চট্টগ্রামে নতুন ধরনে ‘ডেঙ্গু হেপাটাইটিস’, ৫ দিনে জ্বর সারতেই বিপজ্জনক সব লক্ষণ

চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। তবে এবার পাল্টেছে এ রোগের ধরন। জ্বর, গিটে ব্যথা, শরীরের র‍্যাশের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ‘ডেঙ্গু হেপাটাইটিস’। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে চার-পাঁচদিনের মধ্যে জ্বর ভালো হলেও পরে গিয়ে আঘাত করছে লিভারে। এই ধরনকেই ডাক্তাররা ‘ডেঙ্গু হেপাটাইটিস’ বলছেন। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ২৮৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা মৌসুমে সাধারণত এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও এখন শরতেই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

জানা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে পাঁচদিনের মধ্যে জ্বর কমে যায়। কিন্তু এরপর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শুরু হয় অন্যান্য উপসর্গ। তখন রোগীর প্লাটিলেট কমতে শুরু করলে দেখা দেয় রক্তবমি, লিভার ফুলে যাওয়াসহ অন্যান্য উপসর্গ। তাই জ্বর কমে গেলেও নিজেকে সুস্থ ভাবতে নিষেধ করেছেন ডাক্তাররা। সেইসঙ্গে এবারের রোগীর শরীরে ‘ডেঙ্গু হেপাটাইটিস’ পাওয়া যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত চট্টগ্রামে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৮৫ জন। এরমধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৩১ জন ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন ২৫৪ জন। আক্রান্তের তালিকায় শিশুও রয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেলে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল ১৯ জন। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু কর্নার করা হলেও সেখানে সাধারণ রোগীও রাখা হচ্ছে। রোগীদের মশারি না টাঙাতেও দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নাদিমুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর পাঁচদিন পর জ্বর কমে গেলে সেটি পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিপজ্জনক হয়ে ধরা দেয়। তখনই ডেঙ্গু রোগীর খারাপ লক্ষণগুলো দেখা দেয়। তখন রোগীকে অবজারবেশনে রাখতে হবে, মশারি টাঙিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু প্রায় রোগী মশারি টাঙাতে চান না, তাই মশার মাধ্যমে এটি একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।’

চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বহির্বিভাগের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান (আরপি) ডা. সাহেদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রতিদিন বহির্বিভাগে পাঁচ থেকে সাতজন ডেঙ্গু রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। কিন্তু সব রোগীকে ওয়ার্ডে ভর্তি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে এবারের ডেঙ্গু রোগীর শরীরে ডেঙ্গু হেপাটাইটিস দেখা যাচ্ছে। এতে লিভার বেড়ে যায় বা ফুলে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণ জ্বরের সঙ্গে মিলে যায়। জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, গিটে ব্যথা, চোখের পেছনের অংশে ব্যথা, শরীরে র‍্যাশ ওঠা—এগুলো ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ। তাই ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলেও রোগীরা ভাইরাল জ্বর মনে করেন। জ্বর পাঁচদিন পর কমে গিয়ে ডেঙ্গুর গুরুতর লক্ষণ—পেট ব্যথা, বমি হওয়া, নাক-দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ, বমি ও পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ দেখা দেয়।’

ডা. সাহেদ বলেন, ‘জ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ থাকলে টেস্ট করতে হবে। কিছু না হলে অন্তত কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) টেস্ট করতে হবে। এতে শরীরে ডেঙ্গুর উপস্থিতি বোঝা যায়। ডেঙ্গু হলে রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা, শ্বেতকণিকা কমে যায়। হেমাটোক্রিট বেড়ে যায়। জ্বরের প্রথম কয়েকদিনের মধ্যে সিবিসি এবং এনএসওয়ান এন্টিজেন ( NS1 AG) পরীক্ষা করলে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। আবার জ্বরের চার-পাঁচদিন পরও ডেঙ্গু এন্টিবডি টেস্ট করে রোগ শনাক্ত সম্ভব। ডেঙ্গু ধরা পড়লে রোগীকে মশারির মধ্যে রাখতে হবে।’

ডা. সাহেদ আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু টেস্ট না করা পর্যন্ত জ্বরের রোগীকে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খেতে হবে। ডেঙ্গু পজিটিভ হলে চিকিৎসা শুরু হবে। রোগীকে অবশ্যই হসপিটালাইজড অথবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাতে হবে। তবে এ রোগে ওষুধের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম নিতে হবে। আর প্রচুর পরিমাণে পানি, ফলের রস, স্যুপ, ডাবের পানি, স্যালাইন পান করতে হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!