাকা বিপুল পরিমাণ কোম্পানি খুঁজে বের করাই প্রমাণ করে দেশে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও সুশাসনের ঘাটতি কতটা প্রকট।’

তিনি বলেন, একটি নিবন্ধিত কোম্পানি অর্ধশতাব্দী ধরে ব্যবসা করছে অথচ কখনোই কর দেয়নি, আবার মাত্র দুটি ঠিকানায় ১৪০০ কোম্পানির নিবন্ধন কিংবা একই ব্যক্তি ৪৬টি কোম্পানির পরিচালক কিন্তু টিআইএন আছে মাত্র ৪টির! এসব তথ্য রূপকথার অনিয়ম ও আর্থিক অব্যবস্থাপনাকেও হার মানায়।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!