চট্টগ্রামে নদীপথে চলছে জাহাজের ‘চানাচুর’ চুরি, নতুন ব্রিজের নিচে বসছে ক্যামেরা

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে থাকা জাহাজ থেকে আমদানি স্ক্র্যাপ চোরাইপথে বিক্রি নিয়ে শিকলবাহার ‘তাতিয়া পুকুরঘাট’ এলাকায় প্রতি রাতে ঘটছে তুলকালাম কাণ্ড। চোরাকারবারিদের ভাষায় লোহা অ্যালুমিনিয়ামের এসব স্ক্র্যাপ গুঁড়াকে বলা হয় ‘চানাচুর’। ক’দিন আগেও ‘এমটি আল বাহার’ নামের জাহাজ থেকে শত শত বস্তা ‘চানাচুর’ নামানো নিয়ে রাতে দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার ঘটে।

তবে পুলিশ জানিয়েছে, শিকলবাহা এলাকার সবকটি ঘাট ও নতুন ব্রিজের নিচে পুলিশের পক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। অফিসে বসে পুলিশ সব ঘাটগুলো দিন-রাত মনিটরিং ও নজরদারি করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিকলবাহার তাতিয়া পুকুরঘাটের একটি সূত্র জানা গেছে, এই ঘাটে মূলত এরশাদ, নাজিম, সোহেল ও পিন্টুর গ্রুপ চোরাই পণ্য তোলেন। তাদের মধ্যে বনিবনা হলে নিরবে কাজ চলে। আবার দু’পক্ষ মিল না হলে নদীতে নৌপুলিশের অভিযান ও স্থলে ফাঁড়ি পুলিশের টহল দেখে লোকজন। এসব কাজ মূলত যারা করেন তারা সকলেই প্রভাবশালী। এলাকার কেউ সহজে তাদের বিষয়ে মুখ খুলে না।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, শিকলবাহা-ভেল্লাপাড়া শাখা খাল, দক্ষিণ পাড়ের নতুন ব্রিজের নিচ, তাতিয়া পুকুর পাড়, শিকলবাহা ব্লকের পাড়, ভেল্লাপাড়া ব্রিজের নিচ, শিকলবাহা খাল সংলগ্ন প্রতিটি জেটিতেই রাতে সময় সুযোগ করে লাখ লাখ টাকার চোরাই মালামাল আনলোডিং হচ্ছে। ঘাটে চোরাই পণ্য নিয়ে চলে ‘চোর-পুলিশ খেলা’।

প্রভাবশালী সিন্ডিকেটরা এসব চোরাই পণ্য লোড-আনলোডে প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে। এতে বাড়ছে সংঘর্ষের আশঙ্কাও। মূলত এসব পণ্য চুরির সঙ্গে শুধু চোরাকারবারি, জাহাজ মাস্টার, সুপারভাইজার ও লস্কর জড়িত নন, জড়িত ঘাটকুল সংলগ্ন এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারাও। যাদের কোনো দৃশ্যমান ব্যবসা নেই। কিন্তু অল্পদিনেই তারা কোটিপতি। ঘাটে ঘাটে এদের ম্যানেজ করে চলে স্ক্র্যাব ব্যবসা। স্ক্র্যাব ছাড়াও নামানো হয় সয়াবিন, ডিজেল, সার, গম, চিনি, ভুট্টাসহ নানা ভোগ্যপণ্য।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাসোয়ারা দিয়ে প্রকাশ্যে নদীপথে চোরাইপণ্যের এই ব্যবসা করছেন—এমন অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে নৌপুলিশ ও ফাঁড়ির আইসিরা।

এদিকে নৌপুলিশ ও থানা পুলিশের একটি অধিক্ষেত্র রয়েছে। তারা বলছে, সাগরে কিংবা নদীতে চোরাইপণ্য খালাস হলে নৌপুলিশ বা কাস্টমস বিভাগ দেখে থাকে। আর স্থলভাগের ঘটনা বা ঘাটে চোরাই পণ্য উঠলে স্থানীয় থানা পুলিশ দেখে।

কিন্তু নৌপুলিশের পরিপত্রে রয়েছে, নদী, হ্রদ বা নৌপথের সর্বোচ্চ পানি স্তর যে স্থানে ভূমি স্পর্শ করে ওই স্থান হতে ভূ-ভাগের দিকে ৫০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা নৌপুলিশের। অর্থাৎ ঘাটকূলের ৫০ মিটার ভূমি এলাকায়ও নৌপুলিশ অভিযান চালাতে পারবে।

এই বিষয়ে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের কেউ কথা বলতে রাজি না হলেও সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরাম উল্লাহ বলেন, ‘আমদানিকৃত পণ্যের চোরাই বন্ধে কর্ণফুলী নদীতে নৌপুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নৌপুলিশের টহল জোরদার ও অপরাধ বন্ধে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। যখনই কোনো না কোনো খবর পাই, সঙ্গে সঙ্গে স্পটে নৌপুলিশ পাঠানো হয়।’

শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) এসআই মোবারক হোসেন বলেন, ‘নদীতে চোরাইপণ্য ওঠা-নামার ঘটনা ও ঘাটের নানা অপরাধ বন্ধে ছয়টি সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য আবেদন করেছি। শিগগিরই তাতিয়া পুকুরঘাট ও নতুন ব্রিজের নিচে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। যদিও নদীতে চোরাকারবারের ঘটনা ঘটলে সেটা দেখার দায়িত্ব নৌপুলিশের, ফাঁড়ি পুলিশের নয়। তবুও শিকলবাহা পুলিশ সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে সব সময় আইনি ব্যবস্থা নেবে’।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!